Ajker Patrika

কলেজের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবেশীর বাধা: শিক্ষকদের ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
জমে থাকা পানির দুর্গন্ধে আমতলী উপজেলায় বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমে থাকা পানির দুর্গন্ধে আমতলী উপজেলায় বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার আমতলী উপজেলায় বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের লেকের পানি নিষ্কাশনে বাবুল মিয়া নামের এক প্রতিবেশী বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, আজ রোববার দুপুরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কলেজের পানি নিষ্কাশনে পাইপ স্থাপন করতে গেলে বাবুল মিয়া ও তাঁর লোকজন কলেজের শিক্ষক ও পৌরসভার লোকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ধাওয়া দিয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে আলহাজ মকবুল আহম্মেদ মৃধা আমতলী পৌরসভার কালিবাড়ী এলাকায় বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটিতে বর্তমানে দেড় হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। প্রতিষ্ঠার সময় কলেজের সৌন্দর্য বাড়াতে সামনে লেক বানানো হয়। দুই মাস আগে প্রতিবেশী বাবুল মিয়া কলেজের লেকের পানি নিষ্কাশনের পথে বালুর বস্তার বাঁধ দেন। পানি নিষ্কাশন বন্ধ হওয়ায় জমে থাকা পানির দুর্গন্ধে কলেজের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আজ দুপুরে ওই লেকের পানি নিষ্কাশনে আমতলী পৌরসভা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ ও তাঁর লোকজন ঘটনাস্থলে যান। ওই সময় বাবুল মিয়া ও তাঁর দুই ছেলে হাসিব মিয়া, সোয়েব মিয়া, স্ত্রী রিনা বেগম, শাশুড়ি আলেয়া বেগমসহ ১০-১২ জন পানি নিষ্কাশনের পাইপ স্থাপনে বাঁধা দেন। তাঁরা কলেজে শিক্ষকদের গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে পৌরসভার লোকজন ও শিক্ষককের ধাওয়া দেন। খবর পেয়ে আমতলী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ দেখতে পেয়ে পালিয়ে যান বাবুল মিয়া ও তাঁর সঙ্গীরা।

কলেজের জৈষ্ঠ প্রভাষক বসির উদ্দিন, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, কবির হোসেন, উত্তম কুমার কর্মকার ও মাকসুদুর রহমান বলেন, লেকে জলাবদ্ধতার কারণে কলেজের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পচা দুর্গন্ধে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করানো খুবই কষ্টকর। তাঁরা আরও বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে এলে বাবুল মিয়া ও তাঁর লোকজন শিক্ষকদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ধাওয়া করেছেন। এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। সহকারী অধ্যাপক মো. বাছির উদ্দিন ও মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা। এই কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে ওই দিন ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। ওই পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাতে বাবুল মিয়া ও তাঁর লোকজন এমন ন্যক্কারজনক কাজ করেছেন। এদিকে ঘটনার পর বাবুল মিয়ার মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কলেজের শিক্ষকদের ধাওয়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বাবুল মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, ‘ওই কলেজের লেকের পানি আমার জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে আমার অনেক ক্ষতি হয়। তাই আমি পানি নিষ্কাশনের পথ বালুর বস্তা দিয়ে আটকে রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার জমির ওপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনে পাইপ স্থাপন করতে দেব না।’

আমতলী বকুলনেছা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছা. ফেরদৌসি আক্তার বলেন, বাবুল মিয়া কলেজের জমি দখল করে বালুর বস্তা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে দিয়েছেন। কলেজের জমির ওপর দিয়েও তিনি পানি নিষ্কাশনের পাইপ স্থাপন করতে দেবেন না। ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা। ওই পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাবুল মিয়া এমন কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে বাবুল ও তাঁর লোকজন অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, কলেজের লেকের পানি নিষ্কাশনে পৌরসভার লোকজন পাঠানো হয়েছে। তাঁরাই ওই পানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত