Ajker Patrika

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের হাতে এক বছরে ৭ হত্যা

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের হাতে এক বছরে ৭ হত্যা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের হাতে এক বছরে ৭ হত্যা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকায় বেড়েছে হত্যার ঘটনা। গত বছরে সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলায় ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে অন্তত সাতজন বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন। একই সময় একজন ভারতীয় নাগরিকও আহত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন এবং মাদক চোরাচালানের কারণে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় বিএসএফকে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

সীমান্তে নিজ ফসলি জমিতে কাজ করতে গেলে তাঁকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে। এসব সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারকে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চড়াতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামের কৃষক নিহত হন। পরে পতাকা বৈঠক করে লাশ ফিরিয়ে আনে বিজিবি। ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামের এক কৃষকের।

২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হয় আসাদুল ইসলাম নামের আরেক যুবক। ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাঘুরির সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন হাসান নামের এক যুবক। সেই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের ছোড়া গুলিতে আহত হয় রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামের আরও দুই যুবক।

সর্বশেষ ৫ মে কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাকিব নামের এক তরুণ নিহত হন। এ ঘটনায় সুজন বর্মণ (৩৫) নামের এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আর এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক।

চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে নিজেদের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করছে বিএসএফের সদস্যরা। করেন ফাঁকা ফায়ারও। মূলত সীমান্তের দেড় শ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চড়াতে যান গবাদিপশু। ফলে শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের।

বিজয়নগরে বিএসএফের নির্যাতনে নিহত মুরাদুর রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যায়। তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে বিএসএফ ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

আরেক নিহত আল-আমিনের বাবা সুলতান মিয়া বলেন, ‘বাড়ির একটি গরু ছুটে গেলে সেটাকে আনতে সীমান্তে এলাকায় যাওয়ার পর তাঁর ছেলের ওপর গুলি করা হয়। তবে বিজিবির দাবি, সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের অসচেতনতা ও চোরাকারবারের কারণে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’

এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভেতরে চলে যায়, তখন বিএসএফ বাধা দেয়। তো আমাদের পক্ষ থেকেও সতর্ক হতে হবে যে শূন্য লাইনটা কোনটা। আমরা বারবার বলি ১৫০ গজের ভেতর যাবেন না। ভেতরে গেলে সীমান্ত হত্যার একটা বিষয় থাকে। কিন্তু এখন আমরা বিএসএফের সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে কঠোরভাবে কথা বলছি।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান বলেন, বিএসএফের প্রতিটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হয়। কীভাবে কী ঘটেছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত