Ajker Patrika

সড়কের উন্নয়নে কাটা হচ্ছে ‘শতবর্ষী’ বটগাছ, এলাকাবাসীর হতাশা

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ১৮
সড়কের উন্নয়নে কাটা হচ্ছে ‘শতবর্ষী’ বটগাছ, এলাকাবাসীর হতাশা

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদের পাশেই চার রাস্তার মোড়ের বটগাছটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বহু বছর ধরে। সড়কের উন্নয়নে অবশেষে কাটা হচ্ছে শতবর্ষী এই গাছ। ইতিমধ্যে গাছটির চারপাশের বেশির ভাগ ডালপালা কেটে ফেলা হয়েছে। শুধু বটগাছটি নয়, কাটা পড়ছে সড়কের পাশের আরও ১ হাজার ৮টি গাছ।

ঘিওরবাসীর আশা ও দাবি ছিল, আশপাশের বড় একটি জায়গাকে শ্যামল ছায়ায় ঢেকে রাখা শতবর্ষী এই গাছকে অন্তত অক্ষত রাখা। কালের সাক্ষী এই বৃক্ষ কাটায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, মানিকগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ৫৯.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩৩ ফুট প্রশস্ত মহাসড়কের উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে, যার মধ্যে টাঙ্গাইল অংশের দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার এবং মানিকগঞ্জ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮.৫০ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এ কারণে বাধ্য হয়েই গাছটি কাটা হচ্ছে। এটি ছাড়াও কাটা পড়বে সড়কের পাশের আম, জাম, কাঁঠাল, মেহগনি, বট-পাকুড়সহ বিভিন্ন গাছ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বাকিগুলো কাটা চলছে।

সড়কের উন্নয়নে বট গাছটিসহ মোট ১ হাজার ৯টি গাছ কাটা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকাআজ বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির বটগাছটি ১০-১৫ জন শ্রমিক মিলে কাটছেন। কাণ্ড এখনো কাটা না পড়লেও গাছের চারদিকের বেশির ভাগ ডালপালা কাটা হয়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে চলছে গাছ কাটার কাজ। সাধারণ মানুষের গাছটির দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কাউকে কাউকে গাছটি কাটার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতে দেখা যায়। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘিওর উপজেলা পরিষদের পাশেই বটতলা মোড়। এমন নামকরণ হয় এই বটগাছকে কেন্দ্র করে। গাছটির বয়স বহু আগেই ১০০ পেরিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। গাছটি মানুষকে রোদ-ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি নানাভাবে উপকার করে আসছিল। এর শীতল ছায়ায় আশ্রয় নিত কর্মক্লান্ত মানুষ। গাছের নিচে কয়েক জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

এই গাছ কাটার বিষয়ে জেলা জাসদের সদস্য আবুল হাসেম বলেন, ‘আমার বয়স এখন পঞ্চাশের ওপরে। আমি ছোটবেলা থেকেই গাছটি দেখে আসছি। আগেকার মানুষ কৃষিকাজ শেষে এই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিতেন। কিন্তু সেই সব দৃশ্য হারিয়ে যেতে বসল।’

এই গাছের নিচে চায়ের দোকান দেওয়া আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার বাবা এই গাছের নিচে দোকান করেছেন। আমি এই গাছের নিচে ২০ বছর চায়ের দোকান করে সংসার চালিয়েছি। শেষমেশ আমি গাছটি কাটার দৃশ্য দেখলাম। বুক ফেটে কান্না আসছে। তবে বটতলা নামটি যেন থাকে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই।’

জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, উপজেলা সদরের বাসিন্দা প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন জানান, উন্নয়নের জন্য কাটা পড়া গাছগুলো দীর্ঘকাল মানুষকে বন্ধুর মতো সুমিষ্ট ফল ও সুশীতল ছায়া দিয়ে আসছিল। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই পুরোনো গাছগুলো আর দেখতে পাবে না।

পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা বিমল রায় বলেন, প্রাচীন এই গাছ রক্ষার দাবি জানাই। পরিবেশের স্বার্থে উন্নয়ন পরিকল্পনায় গাছ রেখেই যাতে বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট থাকতে হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গাছটি কাটা পড়ায় আমিও মর্মাহত হয়েছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, গাছটি রেখে উন্নয়নকাজ করা যায় কি না। রাস্তার উন্নয়নকাজের স্বার্থেই গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয়দের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে এই জায়গার পুরোনো ঐতিহ্য ও নামকরণ ধরে রাখতে উদ্যোগ নেব।’

জেলা বন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর সড়কে কাটা হচ্ছে ১ হাজার ৯টি গাছ। এগুলোর জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিল ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। গাছ রাখা-না রাখা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ।

মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং এ কাজের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে। বন বিভাগ টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করেছে। বটগাছের ওখানে আন্ডারপাস হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গাছটি রাখার কোনো উপায় নেই। কাজ শেষে স্থানটি দৃষ্টিনন্দন হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত