Ajker Patrika

১১ কোটি টাকার পানি শোধনাগার পড়ে আছে অকেজো

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
অচল পড়ে আছে প্রকল্পের কাঠামো। জমেছে শ্যাওলা। কোথাও পানি পচে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অচল পড়ে আছে প্রকল্পের কাঠামো। জমেছে শ্যাওলা। কোথাও পানি পচে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে দুই বছর হলো। তবুও চালু হচ্ছে না মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পানি শোধনাগারের কার্যক্রম। প্রকল্পটি হস্তান্তর নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। পানি শোধনাগার নির্মাণকাজের মান নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে পৌরসভার। এতে ১১ কোটি টাকার এ প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরসভার সব নাগারিক। নানা অনিয়মের মধ্যেই আটকে আছে এই প্রকল্পের কার্যক্রম।

জানা যায়, ২০১৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় মুন্সিগঞ্জ শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ৩ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের জায়গায় নির্মিত পানি শোধনাগারটির পরিকল্পনার মধ্যে ছিল পাশের ধলেশ্বরী নদী থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করে পৌরবাসীর মাঝে সরবরাহ করা।

তবে নির্মাণের শুরুতেই নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এরপর কয়েক দফা সময় পরিবর্তন করে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। একই বছর খাবার জন্য পানির নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সচল ছিল কয়েক মাস। এরপর বন্ধ হয়ে যায় পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রম।

হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানি শোধনাগারের মূল গেট বন্ধ। প্রকল্পটি দেখাশোনার জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। ভেতরে যেতেই দেখা যায় কার্যক্রম বন্ধ। অচল পড়ে আছে প্রকল্পের কাঠামো। জমেছে শ্যাওলা। কোথাও পানি পচে গেছে।

এদিকে, এ প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সরঞ্জাম। অনেক প্ল্যান্টে ব্যবহৃত হয়েছে নন-স্ট্যান্ডার্ড পাম্প, পাইপ এবং ফিল্টারিং ইউনিট, যা এক বছরের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। কিছু স্থানে পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপন করা হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির উৎস এবং আউটলেট সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। এরই মধ্যে কোনো কার্যক্রম না থাকলেও কাগজে শতভাগ কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পানি শোধনাগারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সরঞ্জাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পানি শোধনাগারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সরঞ্জাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে কথা হয় হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। প্রতীক্ষিত পানি শোধনাগারটি চালু না হওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা জানান, পৌরসভার হাটলক্ষ্মীগঞ্জসহ অনেক এলাকায় নেই পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা। লাইন ধরে পানি নিতে হয়। সেখানেও আয়রন থাকায় বিপত্তিতে পড়তে হয় তাদের। শোধনাগারটি চালু করে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার দাবি তাদের।

হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার সোহাগ জানান, কয়েক মাস পানি শোধনাগারটি চালানো হয়েছিল। তাঁরা বিশুদ্ধ পানি পাবেন বলে আশা করে ছিলেন। এটি এখন বন্ধ। তাহলে এত টাকা দিয়ে এটি করে লাভ কী হলো–প্রশ্ন তাঁর।

প্রকল্পটির কাজ করতে গিয়ে অনেক ভুগতে হয়েছে মন্তব্য করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ মাসুদুর রশিদ। তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রকৌশলী জাহিদ হাসান বলেন, প্রকল্পটি এখন বুঝে নেওয়া এবং দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ বিষয় এখন আর কিছু বলতে রাজি না। আর মাত্র ১৫ দিন বাকি আছে। ১৫ দিন পানি সরবরাহ করলেই প্রকল্প বুঝে নেওয়া কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে। মুন্সিগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদস্য এবং পৌরসভার সদস্য মিলে একটি কমিটি করা হয়েছে। যাদের মাধ্যমে প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

মুন্সিগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম আবদুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি যৌথভাবে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের। ৯০ দিন পানি সরবরাহ করার পরেই প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা প্রশাসক মৌসুমী মাহবুব বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, সে বিষয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে শর্ত আছে যে টানা তিন মাস বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানোর কথা সেটি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত