Ajker Patrika

ডাকসু আবার বন্ধ্যত্বের পথে

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
ডাকসু আবার বন্ধ্যত্বের পথে

দেশের দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। অথচ সেখানে নির্বাচন হয়নি টানা ২৮ বছর। সেই বন্ধ্যত্ব ঘুচেছিল চার বছর আগে। ২০১৯ সালের ১১ মার্চে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল। প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এরপর গত চার বছরে আর ভোট হলো না। শিগগির যে নির্বাচন হতে পারে, সে আভাসও দিতে পারছেন না কেউ। আবার যেন বন্ধ্যত্ব পেয়ে বসেছে ডাকসুকে।

ছাত্র সংসদ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘অপরিহার্য অংশ’ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো কারখানা নয়। এটি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও বটে। এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিকতা নির্ভর করে ছাত্র সংসদের ওপর। ছাত্র সংসদ না থাকা মানেই জিনিসটা খর্ব হয়ে যাওয়া। ছাত্র সংসদ না থাকলে একটি প্রতিষ্ঠান অপূর্ণাঙ্গ থাকে।’

১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে একটি ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে নাম হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ বা ডাকসু। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে না হলেও মোটামুটি নির্বাচন হতো। কিন্তু ১৯৯০ সালের নির্বাচনের পর যেন বন্ধ্যত্ব পেয়ে বসে। বিরোধী ছাত্রসংগঠন জয়ী হতে পারে—এই আশঙ্কা থেকে নব্বই-পরবর্তী সরকারগুলোর এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনীহ ছিল। ফলে ২০১৯ সালের আগপর্যন্ত আর নির্বাচন হয়নি।

সর্বশেষ নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি ও সমাজসেবা পদ ছাড়া বাকি পদগুলোতে নির্বাচিত হয় ছাত্রলীগের প্যানেল। ভিপি পদে ‘চমকপ্রদভাবে’ নির্বাচিত হন চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নূরুল হক নুর। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে একক আমরণ অনশন ও দ্বিতীয়বার পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী আখতার হোসেন নির্বাচিত হন সমাজসেবা সম্পাদক পদে। এরপর গত চার বছর আর নির্বাচন হয়নি।

সাবেক ভিপি নূরুল হক নুর এখন গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব। আখতার হোসেনও আছেন তাঁর দলের সঙ্গে। ডাকসু না থাকাকে শিক্ষার্থীদের অধিকার ‘খর্ব’ বলে মনে করেন আখতার হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাকসু শিক্ষার্থীদের কথা বলার প্ল্যাটফর্ম। ডাকসুর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়, কিন্তু নির্বাচন দেওয়া হয় না। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা।’

ছাত্রলীগও বিভিন্ন সময় ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অধিকার পূর্ণ হয়েছে। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন ছিলেন।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান এই ছাত্রনেতা।

আর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি মো. খোরশেদ আলম সোহেল মনে করেন, গণভবন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, এর বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অক্ষম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রকাঠামোতে যেভাবে একটি পেশিশক্তি দখল করে আছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তারই এক্সটেনশন মাত্র। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসুকে পুনর্জীবিত করবে বলে আমরা বিশ্বাসই করি না।’

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করে নিয়ম অনুসারে প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচনের দাবি ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক কাজী রাকিব হোসাইনের।

ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হতে থাকলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে। ঢাবিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন বেগবান হবে। ছাত্র আন্দোলনকে সরকার ভয় পায়। ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে—সেই ভাবনা থেকেই তারা অগণতান্ত্রিকভাবে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ রাখছে, যা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই মন্তব্য ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি) সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফের।

ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হলে ভালো হতো বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও। তাহলে কেন হচ্ছে না, জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আমাদের কিছু পটভূমি নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সাথে মূল্যবোধের পরিবর্তন হবে, আমাদের একসময়ের দেখা ছাত্ররাজনীতি ও বর্তমান ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তন লক্ষণীয়। আরও ইতিবাচক পরিবর্তন হলে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবনা তৈরি হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত