Ajker Patrika

ফরিদপুরে অন্তর হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরে অন্তর হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

৬ বছর পর ফরিদপুরে আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর মাতুব্বর (১৪) হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন। একই সঙ্গে প্রত্যককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। এ সময় মামলার ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।’ 

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন–চরমানিকদি গ্রামের মাহাবুব আলম, পিপরুল গ্রামের কামাল মাতুব্বর ও বিলনালিয়া গ্রামের খোকন মাতুব্বর। আদালত তাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩০২ / ০৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। 

অপরদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন–মানিকদি গ্রামের দুই সহোদর আশরাফ শেখ ও আজিজুল শেখ এবং বিলনালিয়া গ্রামের সুজন মাতুব্বর। এদের মধ্যে আজিজুল শেখ পলাতক রয়েছেন। আদালত তাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ জুন তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় অন্তর। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরদিন নগরকান্দা থানায় একটি জিডি করেন তার মা জান্নাতি বেগম। ওই দিন রাতে অন্তরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে একটি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি অন্তরের ব্যবহৃত নম্বর থেকে তার মাকে জানান এবং পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। 

পরে ১৪ জুন অন্তরের মোবাইল নম্বর থেকে কল করে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ভাঙ্গার একটি প্রাইমারি স্কুলের ঠিকানায় যেতে বলে। কিছুক্ষণ পর তাদের ভাঙ্গার বদলে তালমা জাইল্যা ব্রিজের কাছে এবং তারপর কোনাগাঁও চকের একটি শ্যালো মেশিন ঘরের মধ্যে টাকা রেখে আসতে বলে। 

তাদের কথা অনুযায়ী, নগরকান্দা থানা-পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মুক্তিপণের এক লাখ ৪০ হাজার টাকা সেখানে রেখে আসা হয়। চক্রটি টাকা নেওয়ার সময় পুলিশ দূর থেকে দেখেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জান্নাতি বেগম সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে, মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পরও অন্তরকে মুক্তি দেয়নি চক্রটি। 

এরপর ১৫ জুন নগরকান্দা থানায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২৪ জুন ওই মামলার আসামি মাহাবুব আলম ও তার ভাই জুবায়ের আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে নিখোঁজের ১৯ দিন পর মাটির নিচে পুতে রাখা অন্তরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

ওই বছরের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার এসআই নিখিল চন্দ্র অধিকারী ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় গ্রেপ্তার অপর আসামি জুবায়েরকে দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলার ছয়জন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন আদালত। 

রায়ে নিহত অন্তরের মা জান্নাতি বেগম সন্তোষ প্রকাশ করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক দিন পর রায় হয়েছে, এ রায়ে আমি খুশি। আমি দ্রুত এই রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যেন আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়।’ 

মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় ও বিমল তুলশিয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুবককে আটক করা নিয়ে বিজিবি ও এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি দাবি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত