Ajker Patrika

পার্টির সমর্থক হিসেবে থাকতে চাই: জাহাঙ্গীর আলম

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ২০: ০৪
পার্টির সমর্থক হিসেবে থাকতে চাই: জাহাঙ্গীর আলম

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়ার পর দলের সমর্থক হিসেবে কাজ করতে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আবেদন জানান।

জাহাঙ্গীর বলেন, “আমি দল বা নৌকার বিরুদ্ধে না। আমি একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ক্ষমতার জন্য না, পদের জন্য না, সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মায়ের সঙ্গে আছি। আমি বলেছি, যেকোনো সময় আমি হারিয়ে যেতে পারি, আমার ক্ষতি হতে পারে। আমার মা বলেছেন, ‘আমার সন্তান যদি একজন হারিয়ে যায়, গাজীপুরে লক্ষ লক্ষ সন্তান আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদপ্রার্থী তাঁর মা জায়েদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার হওয়ায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে তাঁর মা জায়েদা খাতুন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হওয়ার বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ফেসবুকে, টেলিভিশনের মাধ্যমে শুনেছি আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি তো একজন আওয়ামী লীগের সমর্থক। আমাকে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা-কর্মী কেন প্রয়োজন? আগে আমার দলীয় পদ ছিল, সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ছিলাম, আমাকে দল থেকে এভাবে বের করে দেওয়াটা দলের জন্য কতটুকু ভালো হয়েছে? আমি আকুল আবেদন করব আমাকে পার্টির সমর্থক হিসেবে থাকতে দিন।’

অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী গাজীপুর-১ আসনের কালিয়াকৈরে নৌকার প্রতীক দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল সরাসরি নৌকার ভোট না করে বিদ্রোহী আনারস প্রতীককে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি পরবর্তী সময়ে সভাপতি হয়েছেন, সিনিয়র মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁরা যদি মিথ্যাচার করেন, তাঁরা যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে আমরা ন্যায়বিচারটা কোথায় পাব?’

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁর মায়ের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের জায়গাটি ভিন্ন। আমি শুধু আমার মায়ের নির্বাচনটা করছি। আওয়ামী লীগ আমার একটা ভালোবাসার জায়গা, নৌকা আমার একটা ভালোবাসার জায়গা, প্রধানমন্ত্রী আমার শ্রদ্ধার জায়গা। যেখানে আজমত উল্লাহ খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সেই আজমত উল্লাহ আমার ক্ষতি করার সকল কিছুর পেছনে জড়িত ছিলেন। আজমত উল্লাহ আমার বাসায় এসেছেন, খেয়েছেন। এখানে বসে তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, “করোনা-পরবর্তী সময়ে আমি দীর্ঘ ১৮ মাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সব নেতার বাসায় বাসায় গিয়েছি, অফিসে গিয়েছি। সবাইকে বলেছি, আমাকে একটু সত্য বলার সুযোগ দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনারা কথা বলুন, না হয় আমাকে কথা বলার জন্য একটু সুযোগ করে দিন। নেতারা আমাকে বলেছেন, ‘তুমি কোনো অন্যায় করো নাই। তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে তোমার বিষয়টা বলব।’ কিন্তু কেউ বলেননি। আমি চেয়েছিলাম সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে থেকে সত্য প্রকাশ করতে। এতদিন চোখের জল ফেলেছি, আজ আর ফেলব না।”

জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘আজ আমার সব ক্ষমতা চলে গেছে, নেতা-কর্মীরাও চলে গেছে। শুধু আমার মা পাশে আছেন। তবু আমার নেতা-কর্মীদের কেন অত্যাচার করা হচ্ছে? এটা কার জন্য ভালো? আমি বলেছি, আমার মা দাঁড়িয়েছেন, এখানে ভোটটা হোক। নির্বাচন কমিশন ও সরকার চেয়েছে ভালোভাবে ভোটটা হোক। ভোটটা নিরপেক্ষ হবে, সুন্দর হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে গিয়ে যদি এখানে পেশিশক্তি ব্যবহার করা হয়, মারামারি করা হয়, এক ভাই আরেক ভাইকে গালাগালি করে তাহলে এটা কাদের জন্য ক্ষতিকর? সে হিসেবে আমি মনে করব, কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন গাজীপুরে দাওয়াত খেয়ে যান। কিন্তু গাজীপুরের মানুষকে আপনারা থ্রেট দিয়েন না। দিনে-রাতে আপনারা কর্মীদের বাসায় যাচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন—এটাকে তো ভোটের পরিবেশ বলে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত