Ajker Patrika

নিঃস্বার্থ গোরখোদক মনু মিয়া হাসপাতালে, বাহক ঘোড়াটিকে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ২২: ৪৩
মনু মিয়া ও তাঁর ঘোড়া। ছবি: সংগৃহীত
মনু মিয়া ও তাঁর ঘোড়া। ছবি: সংগৃহীত

মনু মিয়া ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’। মনের গহিনে পরম দরদ আর অপার ভালোবাসা দিয়ে তিনি সাজান মুসলিম সম্প্রদায়ের শেষ ঠিকানা—কবর। কারও মৃত্যুসংবাদ কানে আসামাত্রই খুন্তি, কোদাল, ছুরি, করাত, দা, ছেনাসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে যান কবরস্থানে। মানুষের অন্তিমযাত্রায় একান্ত সহযাত্রীর মতো বাড়িয়ে দেন আন্তরিকতার দুহাত। এভাবেই কবর খননের কাজ করে তিনি পার করে দিয়েছেন তাঁর ৬৭ বছরের জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯টি বছর। কোনো ধরনের পারিশ্রমিক বা বকশিশ না নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন করেছেন বলে তাঁর দাবি।

নিঃস্বার্থ সেবাপরায়ণতার এক অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠা মনু মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানিজমি বিক্রি করে তিনি কিনেছিলেন একটি ঘোড়া। সেই ঘোড়ার পিঠে তুলে নিতেন যাবতীয় হাতিয়ার। ঘোড়ায় চড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে সাজিয়ে দিতেন মানুষের শেষ ঠিকানা।

ঘোড়াটিই যেন বয়সের বাধা অতিক্রম করে তাঁকে সচল রেখেছিল। জীবনভর এ কাজ করতে গিয়ে নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখা হয়নি। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা জটিল রোগ। অসুস্থ হয়ে সম্প্রতি তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। গত ১৪ মে তাঁকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে একপ্রকার মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা চলছে নিঃসন্তান মানুষটির। স্ত্রী রহিমা বেগম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা স্বামীর পাশে রয়েছেন ছায়ার মতো।

এমন সংকটকালে বর্বরতার শিকার হয়েছে তার প্রিয় ঘোড়াটি। বাড়িতে মনু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী অনুপস্থিত থাকায় ঘোড়াটি হয়ে পড়ে অভিভাবকশূন্য। তিন দিন ধরে ঘোড়াটিকে কেউ দেখেননি। শুক্রবার (১৬ মে) সকালে পাশের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রাম থেকে আসে দুঃসংবাদ—সেখানকার একটি মাদ্রাসার পাশের জমির পানিতে ঘোড়াটির লাশ পড়ে আছে।

খবর পেয়ে আলগাপাড়া গ্রামের তিন তরুণ ছুটে যান সেখানে। গিয়ে দেখেন, মনু মিয়ার প্রিয় ঘোড়াটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিথর হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালের বিছানায় থাকা মনু মিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা ভেবে স্বজনেরা তাঁর কাছে ঘোড়াটির নির্মম মৃত্যুর খবর গোপন রেখেছেন। যদি তিনি বেঁচেও ফেরেন, আর ফিরে পাবেন না প্রিয় সঙ্গীটিকে।

ঘোড়াটিকে শনাক্ত করতে যাওয়া তিন তরুণের একজন এস. এম. রিজন জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, ওই এলাকার শাওন নামের এক যুবকের একটি ঘোড়া রয়েছে। অভিযোগ করা হয়, মনু মিয়ার ঘোড়াটি নাকি শাওনের ঘোড়াটিকে আঘাত করে। সেই ‘অপরাধে’ তারা মনু মিয়ার ঘোড়াটির বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। স্থানীয়দের মতে, শাওনের বাবার নাম আজমান এবং চাচার নাম হাসান মাস্টার।

মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, ‘উনার অবস্থা ভালো না। একমাত্র আল্লাহ পাকের রহমতেই উনি সুস্থ হতে পারেন। উনি জীবনে কারও কোনো ক্ষতি করেননি। এত দিন জানতাম, উনাকে মানুষ ভালোবাসে। উনার এমন অবস্থায় কেমন করে উনার প্রিয় ঘোড়াটিকে মানুষ মেরে ফেলতে পারল! এই খবরটা উনাকে দিলে উনি কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবেন না।’

পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার বলেন, “মিঠামইন থানার ওসিকে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত