Ajker Patrika

ভেঙে যাচ্ছে স্মৃতির সিঁড়ি

ফজলুল কবির, ঢাকা
ভেঙে যাচ্ছে স্মৃতির সিঁড়ি

‘গণগ্রন্থাগার চত্বর যেমন/ হাঁটতে নিলেই বকুল পিষে যায় পায়ের তলায়/ এ এক নৃশংস পদচারণ।’ আসলেই কি তাই? পায়ের দিকে একবার তাকাই। তার তলাটি তো দেখা যায় না। তবে চারদিকে ছড়ানো আহত ও শুষ্ক বকুল ফুল বলে দিচ্ছে নিজের পায়ের তলায়ও এমন আহতের দল পড়ে আছে। তলানিতে বলে কেউ ভ্রুক্ষেপ করছে না; আক্ষেপ তো দূরের কথা। তলায় বা প্রান্তে থাকার নিয়তিই এমন। যাক, সে অন্য কথা। বকুলের সঙ্গে হয়ে যাওয়া এই নিত্যকার নৃশংসতা নিয়ে মনকে আর বাড়তে দেওয়া যায় না। কারণ, চোখের সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নৃশংসতা, তার সমস্তটা নিয়ে। না, আক্ষরিক অর্থে নয়। তবে গণগ্রন্থাগারের ভেঙে পড়া দেখে এই একটি শব্দই ঘুরেফিরে মাথায় আসছে বারবার।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর ও চারুকলা অনুষদকে দুই বাহুতে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গণগ্রন্থাগারের বর্তমান কাঠামো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গণগ্রন্থাগারটির পোশাকি নাম সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার। কিন্তু সবার কাছে পাবলিক লাইব্রেরি নামেই পরিচিত। কতটা পরিচিত? ব্যক্তিগত খাতা খুললে তার তল পাওয়া কঠিন।

তার আগে বলে নিই, পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে এই স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পাঠকদের জন্য আপাতত ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে হবে বহুতল ভবন। বিপুল ব্যয়ে সে ভবন নির্মাণ করা হবে, যা শেষ হবে ২০২৪ সালে। পাঠকক্ষগুলোর সংখ্যা ও পরিসরে বড় হবে। ডিজিটাইজেশনের গতি বাড়বে। প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে আলাদা ব্যবস্থা হবে। গবেষকদের পাঠ উপকরণ ও গবেষণার দিকে আলাদা মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। বই, পত্রিকা, সাময়িকী, ডিজিটাল আর্কাইভ ইত্যাদির সংখ্যা বাড়বে। সেবার পরিসর বৃদ্ধির এই প্রতিটি বিষয়ই আনন্দের। কিন্তু কোথায় যেন ব্যথা বাজে। শঙ্কা জাগে, যে সুপ্রশস্ত পরিসর দিয়ে এই গণগ্রন্থাগার মানুষের কাছে সহজ প্রাঙ্গণের পরিচয় নিয়ে হাজির হয়েছিল, তা কি আর আগের মতো থাকবে?

মূল ভবনের দোতলার অনেকটা অংশ এরই মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। কত না স্মৃতিগদ্য আছে এই স্থাপনা নিয়ে। কত শতজনের কথায়, ছোট ছোট উক্তিতে, বাক্যে এর কথা উঠে এসেছে। এমন স্মৃতি জন্ম দেওয়া, আশ্রয় দেওয়া প্রাঙ্গণ ঢাকায় খুব কম। এর নকশাটাই মানুষকে আপন করে নেয় বলা যায়। আচ্ছা কে এর স্থপতি? খুঁজতে গিয়েই মাথা ঘুরে গেল। কোথাও নেই সে নাম। পুরোনো গণগ্রন্থাগার, অর্থাৎ বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি নন্দিত স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নকশায় করা। কিন্তু যে ভবনে পরে স্থানান্তর করা হলো, তার স্থপতি কে? কোথাও নেই। সরকারি ওয়েবসাইটগুলো খুঁজে হয়রান হতে হলো। নেই অন্য কোনো ওয়েবসাইটেও। অনেক খুঁটিনাটি তথ্য সেগুলোতে থাকলেও এই জরুরি তথ্যটি নেই। মনটা দমে গেল। এত স্মৃতির রঙিন সিঁড়িগুলো তবে কে বানালেন!

এই গণগ্রন্থাগারের সিঁড়ি তো বিখ্যাত হয়ে আছে নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক বা সাপ্তাহিক নাটকের কল্যাণে। এর সিঁড়িতে বসে তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত, জাহিদ হাসান, শমী কায়সারেরা কত যে প্রেম করেছেন! গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে বই সরাতে গিয়ে কত নায়ক-নায়িকার চার চোখের মিলন হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। নব্বইয়ের দশকের বিটিভি নাটকে থানা বলতে যেমন শুধু রমনা থানা ছিল, ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নায়ক-নায়িকার আউটডোর (সে সময়ের নাটকে আউটডোর বিষয়টা বেশ কম ছিল) প্রথম সাক্ষাৎ বলতে যে গুটি কয়েক স্থান ছিল, তার অন্যতম এই জাতীয় গণগ্রন্থাগার।

বাস্তবেও কি তা-ই নয়? এর সেই আইকনিক সিঁড়ি কত শত স্মৃতির আকর! কত তরুণ-তরুণী যে এই সিঁড়িতে বসেই প্রণয়কাল কাটিয়ে দিল, কতজন সদ্য পাওয়া কষ্ট ভুলতে এই সিঁড়িতে চুপ হয়ে বসে থাকল, কতজন কিছুই নয়, শুধু সময় কাটাতে সিঁড়িটুকু আঁকড়ে বসে থাকল! মোবাইল ফোন, বিশেষত স্মার্টফোন আসার আগে এই সিঁড়িতে বসে নানা বয়সী মানুষকে বই পড়তে দেখা যেত। বিকেলের দিকে এই সিঁড়ি ঘিরেই জমত আড্ডা। কবি, শিল্পী থেকে শুরু করে ভবঘুরে আড্ডার উন্মুক্ত স্থান ছিল এটি। তবে হুজ্জতও ছিল; নিরাপত্তাকর্মী বা পাঠাগার তত্ত্বাবধায়কেরা মাঝেমধ্যেই এসে আড্ডা দিতে নিষেধ করতেন। তখন কিছুক্ষণের বিরতি। তারপর আবার হয়তো নতুন কোনো আড্ডাবাজ দলবল নিয়ে বসে যেত।

শওকত ওসমান মিলনায়তনের দিকে ভাঙার কাজ চলছে জোরেশোরে। সিঁড়িতে না টিকলেও ক্ষতি নেই তেমন। বকুলঝরা পথ দিয়ে সোজা চলে গেলেই হলো। একেবারে মাথায় ক্যানটিন, যার বাইরে বসবার জায়গা আছে। সেই ক্যানটিনের স্বভাবও প্রায় গণগ্রন্থাগারের মতোই। এর বাইরে বা ভেতরে বসে দীর্ঘ আড্ডায় সাধারণত কোনো বাধা আসত না। শেষ দিকে এর কিছুটা ব্যত্যয় দেখা দিয়েছিল। বাণিজ্যিক দুনিয়ায় পুঁজির চাপে এর অন্যথাও তো হওয়ার কথা নয়। বরং এত দীর্ঘ সময় যে এটি এমনভাবে উদার থাকল, তাই-বা কম কী।

এই ক্যানটিন থেকে বাম দিকে শওকত ওসমান মিলনায়তনের মধ্যকার সবুজ প্রাঙ্গণটি অন্যরকম এক ভালো লাগা তৈরি করে। কত দীর্ঘ দুপুর ও বিকেল যে এখানে কেটেছে! বিকেল থেকেই শুরু হতো মিলনায়তন ঘিরে নানা তৎপরতা। হয়তো কোনো গানের অনুষ্ঠান আছে, অথবা আছে কোনো নাটকের শো, কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য বা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। আলোচনা সভাও হতো নিয়মিত। বিকেল থেকেই গমগম করত গোটা প্রাঙ্গণ।

শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষের পদচারণে মুখর ছিল যে প্রাঙ্গণ, তা এখন ভাঙা ইট-পাথর ও ধুলার রাজত্ব। এখনো মুখর সেই প্রাঙ্গণ, তবে তা হাতুড়ির শব্দে। প্রায় প্রতিদিনই বাইরে থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞের শব্দ কানে আসে। ধুলার অত্যাচারে শ্বাস জানান দেয় কিছু একটা ভেঙে পড়ছে। সেদিন ভেতরে ঢুকে পুরো বিষয়টা দেখার ইচ্ছা হলো। দেখা গেল শওকত ওসমান মিলনায়তনের এক পাশ ভেঙে ফেলা হয়েছে এরই মধ্যে। জমে থাকা বর্জ্য সরাতে কাজ করা হচ্ছে। ক্যানটিন ও মিলনায়তনের মাঝখানের প্রাঙ্গণটায়, যেখানে আগে বিশেষত তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল, সেখানে দেখা গেল এক তরুণী বসে আছেন পা দুলিয়ে। বিষণ্ন তাঁর চোখ। নিজের ভেতরে চলতে থাকা নানা ভাবনার ছাপ যেন তাঁর চোখেও দেখা গেল। তাঁর পায়ের তলায়ও যেন বকুল পিষে গেছে অজ্ঞাতে; তাই কী মন খারাপ?

শিশু-কিশোর পাঠকক্ষটির কোনো চিহ্ন এখন আর নেই। ফিরে এসে আবার সেই সিঁড়ির সামনে দাাঁড়নো গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা শুধু। গোটা কয় ছবি তোলা হলো। মনের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে উঠল। বামে তাকাতেই দেখা গেল স্মৃতিময় শিশু-কিশোর পাঠকক্ষটি ভেঙে ফেলা হয়েছে, যেখানে কেটেছে শৈশব-কৈশোরের আশ্চর্য সুন্দর কিছু সময়। স্কুল পালিয়ে কত কী করে মানুষ! আমারা দুই-তিনজন ছিলাম, যাঁরা পালিয়ে আসতাম এই পাঠাগারে। পাশের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চারুকলায় যাওয়া শুরুও সে সময়েই। কিংবা চলে যেতাম বাংলাবাজার, নীলক্ষেত, পল্টন, গুলিস্তানের বইয়ের দোকানগুলোয়। বইয়ের পোকা ছিল মাথায়। সিনেমা দেখা বা রমনা উদ্যানে ঘুরে বেড়ানো—সে-ও ছিল।

সে যাক। সিঁড়িটি বাদ রেখে মূল ভবনের পেছনের দিকটা ভাঙা হচ্ছে। যাঁরা ভাঙছেন, তাঁদেরও কি মন টানছে না তবে? তাঁদেরও কি কিছু জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে? নাকি এ নিছক কল্পনা?

ছবি তুলতে দেখে আশপাশে ভাঙার কাজে মত্ত পরিশ্রান্ত শ্রমিকেরা আমাকে দেখার ছলেই একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন দেখা গেল। এগিয়ে যেতেই হেসে তাকালেন বয়স্ক একজন। নাম আলতাফ হোসেন। জানালেন, বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন। জানতে চাইলাম, কত দিন লাগবে ভাঙতে? হাসলেন। বললেন, ‘তা এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়া যাইব।’ মন কেমন করল! কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলতাফ হোসেন বললেন, ‘সিঁড়িটা সুন্দর।’ হয়তো আমাকে দূর থেকে সিঁড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখেই এমনটা বললেন, হয়তো না। দেখা গেল, পরিশ্রান্ত শ্রমিকদের বেশ কয়েকজন ততক্ষণে সেই সিঁড়িতে গিয়ে বসেছেন। লাল-সাদা সেই আইকনিক সিঁড়ি; ভেঙে যাওয়ার আগেও যে পরিশ্রান্ত ক্লান্ত মানুষদের আশ্রয় দিতে ভুলছে না।

কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গেলাম। কে জানে, এটাই হয়তো শেষবারের মতো এই সিঁড়ি ভাঙা। মাথার ভেতরে তখন সঞ্জীব চৌধুরী গাইছেন—‘তুমি সিঁড়ি ভাঙো/ কত সিঁড়ি ভাঙো/ ভেঙে ফেলেছ কি স্বপ্নের সিঁড়ি?’ সঞ্জীব সম্পূর্ণ অন্য ভাবনা থেকে গেয়েছেন হয়তো, কিন্তু কেমন মিলে গেল। এ সিঁড়ি তো স্বপ্নেরও। যেকোনো গ্রন্থাগারের সিঁড়িই তা-ই। সে হিসেবে বেশ খাপ খেয়ে যায় সঞ্জীবের গানটি। এ সিঁড়ি আক্ষরিক অর্থেই ভাঙা হবে। এই তো আর কয়েকটি দিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো শান্তিরক্ষী শান্তকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

সুদান থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে যখন কথা বলতেন, তখন অনাগত সন্তান নিয়ে কত শত স্বপ্ন বুনতেন শান্তিরক্ষী শান্ত মণ্ডল। সন্তান যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পায়, সে জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার আশা তাঁর আর পূরণ হলো না। সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাঁকে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের একজন কুড়িগ্রামের শান্ত মণ্ডল (২৬)। তাঁর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তাঁর বাবা সাবেক সেনাসদস্য (মৃত) নূর ইসলাম মণ্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নিহত শান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর মা সাহেরা বেগম শোকে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছেন। বড় ভাই সোহাগ মণ্ডলের চোখ কান্নায় লাল হয়ে আছে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।

সোহাগ মণ্ডল বলেন, শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। সোহাগ মণ্ডল আরও বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার বাবার বাড়িতে আছে। সেও খবর পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় শান্ত ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, ওদের ক্যাম্পে হামলা হয়েছে। হামলায় শান্ত মারা গেছে। হামলার সময় সে অস্ত্র পরিষ্কার করতে ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমরা এখন তার লাশের অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে কবর দিতে চাই।’

পরিবার থেকে জানানো হয়, স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো শান্তর। গতকাল শান্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শোকে বিহ্বল হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় এখন তিনি নেই।

শান্তর বাল্যবন্ধু সুমন বলেন, ‘শান্তর মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নামের মতোই সে শান্ত ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ বা কটু কথা বলেনি। এমন বন্ধুর মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে আইনজীবী ছাড়া প্রবেশ সীমিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট—উভয় বিভাগের এজলাস কক্ষে আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থী বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। আজ রোববার প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। প্রধান বিচারপতি ও উভয় বিভাগের বিচারপতিরা এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করেন, তাই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আদালতে আগত কিছু বিচারপ্রার্থী, মামলাসংশ্লিষ্ট ও অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি এজলাসে প্রবেশ করছেন, যা আদালতের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও বিচারকার্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের আইনজীবী বাদে বিচারপ্রার্থী কিংবা অপ্রত্যাশিত যেকোনো ব্যক্তির এজলাস কক্ষে প্রবেশাধিকার সীমিত অথবা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যেকোনো সমাবেশ ও মিছিল, বৈধ ও অবৈধ যেকোনো প্রকার অস্ত্র, মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। এই আদেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয় অথচ নিষ্পাপ শিশু হত্যার বিচার নেই’

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয়, অথচ ফুলের মতো এতগুলো নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু এত দিনেও বিচার পায় না। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির প্রায় পাঁচ মাস পর নিহত ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারগুলো এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণও প্রত্যাখ্যান করেছে।

আজ রোববার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গোলচত্বরে ‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা এই ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকেরা বলেন, তাঁদের বাচ্চার জীবনের মূল্য কি ২০ লাখ টাকা? আহতদের ভবিষ্যতের মূল্য কি পাঁচ লাখ টাকা? এ দেশে একটি কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয়, অথচ ফুলের মতো বাচ্চাদের জীবনের মূল্য নেই। তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।

১২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ এবং আহতদের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেন। এ সময় আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথাও বলা হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান করেছে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারগুলো।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিল বিমান দুর্ঘটনায় আহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম নাবিল রোহান। দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে সে এখন মোটামুটি সুস্থ। রোহানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের ৩৬টা বাচ্চা মারা গেছে, ৫০-৬০ জন আহত হয়েছে। আমরা চাই বিচার। ৫ লাখ টাকা দিয়ে কী হবে? আমরা চাই, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।’

নিহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের মা রাশিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। আমরা আমাদের দাবি জানাতে এখানে দাঁড়িয়েছি। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা আমাদের কাছে অসম্মানজনক।’

আহত ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ হোসেন নিলয়ের মা আইভি হোসেন নিঝুম জানান, তাঁর সন্তান ২৫ শতাংশ দগ্ধ। আরও তিনটি অপারেশন বাকি। বুক থেকে হাড় নিয়ে কান বানাতে হবে। হাত শক্ত হয়ে যাচ্ছে। নতুন চামড়া লাগাতে হবে। তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের ৫ লাখ টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দাবি করেন, হতাহতদের সারা জীবনের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড ও নিহতদের পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক।

মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের মূল্য পাঁচ কোটি টাকাও না, ৫০০ কোটিও টাকাও না। জীবন, জীবনই। জীবনের মূল্য ২০ লাখ টাকা হয়, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং সরকারের আগের ঘোষণার সমন্বয় করে সরকার একটি নতুন ঘোষণা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত