Ajker Patrika

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা: ১ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ৫ বছরে, বাড়ছে মেয়াদ

  • ৩৮৮টি নয়, ঢাকার নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থায় প্রয়োজন ৫০ বাস রুট
  • মেয়াদের সঙ্গে প্রকল্পের খরচ ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব
  • সংশ্লিষ্টরা বলছেন একক কোম্পানির অধীনে সব বাস চালু করতে বড় বাধা মালিকেরা
  • রাজধানীতে বাস রুট আছে ৩৮৮টি, অথচ দরকার মাত্র ৫০টি
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ২১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীতে নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরের বাস রুট যৌক্তিকীকরণ এবং প্রতি রুটে অভিন্ন কোম্পানির অধীনে বাস সার্ভিস চালুর একটি উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত সরকার। এজন্য ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প শুরু করা হয় ২০২০ সালের ১ মার্চ। কথা ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পটি শেষ হবে। কিন্তু এক বছরের ওই প্রকল্প ৫ বছরেও শেষ হয়নি। মাঝে দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়। তাতেও বাস রুট যৌক্তিকীকরণ ও একক কোম্পানির অধীনে সব বাস চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন প্রকল্পটির মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি ভৌত অবকাঠামো বিভাগের বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পের সময় বাড়ানোর সম্মতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের (জ্যেষ্ঠ সচিব) এম এ আকমল হোসেন আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনপ্রত্যাশা পূরণে কীভাবে মহানগরে বাস রুট যৌক্তিকীকরণ করা যায়, তার নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। তাই প্রকল্পের সময় বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।

‘প্রিপারেশন অব কনসেপ্ট ডিজাইন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান ফর বাস রুট রেশনালাইজেশন অ্যান্ড কোম্পানি বেজড অপারেশন অব বাস সার্ভিস ইন ঢাকা’ শীর্ষক ওই প্রকল্পের আওতায় বাসে র‍্যাপিড পাস চালু, বাস চলাচলের জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম (আইটিএস) সমন্বিত কন্ট্রোল সেন্টার গঠনের ধারণা এবং বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালুর লক্ষ্যে ডিপিপি ও টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুতসহ বেশ কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে পাঁচটি প্রতিবেদনের কাছ শেষ হয়েছে, বাকি রয়েছে আরও চারটি। এগুলো শেষ করতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও কোভিডের কারণে কনসালট্যান্ট নিয়োগে বিলম্ব হয়েছে। কনসালট্যান্ট নিয়োগের পর মাঠপর্যায়ে উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে হয় ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের কারণে। পরে উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু হলেও জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের কারণে আবারও কিছুদিন স্থবিরতা নেমে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের ট্রাফিক সার্ভে গত জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে; কিন্তু ট্রান্সপোর্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে ট্রাফিক ফোরকাই ও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক প্রস্তুতের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা মহানগরীর প্রায় ১০০টি বাস রুটের ওপরে সার্ভে ও ৫ হাজার অফিসগামী যাত্রী (৫০টি অফিস), ১০ হাজার শিক্ষার্থী (৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ১০ হাজার মেট্রোরেল ব্যবহারকারীর ওপর সার্ভে করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

একটি লাভজনক রুটে ডিটিসিএর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ন্যূনতম ৬ মাসের জন্য পাইলট ভিত্তিতে বাসসেবা পরিচালনা করার বিষয়টি প্রকল্পে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিটিসিএ, বিআরটিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ টিন এয়ার প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে ইলেকট্রিক বাস পরিচালনা ও তাদের জন্য ডিপো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধিসহ প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে নতুন করে কিছু বিষয় যোগ হয়েছে, সে কাজের জন্য ব্যয়ও বৃদ্ধি করতে হবে।

নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থায় যত বাধা

লক্কড়-ঝক্কড় বাস, যেখানে-সেখানে থেমে থেমে যাত্রী তোলা, প্রতিটি রুটে বিভিন্ন কোম্পানির বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে আছে ঢাকা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার ভেতর চারটি বাস টার্মিনাল করার কথা ছিল; কিন্তু এখনো হয়নি। বিআরটিসির নতুন বাস এবং প্রাইভেট সেক্টরের রংচটা ফিটনেসবিহীন বাস একই ভাড়া আদায় করছে। ফলে বিআরটিসি অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং অন্যরা পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ছাড়াই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। ডিটিসিএ কর্তৃক নির্ধারিত ছয়টি ক্লাস্টারে রুট রেশনালাইজেশন একসঙ্গে চালু হওয়া প্রয়োজন।

বাস রুট যৌক্তিকীকরণ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা দেখেন, ঢাকা শহরে ৫০টির বেশি বাস রুট করার মতো জায়গা নেই। অথচ রুট রয়েছে ৩৮৮টি। এসব রুটে ১৮০০০ রুট পারমিট দিয়ে রেখেছে রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি), যদিও যেখানে ১০০টির বেশি রুট পারমিটের দরকার নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ বাস সার্ভিস ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের চেয়ে বাসমালিক ও শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে চলমান চুক্তিভিত্তিক বাস সার্ভিস ব্যবস্থা রয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। কারণ সব ধরনের জটিলতার উৎস হলো চুক্তিভিত্তিক সার্ভিস। এ কারণে কন্ডাক্টর ও চালক যাত্রী তোলা নিয়ে অসম প্রতিযোগিতা করেন। রাস্তার শৃঙ্খলা নষ্ট করে যানজটেরও সৃষ্টি করেন।

বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, এক রুটে একটি কোম্পানি থাকলে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। সে কারণে একটি রুটে পাইলট হিসেবে ৬ মাসের জন্য বাস পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাসমালিক-শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আব্দুল বাকী মিয়া বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মেট্রোরেল লাইনের স্টেশনভিত্তিক বাস রুট নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ফিটনেসবিহীন বাসে স্থায়ীভাবে ‘রিজেক্টেড সিল’ স্টিকার লাগাতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত