Ajker Patrika

চাঁদপুরে অবৈধভাবে রেললাইন বিক্রি

প্রতিনিধি, চাঁদপুর
চাঁদপুরে অবৈধভাবে রেললাইন বিক্রি

চাঁদপুরে রেলওয়ের ৮টি রেললাইন (রেলবিট) অবৈধভাবে বিক্রি করেছে ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকার চট্টগ্রাম লোহা বিতানের ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাস। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকার রেললাইনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে আজ বুধবার কুমিল্লার লাকসাম থেকে একটি তদন্ত টিম চাঁদপুরের এসেছে। 

জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকার চট্টগ্রাম লোহা বিতান নামের লোহা ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাস চাঁদপুর রেলওয়ের দীর্ঘ দিনের পুরোনো ৭টি রেলের পাত এক স'মিল ব্যবসায়ীর কাছে অবৈধভাবেভাবে বিক্রি করেন। 

চাঁদপুর রেলওয়ের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর সত্যতা পান বলে জানা যায়। তারা জানান, যেসব রেল লাইনের পাতগুলো বিক্রয় করা হয়েছে এবং যে ওয়ার্কশপে সেগুলো রয়েছে, একই মানের রেলপাত বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের রয়েছে। এই ঘটনায় চাঁদপুর রেলওয়ে থানায় মামলার এজাহার দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকা থেকে ৭টি রেলপাত দুটি ভ্যানে করে সেখান থেকে ইচলীঘাটের একটি নবনির্মিত স’মিলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অপর একটি রেলগেট ৫ নম্বর ঘাটের একটি ওয়ার্কশপে নিয়ে রাখেন। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ওই রেলের পাতগুলো ৫ নম্বর ঘাট এলাকার রেললাইনের পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। ব্যবসার জন্য সেগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাস চট্টগ্রাম থেকে ক্রয় করে আনার কারণে সেগুলো তিনি তা এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন তাঁরা জেনে আসছেন তাঁরা। কিন্তু সেগুলো কি রেলওয়ের, নাকি তাঁর ব্যবসার জন্য চট্টগ্রাম থেকে কেনা তারা তা সুস্পষ্টভাবে কিছুই জানেন না। 

ভ্যান দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলওয়ের লাইনএ বিষয়ে অভিযুক্ত লোহা ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে রেলপাতগুলো বিক্রি করা হয়েছে সেগুলো চাঁদপুর রেলওয়ের নয়। সেগুলো ট্রলির রেললাইন। যা দিয়ে বড় বড় জাহাজ ওঠা নামা করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুরে লোহা ব্যবসা করে আসছি। রেলপাতগুলো আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন পূর্বে চট্টগ্রাম থেকে ক্রয় করে এনেছি। যার ক্রয়ের রশিদ ও আমার কাছে রয়েছে।’ এই বলে তিনি রেললাইনগুলোর বৈধতা প্রমাণ করতে ২০১৫ সাল এবং ২০১৯ সালের দুটি রশিদ উপস্থাপন করেন। যা বিক্রয়কৃত রেললাইনগুলোর সঙ্গে তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অনুসন্ধান করে জানা গেছে রেলওয়ের রেললাইন বৈধভাবে কেনা লোহা জাতীয় বস্তু তিন মাসের মধ্যে তা বিক্রি করে ফেলা কিংবা সেগুলো আগুনে গলিয়ে বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে। 

এ দিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে বিক্রি করা ওই সব রেললাইনের পাতগুলো গত কয়েক বছর ধরে ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকায় রেললাইনের পাশেই পড়ে ছিল। আর সেগুলোই তিনি মঙ্গলবার বিকেলে কর্তৃপক্ষের অগোচরে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। 

এ বিষয়ে চাঁদপুর রেলওয়ের হাবিলদার খোরশেদ আলম জানান, ওই সব রেলের পাতগুলোর বিষয়ে জানতে তাঁদের কাছে গেলে এবং এ নিয়ে জানতে চাইলে তারা সেগুলো ট্রলির লাইন ক্রয় করেছেন বলে তাঁকে একই কথা বলেন। সেগুলো কেনার দুটি কাগজ তারা তাঁর কাছে জমা দিয়েছেন। সে কাগজে রেলওয়ের কোনো চিহ্ন নেই বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাকসাম ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরে তা যাচাই করার জন্য আমি ঘটনাস্থলে রেলওয়ের লোকজন পাঠিয়েছি। তারা সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় মামলার এজাহার দাঁড় করিয়ে চাঁদপুর মডেল থানা–পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অবৈধভাবে বিক্রিকৃত রেলের পাতগুলো জিআরপি থানায় নিয়ে আসা হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত