Ajker Patrika

ভাতের খোঁজে থাকা আলমগীরের চাকরির খবরে শান্তির ঘুম হয় বাবার

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা ও আকতার হোসেন বকুল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) 
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ৩৬
ভাতের খোঁজে থাকা আলমগীরের চাকরির খবরে শান্তির ঘুম হয় বাবার

‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’—লেখা সংবলিত পোস্টার লাগানো আলমগীর কবিরের চাকরি হয়েছে দেশের রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’-তে। ছেলের চাকরি পাওয়ার খবর শুনে স্বস্তি মিলেছে বাবা কফিল উদ্দীনের। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘রাতে এখন শান্তির ঘুম হয়।’ 

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মো. আলমগীর কবির। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। আলমগীর কবির জানিয়েছেন, ‘স্বপ্ন’–তে তাঁকে ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

আলমগীরের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বরাইল গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে গ্রামের লোকজন এসে ভিড় করছে। কিসের চাকরি, কোথায়, কবে থেকে শুরু এসব শুনতেই বাড়িতে আসছে গ্রামের মানুষ। গল্প করছে কবিরের বাবা-মার সঙ্গে। 

আলমগীর কবিরের বাবা বলেন, ‘প্রতিদিনই মানুষ আমার বাড়িতে আসছে। ছেলের চাকরির বিষয়ে জানতেই তাঁরা আসে। আলমগীর চাকরি পাওয়ায় গ্রামের মানুষও অনেক খুশি।’ 

কফিল উদ্দিন জানান, তাঁর ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে মারা গেছে। এক ছেলে প্রতিবন্ধী এবং এক মেয়ে বিধবা হয়ে তাদের সঙ্গেই থাকেন। তাঁর চার বিঘা ফসলি জমি ছিল, যার তিন বিঘা মেয়েদের বিয়ে ও ছেলের পড়ালেখা করাতে বিক্রি করে দিয়েছেন। ছেলে পড়ালেখা শেষ করেও চাকরি পাচ্ছিল না। সবকিছু নিয়েই তিনি ঝামেলায় পড়ে যান। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এলাকায় আলমগীর কবিরের সুনাম রয়েছে। তাকে সবাই ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের বলেই জানে। প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমসহ অনেকে বলেন, ‘ছেলেটি খুব ভালো ও শান্ত প্রকৃতির। শুধু দুই ঈদে বাড়ি আসত। যে দুই-তিন দিন থাকত, ঘরেই থাকত। বাইরে আড্ডা দিত না।’ 

শুধু প্রতিবেশী নয়, এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও আলমগীরের চাকরি পাওয়ার খবরে খুশি। সংরক্ষিত আসনের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শিল্পী নাহার বলেন, ‘তাদের পরিবারের খুব অভাব। অনেক কষ্টে তারা জীবন যাপন করে। ছেলেটার চাকরি হওয়ার খবরে আমি অনেক খুশি হয়েছি।’ 

আলমগীর কবিরের বাবা আজকের পত্রিকাকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলে বেতনের টাকা আমাদের দিক বা না দিক, কোনো সমস্যা নেই। আমার ছেলেটা সুখে থাক, এটাই আমাদের আনন্দ।’ 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলমগীর কবিরকে নিয়ে নানা নেতিবাচক খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম তাঁর পোস্টার লাগানোকে ‘কুকীর্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাঁর এমন পোস্টার লাগানোর পেছনে ‘খারাপ উদ্দেশ্য আছে’—এমন কথা অনেকেই বলেছেন। আলমগীর কবির ভণ্ডামি করছেন কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। 

আলমগীর কবিরের ছোট্ট মাটির বাড়িতে তাঁর বাবা-মা

তবে সরেজমিনে আলমগীরের এলাকায় গিয়ে এমন কিছুর প্রমাণ মেলেনি। তাঁর পরিবার যে অতিদরিদ্র, সেটি অন্তত স্পষ্ট। আলমগীর কবিরের পুরো সংসার চলে তাঁর বিধবা বোনের দরজির কাজ থেকে পাওয়া টাকায়। গ্রামের মানুষের কাপড় সেলাই করে যে টাকা তিনি পান, তা দিয়ে সংসার চলে। সেই সঙ্গে ভাইকেও যৎসামান্য কিছু অর্থ বোন পাঠাতেন বলে জানা গেছে। 

আলমগীরের কোনো অপকর্মের তথ্য পায়নি বগুড়া জেলা পুলিশ ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা-পুলিশ। পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আলমগীর কবিরের খবর ভাইরাল হওয়ার পর থানা-পুলিশ তাঁর বিষয়ে খোঁজ নেয়। তাতে দেখা যায়, আসলে তারা অনেক গরিব।’ 

ওসি জানান, পুলিশ তাঁর বাবা-মা এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁর সম্পর্কে বিস্তর তথ্য নেওয়া হয়। সবার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারটি সত্যিই অভাবী। 

এসব বিষয় নিয়ে আলমগীর কবির বলেন, ‘আমাকে নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে—আমি অপকর্ম করেছি, খারাপ কাজ করেছি। খাবারের সন্ধান করা কি অপকর্ম? আমার কষ্ট তো আর মানুষ বুঝবে না। যার যার কষ্ট সে–ই বোঝে।’ 

কবির বলেন, ‘আমি যদি অপকর্ম করতাম তাহলে নিজে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতাম না। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ পুলিশ সুপার মহোদয় কথা বলেছেন। আমার সবকিছু শুনেছেন। আমি যদি অন্যায় করতাম তাহলে তাঁরা তো সেটা পেত। আমি সেদিন অনেকগুলো মিডিয়ার সামনাসামনি হয়েছি। তাদের কাছেও আমি প্রমাণ দিয়েছি।’ 

চাকরির বিষয়ে আলমগীর বলেন, ‘আমি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ স্বপ্নের কাছে। তারা আমাকে একটা চাকরি দিয়েছেন।’ 

এখন কেমন আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, ‘আগের মতোই। চাকরিতে যুক্ত হওয়ার পর ইনশা আল্লাহ ভালো কিছু হবে। আমার পরিবারের জন্য কিছু করতে চাই।’ 

চাকরি পাওয়ার পর বাবা-মার সঙ্গে দেখা হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, ‘ফোনে কথা হয়েছে। বাবাকে বলেছি যেদিন বেতন পাব, তার পর দিন ছুটি নিয়ে বাড়ি আসব। বাবাও বলেছেন আগে চাকরিতে জয়েন করতে।’ 

এদিকে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চাকরি পেলেও আলমগীর তাতে যোগ দেবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। এ বিষয়ে আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার তো দরকার ভালোভাবে বেঁচে থাকার। আমার একটি চাকরি হয়েছে, আমি কেন জয়েন করব না? আগামীকাল সোমবার আমি জয়েন করব। রোববার (আজ) আমি ঢাকায় যাব।’ 

গত ২৫ জানুয়ারি ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’—এমন লেখা সংবলিত একটি পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সেটা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে। পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে চাকরি হয় আলমগীরের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আদালতের বিচারকাজে বাধা দেওয়ায় আইনজীবীর দণ্ড, ক্ষমা চেয়ে পার

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত