Ajker Patrika

সান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যা স্বপ্ন পিনন বুনন

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
সান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যা স্বপ্ন পিনন বুনন

কাপ্তাই উপজেলার ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়ন এর দুর্গম হরিণছড়া এলাকা। নৌ পথে ১৫ কিলোমিটার কাপ্তাই লেক পাড় হয়ে হরিনছড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী, বেচারাম পাড়া পাড় হয়ে পৌঁছাতে হয় দুছড়ি পাড়ায়। এর অদূরেই হরিনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

গতকাল বুধবার শীতের সকালে এই দুছড়ি পাড়ার হরিনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গিয়ে দেখা হয় সান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে। পিনন তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। পিনন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। উৎসব পার্বণে তাঁরা এই পোশাক পরিধান করে থাকেন।

সান্ত্বনার বাবা শেল কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, পেশায় একজন কৃষক। অন্যের জুমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন। কাজ না থাকলে বেকার থাকে তিনি। মা লক্ষ্মী দেবী তঞ্চঙ্গ্যা গৃহিণী। সান্ত্বনারা ৩ বোন। ভাইবোনদের মধ্যে সে সবার বড়। মেজ বোন দয়াবালা তঞ্চঙ্গ্যা কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজে এইচএসসি তে অধ্যয়নরত। আর ছোট বোন আদরবালা তঞ্চঙ্গ্যা প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়ে অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না।

নিজের বিষয়ে বলতে গিয়ে সান্ত্বনা জানান, সে চন্দ্রঘোনা পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। এরপর নানান জটিলতায় আর এইচএসসি পাস করতে পারেনি। আর্থিক সংকটের কারণে তাঁকে এখন পিনন বুননের কাজ করতে হচ্ছে। তাঁরা ৩ বোন মিলে একত্রে কাজ করেন। একটি পিনন তৈরিতে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ লাগে। স্থানীয়ভাবে একটি পিনন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আবার বাইরে নিয়ে গেলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। তাঁরা তিন বোন মাসে কমপক্ষে ৪-৫টি পিনন তৈরি করেন। মাস শেষে সামান্য লাভ দিয়ে তাঁদের পরিবার চলে। 

কথা প্রসঙ্গে সান্ত্বনা আরও বলেন, ‘অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ এই পিনন তৈরি করা। আবার পুঁজিও দরকার। সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আরও বেশি এগিয়ে যেতে পারতাম।’ 

পিনন বুনছেন সান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যা এবং তাঁর পাশে কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানসান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যা বিষয়ে ১১৯ নম্বরের ভাইজ্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা জানান, দুছড়ি পাড়ার সান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যা তাঁর দুই বোনকে নিয়ে পিনন বুননের কাজ করেন। তিন বোন মূলত: তাদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এই ঐতিহ্যবাহী পোশাক নারীরা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিচ্ছেদ করে থাকেন। তবে জেলা পরিষদ বা সরকারি সংস্থা সমূহ এগিয়ে আসলে এই দুর্গম এলাকায় এরা এদের প্রতিভাকে আরও কাজে লাগাতে পারবে।

এ বিষয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবীন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, তাঁর ওয়ার্ডের দুছড়ি পাড়ায় এদের বসবাস। তাঁরা খুবই গরিব। অনেক সময় তাঁরা কাজের সঠিক দাম পান না। 

গতকাল ১৯ জানুয়ারি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে সে এলাকায় যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জাহান। এ সময় তিনি দুছড়ি পাড়ায় সান্ত্বনা তঞ্চঙ্গ্যা বসত বাড়ির আঙিনায় গিয়ে সান্ত্বনার পিনন বুননের কাজ দেখেন। 

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জানান, সরকার যেহেতু উদ্যোক্তাদের উৎসাহ-সহযোগিতা দিচ্ছে। ঠিক তেমনি কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন প্রান্তিক পর্যায়ের এই হস্তশিল্প কারিগরদের সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত