Ajker Patrika

আগের তুলনায় ক্যাম্পাসে ভালো সহাবস্থান বিরাজ করছে: ঢাবি উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আগের তুলনায় ক্যাম্পাসে ভালো সহাবস্থান বিরাজ করছে: ঢাবি উপাচার্য

দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর হল ও ক্যাম্পাসে নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘আগের তুলনায় ক্যাম্পাসে এখন ভালো সহাবস্থান বিরাজ করছে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের আন্তরিক প্রয়াসে এবং সবার সহযোগিতায় আগের তুলনায় ক্যাম্পাসে এখন ভালো সহাবস্থান বিরাজ করছে। কখনো কখনো দুই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সেটাও যাতে এড়ানো যায় সে জন্য সবাই যেন দায়িত্বশীল আচরণ করে। ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজে কেউ জড়িত থাকলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি এবং এর বাইরে রাষ্ট্রীয় আইনেও আমাদের কোনো শিক্ষার্থী অসুবিধায় পড়লে তাদের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। সে যে দল-মতের হোক না কেন আমাদের কাছে তার প্রথম পরিচয় ছাত্র এবং আমরা শিক্ষক।’ 

আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘অভিভাবকদের যে দাবি এবং আমাদের যে বক্তব্য এর মধ্যে খুব বেশি অমিল নেই। গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ বিনির্মাণে তাদের কথাগুলো আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমরা যেন সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করি এবং একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখি। আমাদের সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলোও ওনারা বুঝতে পেরেছেন।’ 

শাহবাগের মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর এভাবে অত্যাচার করা ঠিক না। আমি প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ভিসিকে অনুরোধ করছি, বিনা অন্যায়ে যে ছাত্রদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের যেন মুক্তি দেওয়া হয়। চেয়ার ছুড়ে হাসপাতালে গিয়ে তাদের ওপর যেভাবে অবিচার করা হয়েছে তার শাস্তি দাবি করছি।’ 

শাহবাগ থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ থানার সামনে সাময়িক বাঁধা দেয় পুলিশগ্রেপ্তার আরেক শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেনের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, ছেলেটারে পড়াশোনার টাকাও দিতে পারি না। দুই দিন ধরে আমার ছেলের খোঁজ পাইনি। পরে আত্মীয়দের কাছে শুনছি আমার ছেলেরে মিথ্যা মামলায় আটক করেছে।’ 

গ্রেপ্তার জাহিদ হোসেনের মামা আবুল কালাম বলেন, ‘আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় আমার ভাগনেকে মারধর করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহিদের সামনে পরীক্ষা। সে জন্য অন্তত তার পরীক্ষাগুলো দিতে পারে সে জন্য আমি তার মুক্তি কামনা করছি।’ 

শাহবাগে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধনের পর শাহবাগ থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের সাময়িক বাঁধা দিলেও পরে তাদের যেতে দেওয়া হয়। উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টা গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেন। 

আলোচনা শেষে কবি ও লেখক রাখাল রাহা দাবিসমূহ জানিয়ে বলেন, আমরা দল-মত নির্বিশেষে আমাদের সকল শিক্ষার্থীর হল ও ক্যাম্পাসে নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করা, যারা শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হামলাগুলোর যথাযথ তদন্ত ও বিচার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক চর্চা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া চর্চার জন্য নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছি। তিনি দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। 

এ সময় ডাকসুর সাবেক ও গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সহাবস্থান ফিরে এসেছিল। ডাকসুর ধারাবাহিকতা যাতে রাখা হয় সে বিষয়েও আমরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি।’ 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ছাত্ররা আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেবে এটাতো মানবাধিকার। হাসপাতালে গিয়ে হামলা করবে, গ্রেপ্তার করবে এটাতো বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো হয়নি। ন্যূনতম সীমা যদি নির্ধারণ করা না যায় তাহলে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত