Ajker Patrika

সৈকত তীরের জমির বিরোধে যুবলীগ নেতাকে গুলি, মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
সৈকত তীরের জমির বিরোধে যুবলীগ নেতাকে গুলি, মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার শহরে যুবলীগ নেতাকে গুলি, আওয়ামী লীগ নেতা বিরুদ্ধে মামলার জের ধরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছে সমুদ্রসৈকতের কোটি টাকা মূল্যের জমি নিয়ে বিরোধ। এ নিয়েই গত দুই দিন ধরে উত্তপ্ত পর্যটন শহর কক্সবাজার। 

জানা যায়, সমুদ্র সৈকতের কলাতলী প্রধান সড়কের সুগন্ধা পয়েন্টে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে অস্থির পরিস্থিতি চলছে গত দেড় বছর ধরে। এ জমি দখল নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকটি গ্রুপ তৎপর রয়েছে। এ ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে একাধিক মামলা। 
 
সরেজমিন দেখা যায়, কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর পাশে আড়াআড়িভাবে তৈরি করা হয়েছে দুইটি শুঁটকি মার্কেট। এর একটির নাম দেওয়া হয়েছে সুগন্ধা শুঁটকি মার্কেট। 

ব্যবসায়ীরা জানান, দুটি মার্কেটে ৩৪টি দোকান রয়েছে। মাস-দু-এক আগে ওবাইদু হোসেন ও যুবলীগ নেতা মোনাফ সিকদার মার্কেট দুটি নির্মাণ করেন। এর পাশে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীর নির্মাণাধীন রেস্টুরেন্ট। 

এর আগে গত বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এ মার্কেটের সামনেই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও যুবলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে (৩২) গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত মুনাফ সিকদার শহরের পেশকারপাড়া এলাকার শাহাব উদ্দিন সিকদারের ছেলে এবং শহর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। 

সোমবার বিকেলে শুঁটকি মার্কেটের সামনে কথা হয় মোনাফ সিকদারের ছোট ভাই রানা সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, `ঘটনার দিন আমি ও আমার ভাইসহ মার্কেটের সামনে আলাপ করছিলাম। এ সময় তিন যুবক মার্কেটের সামনে আসে। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক যুবক খুব কাছ থেকে গুলি করে চলে যায়।' জমির মালিকানা বিষয়ে জানতে চাইলে ওবাইদুল হোছাইন বিস্তারিত জানেন বলে জানান তিনি। 

একাধিক সূত্র জানায়, আলোচিত এই জমির প্রকৃত মালিক চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার ওমর মিয়ার স্ত্রী সায়রা খাতুন। এক একর ১০ শতক আয়তনের এ জমির নানাভাবে হাতবদল হয়ে এখন ওবাইদুল হোছাইন গংয়ের দখলে রয়েছে। যদিও মূল্যবান এ জমির দখল পেতে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। 

যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় গত রোববার কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন মোনাফ সিকদারের ভাই মো. শাহজাহান। এ মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে। এ মামলার জের ধরেই গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেয়রের অনুসারী ও কর্মী-সমর্থকেরা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৩ ঘণ্টা কক্সবাজার শহর অচল করে রেখেছিল বলে জানা যায়। 

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মেয়র মুজিবুর রহমানকে এ মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে। তিনি এতে কোনোভাবে জড়িত নন। 
 
এ দিকে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কর্ম বিরতি দিয়ে নাগরিক সেবা বন্ধ রেখেছিল পৌর পরিষদ। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে কর্ম বিরত প্রত্যাহার করা হয়। 

এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘সামনে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা করিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সুষ্ঠু তদন্ত করে মেয়র মুজিবকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাসে কর্ম বিরতি ও আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত