Ajker Patrika

৪০ কিমি সড়কে ১০৮ বাঁক

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৩৩
৪০ কিমি সড়কে ১০৮ বাঁক

পর্যটকের কারণে খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ।

সড়কগুলো সরু হওয়ায় চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ২০টি মালবোঝাই ও যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে গেছে। এ ছাড়া বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

নিয়মানুযায়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক ২৪ ফুট প্রস্থ হওয়ার কথা। কিন্তু খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক সড়কের প্রস্থ ১৮ ফুট ও জেলা মহাসড়কের প্রস্থ মাত্র ১২ ফুট।

উঁচু-নিচু পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পরিবহন নেতাদের। এ জন্য সড়কের প্রস্থ বৃদ্ধি ও বাঁক সরলীকরণে ট্রপোগ্রাফিক সার্ভে করছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার অধিকাংশ সড়ক নির্মিত হয়েছে আশির দশকে। সে সময় অনেকটা অপরিকল্পিত ও তাড়াহুড়ো করে পাহাড় কেটে এসব সড়ক নির্মাণ করা হয়। ফলে সড়কগুলো সরু ও অতিরিক্ত বাঁকসম্পন্ন হয়। এতে যান চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি, রামগড়, তাইন্দং যাওয়ার সড়কসহ আলুটিলা-মাটিরাঙ্গা সড়কে সবচেয়ে বেশি বাঁক রয়েছে। এসব সড়কে একসঙ্গে দুটি ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারে না। এমনকি ভারী যানবাহনের পাশ দিয়ে অটোরিকশা, মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল, জিপের মতো ছোট যান চলতেও সমস্যা হয়।

সবচেয়ে বেশি বাঁক আছে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা জেলা মহাসড়কে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে বাঁক ১০৮ টি। এর মধ্যে ৮০টি বাঁক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জেলার ব্যস্ততম এই সড়কে দীঘিনালা ছাড়াও পর্যটনকেন্দ্র সাজেক, বাঘাইছড়ি ও লংগদুগামী যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া প্রতিদিন শতাধিক বাঁশ ও কাঠবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাটিরাঙ্গা থেকে আলুটিলা হয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত ১০০টি ছোট-বড় বাঁক আছে। এর এক-তৃতীয়াংশই ঝুঁকিপূর্ণ।

খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়মিত বাঁশ পরিবহন করেন চালক শাহিন আলম। তিনি বলেন, ‘সড়কে বিপরীত দিক থেকে গাড়ি এলে বাঁশবোঝাই ট্রাক ক্রস করা যায় না। রাস্তাটি আরও বড় করলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হবে।’

মালবাহী ট্রাকের চালক আব্দুল্লাহ আল ইব্রাহীম ও নয়ন জানান, সড়কে তাঁদের সামনেই অনেকে দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ২০টি দুর্ঘটনা হয়। কেবল বাঁকের কারণে এসব গাড়ি উল্টে যায়।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. ইলিয়াস ও সুজন বলেন, সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করায় খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। রাস্তা চিকন হওয়ায় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখা যায় না। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী এনজিওকর্মী শিউলি বেগম বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে বাস-ট্রাক যাওয়ার সময় অটোরিকশাচালকদের পাশাপাশি আমরাও ভয় থাকি। সরু রাস্তায় বড় গাড়ির কারণে ছোট গাড়ি চলতে পারে না। বাধ্য হয়ে রাস্তা থেকে পাশে নেমে যেতে হয়।’

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খোকন বলেন, ‘পর্যটকনির্ভর এলাকা হওয়ায় খাগড়াছড়িতে গাড়ির চাপ বেড়েছে। সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় ও অতিরিক্ত টার্নিংয়ের কারণে গাড়ি উল্টে যায়। দুর্ঘটনা রোধে সড়ক প্রশস্ত ও বাঁক সরলীকরণের দাবি জানিয়েছেন চলাচলকারীরা।’

খাগড়াছড়ি সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘আমরা ট্রপোগ্রাফিক সার্ভের কাজ শুরু করেছি। সার্ভে শেষ হলে প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। এটি অনুমোদন হলে পাহাড়ের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো ২৪ ফুট ও জেলা মহাসড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত