Ajker Patrika

জয়দেবপুরে ২৪ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি রেলের উদ্ধারকাজ, ট্রেন চলছে এক লাইনে

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১৪: ৫৭
জয়দেবপুরে ২৪ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি রেলের উদ্ধারকাজ, ট্রেন চলছে এক লাইনে

গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর রেল জংশনের আউটার সিগন্যালে যাত্রীবাহী ট্রেন ও তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি উদ্ধারকাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্ধারকাজ শেষ হতে আজ শনিবার সারা দিন লেগে যেতে পারে। এদিকে, একই লাইনে দুই দিকে ট্রেন চলাচলে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। 

রেল বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা-জয়দেবপুর অংশে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের মধ্যে ডাউনলাইনে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তেলবাহী ট্রেন ঢাকা থেকে রংপুরের দিকে যাচ্ছিল। একই সময়ে আপলাইনে জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকাগামী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন যাত্রা করে। কমিউটার ট্রেনটি আউটার সিগন্যালে আপলাইন ছেড়ে ডাউনলাইনে ঢুকে পড়ে। ট্রেনটির অর্ধেক অংশ আপলাইনে প্রবেশ করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা রংপুরগামী তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় বিকট শব্দে আশপাশের মাটি কেঁপে ওঠে। এতে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনসহ চারটি এবং তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। কিন্তু টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি যাত্রীবিহীনভাবে ঢাকায় ফিরছিল, এ কারণে কোনো যাত্রী হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় দুটি ট্রেনের লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হন। 

আহতরা হলেন লোকোমাস্টার শরীফ মাহমুদ (৩৮), লোকোমাস্টার হাবিবুর রহমান (৫৮) ও সহকারী লোকোমাস্টার সবুজ হাসান (৪৬)। তাঁদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। পরে আখাউড়া থেকে একটি ক্রেনও উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। তারা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলো রেখে ভালো বগিগুলো পেছনের দিকে টেনে জয়দেবপুর রেল জংশনের এক নম্বর প্ল্যাটফরমে রাখে। সংঘর্ষের পর এই পথে প্রায় দুই ঘণ্টা রেলযোগাযোগ বন্ধ থাকার পর বেলা ১টার দিকে ট্রেনযোগাযোগ শুরু হয়। 

অন্যদিকে, ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসন একটি এবং রেল বিভাগ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভুল সংকেতের কারণে দুটি ট্রেন এক লাইনে চলে আসে বলে প্রাথমিক ধারণা থেকে রেলওয়ের তিন কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হলেন জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের ঘুমটিঘরের মাস্টার মো. হাসেম, পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান। 

শনিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো ঘটনাস্থলে দুটি ট্রেনের ইঞ্জিন মুখোমুখি সংঘর্ষের অবস্থায়ই রয়েছে। ইতিমধ্যে তেলবাহী ট্রেনের একটি বগি ছাড়া অন্য বগিগুলো উদ্ধারকারী ট্রেনের সাহায্যে পেছনের দিকে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম রেল স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট বগিটিও টেনে ধীরাশ্রমে নিয়ে রাখা হবে। টাঙ্গাইল কম্পিউটার ট্রেনের তিনটি বগি মারাত্মক রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি বগি একটির ভেতরে অপরটি ঢুকে গিয়েছিল। এ বগিগুলো রেললাইন থেকে সরিয়ে পাশের নিচু ভূমিতে রেখে দেওয়া হয়েছে। 

উদ্ধারকাজে অংশ নিতে ক্রেনম্যান আবুল হোসেন বলেন, ক্রেন দিয়ে লাইনচ্যুত হওয়া বগিগুলো লাইনের ওপর তোলা হয়। পরে যেগুলো সচল করা সম্ভব ছিল, সেগুলো টেনে বগিগুলো জয়দেবপুর রেলস্টেশনে এবং তেলের কনটেইনারবাহী বগিগুলো ধীরাশ্রম রেল স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে। উদ্ধারকাজ শেষে ক্রেনটি আখাউড়া ফিরে যাবে। আর তেলের বগিগুলো ধীরাশ্রম রেল স্টেশনে রাখার পর দুর্ঘটনাকবলিত দুটি ট্রেনের ইঞ্জিন একসঙ্গে টেনে ঢাকার কমলাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে সেখান থেকে এগুলো চট্টগ্রাম ওয়ার্কশপে পাঠানো হবে। 

আবুল হোসেন আরও বলেন, এসব কাজ শেষ করতে আজকে সারা দিন লেগে যাবে। কাজ শেষ করে লাইন ক্লিয়ার করার পর ঢাকা-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের বন্ধ থাকা লাইনে রেল চলাচল শুরু হবে। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী জানান, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি বেলা ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে আউটার সিগন্যালে পৌঁছানোর পর লাইন ক্রসিং করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। 

হানিফ আলী আরও জানান, দুর্ঘটনার পর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। উদ্ধার শেষে প্রায় দুই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, ভুল সিগন্যালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি খালি অবস্থায় ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে তেলবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল রংপুরে। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনটি তেলবাহী ট্রেনের লাইনে ঢুকে পড়লে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

আবুল ফাতেহ মো. সফিকুল আরও বলেন, দুর্ঘটনায় কারও কোনো গাফিলতি বা অবহেলা ছিল কি না, তা জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কমিটিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, রেলওয়ের পক্ষ থেকেও দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে সিওপিএস মো. শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আঞ্চলিক কমিটি করা হয়েছে। আর রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন) সৌমিক শাওন কবিরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের পর দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে। 

এক লাইনেই চলছে ট্রেনএদিকে, গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর থেকে ঢাকা-জয়দেবপুর ডাবল রেললাইনের একটিতে ট্রেন চলাচল করলেও অপরটি এখনো বন্ধ রয়েছে। একারণে এ পথে চলাচলকারী কলকাতাগামী মৈত্রীসহ ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গ চলাচলকারী সকল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। 

সরেজমিনে জয়দেবপুর রেল জংশনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলার শত শত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষা করছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। তারা নির্ধারিত সময়ে ট্রেন স্টেশনে না আসায় অপেক্ষা করছেন। 

স্টেশনে স্বজনদের নিয়ে সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষা করছেন আলাউদ্দিন। তিনি রাজশাহী যাবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় তার ট্রেন স্টেশনে আসেনি। 

একই অবস্থা জামালপুরগামী তিস্তা ট্রেনের যাত্রী আশরাফুলের। তিনিও গ্রামের বাড়ী জামালপুর যাওয়ার জন্য স্টেশনে অপেক্ষায় বসে আছেন। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় জয়পুর জংশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল দশটায় ট্রেন স্টেশনে পৌঁছেনি। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. হানিফ মিয়া জানান, দূর্ঘটনার দুই ঘণ্টা পর এক লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। একটি লাইন বন্ধ থাকায় রেশনিং পদ্ধতিতে ট্রেন চালানো হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ধীরাশ্রম স্টেশন এবং জয়দেবপুর জংশনে ট্রেন অপেক্ষায় রেখে একটি একটি করে ট্রেন দুই দিকে চলতে দেওয়া হচ্ছে, এতে করে কোনো ট্রেনেরই শিডিউল ঠিক থাকছে না। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের সিগন্যাল ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকেই ট্রেন চলাচলে এবনরমাল টাইমিংয়ে পাস করছেন তারা। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন থেকে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহগামী বলাকা এবং ঢাকাগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস ছেড়ে চলে গেছে। একই লাইনে দুই দিকে ট্রেন চলাচলে সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত