Ajker Patrika

মানিকগঞ্জে সালিসে বিএনপি নেতার নির্দেশে পাঁচ ভাইকে জুতাপেটা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২৩: ৫২
সালিসকারী সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস ওরফে মাখন। ছবি: সংগৃহীত
সালিসকারী সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস ওরফে মাখন। ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জে জমি-সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধের জেরে গ্রাম্য সালিস বসিয়ে আপন পাঁচ ভাইকে একসঙ্গে কান ধরে ওঠবস করানোসহ জুতা দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিকেলে বরাইদ ইউনিয়নের সালুয়াকান্দি গ্রামে দুই শতাধিক নারী-পুরুষের সামনে সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস ওরফে মাখনের নির্দেশে সালিসের রায় বাস্তবায়ন করা হয়।

ভুক্তভোগীরা আজ রোববার মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত মাখনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তবে ভয়ে তাঁরা মামলা করেননি বলে জানান। মারধর এবং লাঞ্ছনার শিকার লিটন মিয়া, ওহাব মিয়া, মগরম আলী, হারুন মিয়া, রবিউল মিয়াসহ তাঁদের সন্তানেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের সালুয়াকান্দি গ্রামে ৭৫২ শতাংশ জমি নিয়ে সাত ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাত ভাইয়ের মধ্যে পাঁচ ভাই এক পক্ষের এবং অন্য দুই ভাই আরেক পক্ষ। এ নিয়ে কয়েকবার সালিস বৈঠক হলেও ভাইদের মধ্যে বিরোধের কোনো সুরাহা হয়নি। এরই মধ্যে মগরম আলীর ঘর না থাকায় জমি থেকে পাঁচটি গাছ কাটেন। এ নিয়ে সাত ভাইয়ের মধ্যে মিনহাজ মিয়া ও ফারুক মিয়া বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং বরাইদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেন। এরপর চেয়ারম্যান শুক্রবার সালিসের সময় নির্ধারণ করেন। সালিসের নির্দিষ্ট সময়ে বিএনপির নেতা মাখন এবং মিনহাজ মিয়া ও ফারুক মিয়া তাঁদের মানুষজন নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু অন্য পক্ষের পাঁচ ভাই কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।

পরে মাখনের নির্দেশে স্থানীয়রা সাত ভাইয়ের মধ্যে লিটন মিয়া, ওহাব মিয়া, মগরম আলী, হারুন মিয়া ও রবিউল মিয়াকে লোক দিয়ে ধরে নিয়ে যান। এরপর তাঁদের কোনো কথা না শুনে বিএনপির নেতা পাঁচ ভাইকে ভরা মজলিসে সাতবার কানধরে ওঠবস করানোসহ স্থানীয় রফা উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে একেকজনকে পাঁচবার করে জুতা মারেন। এরপর বিচারের মীমাংসা না করে চেয়ারম্যান সালিস ছেড়ে চলে যান। সালিসে বরাইদ ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রমজানসহ গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী লিটন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস আমার ভাইয়ের কথা শুনে গ্রাম্য সালিস ডেকে দুই শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আমিসহ পাঁচ ভাইকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বেইজ্জতি করেন। আমরা এর বিচার চাই।’

বরাইদ ইউপি সদস্য মো. রমজান বলেন, ‘আমি সালিসে ছিলাম। আসলে বিষয়টি ওইভাবে হয়নি। জমি ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মা-বাবার কবরের ওপর নির্যাতনের জন্য কান ধরানো হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর চাচাকে দিয়ে শাসন করা হয়েছে। এটি দোষের কিছু নয়।’

সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস ওরফে মাখন বলেন, ‘গ্রামবাসী সালিস ডাকার পর তাঁরা সাত ভাইয়ের মধ্যে পাঁচ ভাই সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁদের কান ধরে ওঠবস করানো হয়। আর পাঁচ ভাই বাবার কবরের যত্ন না করায় অভিভাবক হিসেবে চাচাতো ভাই তাঁদের সামান্য শাস্তি দিয়েছে। এটা দোষের কিছু নয়।’

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিন্নাহ কবীর বলেন, ‘গ্রাম্য সালিসে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা এর নিন্দা জানাই। দেশে আইন থাকতে কোনো গ্রাম্য সালিসকে আমি সমর্থন করি না।’ তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত