Ajker Patrika

১২ বছর হলো হাসপাতালের বারান্দায় থাকেন লক্ষ্মী রানী

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি)
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২১, ১০: ৫৭
১২ বছর হলো হাসপাতালের বারান্দায় থাকেন লক্ষ্মী রানী

লক্ষ্মী রানী দে। বয়স সত্তরের ওপরে। স্বামী-সন্তানহারা অন্ধ বৃদ্ধা প্রায় ১২ বছর হলো বসবাস করছেন রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতালের বারান্দায়। কি শীত, কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা কিংবা উৎসব–পার্বণ কখন যে চলে যায় তাঁর জীবনে এসবের কোনো কিছু আসে–যায় না। প্রতিদিন একবেলা বা দুবেলা ভাত-তরকারি পেলেই তাঁর দিন চলে যায়।

চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালের বারান্দায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কথা হয় লক্ষ্মী রানী দের সঙ্গে। তিনি জানান, রাঙামাটির রাজবাড়ি এলাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। বাবার নাম ক্ষিতীশ বিশ্বাস। কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ফলে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি লেকে তলিয়ে যাওয়ার পর স্বাধীনতার আগে তাঁরা সপরিবারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা হিন্দুপাড়ায় মামার বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে তাঁর বিয়ে হয় রাউজান উপজেলার ঊনসত্তরপাড়া গ্রামের মানিক চন্দ্র দের সঙ্গে। সুখেই চলছিল তাঁদের জীবন। স্বামী কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। এরই মধ্যে তাঁর দুই সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সবার কপালে কি সুখ সয়। তাঁর প্রথম ছেলে লিটু দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যায় পাহাড়তলি শ্বশুরবাড়িতে। বড় ছেলে মারা যাওয়ার ছয় বছর পর আর এক ছেলে সুজয় দে মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা যায়। ছেলেহারা লক্ষ্মী রানীর জীবন বিভীষিকায় পরিণত হয়।

কথাই আছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। ছেলে হারানোর আট বছর পর পুত্রশোক সইতে না পেরে লক্ষ্মী রানীর স্বামী মানিক চন্দ্র দেও মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর জীবনে নেমে আসে আরও দুর্বিষহ দিন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচারে তিনি এককাপড়ে ঘর ছেড়ে চন্দ্রঘোনা হিন্দুপাড়া মায়ের ঘরে চলে আসেন। সেখানেও থাকতে পারলেন না তিনি। সহায়–সম্বল যা ছিল তা নিয়ে তাঁর এক ভাই চলে যান অন্যত্র।

এরপর তিনি চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতালের চিকিৎসক মনোজ বড়ুয়ার বাসায় কাজ নেন। ডা. মনোজ বড়ুয়া ছাড়াও মিশন এলাকার অনেকের বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চালাতেন তিনি।

এরই মধ্যে তাঁর জীবনে আসে আরও একটি দুঃস্বপ্ন। ১৯৯২ সালে চোখে কঠিন রোগ দেখা দেয়। অপারেশন করাতে গিয়ে তিরি হারান দুচোখ। চোখ হারানোর পর অনেকের বাসায় তাঁর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন মানুষের দেওয়া অন্ন-বস্ত্রে চলে তাঁর জীবন। যেদিন পান সেদিন খান, না পেলে কখনো কখনো পানি খেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ঘুমিয়ে যান লক্ষ্মী রানী দে।

কথা হয় মিশন হাসপাতালের সামনের গেটে ফল বিক্রেতা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে। তিনি জানান, এই মহিলা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দিনের বেলা তাঁর দোকানে বসে থাকেন, সন্ধ্যা হলে হাসপাতালের বারান্দায় চলে যান। অনেকে এসে কিছু সহায়তা করে যান।

চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী মো. সিরাজ, জুনু চাকমা, নাছের জানান, ১২ বছর ধরে হাসপাতালের বারান্দায় ওই মহিলা রাত্রি যাপন করেন। হাসপাতালের সামনে অন্ধ এই মহিলাকে তাঁরা সব সময় চোখে চোখে রাখেন, খাবার দেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং জানান, ১২ বছর ধরে আমরা তাকে হাসপাতালের বারান্দায় বসবাস করতে দেখে আসছি। আমরা একবার ওই  মহিলাকে টাকা–পয়সা দিয়ে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় দিয়ে এসেছিলাম। কিন্ত ওই মহিলা আবার হাসপাতালের সামনে ফিরে আসে, তাই মানবিক কারণে আমরা ওনাকে থাকতে দিয়েছি।’ 

ডা. প্রবীর খিয়াং আরও বলেন, ‘হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁকে আমরা প্রায়ই খাবার দিয়ে থাকি। তবে ওই মহিলাকে যদি পুনর্বাসন করা যায়, সে ক্ষেত্রে আমরা সহায়তা করব। আমরা আবার চেষ্টা করব তাঁকে তাঁর আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে পুনর্বাসন করার জন্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত