Ajker Patrika

আজ পটুয়াখালী পাক-হানাদারমুক্ত দিবস, ৫০ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি ইতিহাস

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
আজ পটুয়াখালী পাক-হানাদারমুক্ত দিবস, ৫০ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি ইতিহাস

দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই শেষে একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলা পাক-হানাদার মুক্ত হয়। সেই দিন পটুয়াখালী শহরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রথম এবং পরবর্তীতে শহীদ আলাউদ্দিন শিশু পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের এলাকা ভিত্তিক ইতিহাস যেমন সংরক্ষণ করা হয়নি তেমনি জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও গণকবরগুলো সংস্কার করা হয়নি। এদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিকেল ৩টায় লাউকাঠি নদীতে বর্ণাঢ্য নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান জেলা প্রশাসন। 

জানা যায়, একাত্তরের ২৬ এপ্রিল শহরে গণহত্যা চালিয়ে পটুয়াখালী জেলা সদর দখলে নেয় পাক-হানাদার বাহিনী। এ সময় পাক সেনারা শহরের কালিকাপুর মাদবার বাড়িতে ১৯ জনকে হত্যা করে। পাক সেনাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দক্ষিণ দিকের সরকারি কোয়ার্টারের সামনে নিহত হন সাত আনসার সদস্য। যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী শহরের জেলা কারাগারকে তাঁদের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। সে সময়ে কয়েক শ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। বর্তমানে কারাগারটি ব্যবহৃত হচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়নের ক্যাম্প হিসেবে। আর জেলার বৃহৎ এই গণকবরটি এখন অনেকটা অবহেলায় পড়ে আছে। 

মূলত ১৮ নভেম্বর জেলার গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে পান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন কে. এম নুরুল হুদা ও হাবিবুর রহমান শওকত। অন্যদিকে পাক-হানাদার বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মেজর ইয়ামিন। একটানা ১২ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের একপর্যায়ে মেজর ইয়ামিনের নেতৃত্বাধীন পাক-সেনারা পিছু হটে যায় এবং রাতের আঁধারে পানপট্টি থেকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে তাঁদের শক্তি সাহস বেড়ে যায় এবং ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালীকে মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। ৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে পাক সেনারা পটুয়াখালী শহর থেকে পালিয়ে গেলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে পটুয়াখালীর মুক্ত আকাশে ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা এবং জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা শহর। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পটুয়াখালী জেলায় মোট ২৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এর মধ্যে পটুয়াখালী সদরে ১৮ জন, দুমকিতে ৮৬ জন, বাউফলে ৬১ জন, দশমিনায় ৬ জন, গলাচিপায় ১৩ জন, কলাপাড়ায় ৩৪ জন, মির্জাগঞ্জে ১৮ জন ও রাঙ্গাবালীতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। 

তবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের এলাকা ভিত্তিক ইতিহাস যেমন সংরক্ষণ করা হয়নি তেমনি জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও গণকবরগুলো সংস্কার করা হয়নি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সমূহ সংরক্ষণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের। 

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, ‘১৯৭১ সালে ৮ ডিসেম্বর একটি কাঠের দোতলা লঞ্চে করে পাক হানাদার বাহিনী পটুয়াখালী ত্যাগ করে। এরপরই মুক্তিযোদ্ধারা ও মুক্তিকামী মানুষ পটুয়াখালী কে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে এরপরই বিকেলে তাঁর বিজয় উল্লাস করে। পটুয়াখালী জেলা শহরে যে গণকবরগুলো রয়েছে তা সংরক্ষণের অভাবে অরক্ষিত পড়ে আছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, আগামী তরুণ প্রজন্মের কাছে এই ৮ ডিসেম্বর কে তুলে ধরার জন্য হলেও এই গণকবরগুলো সংস্কার করে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।’ 

এ ছাড়া এই দিবসকে সামনে রেখে সমকাল সুহৃদ সমাবেশের আয়োজনে সকাল ৭টায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে ‘যোদ্ধার মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা’ এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিকেল ৩টায় লাউকাঠি নদীতে বর্ণাঢ্য নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

আমরা দখল করি লঞ্চঘাট-বাসস্ট্যান্ড, জামায়াত করে বিশ্ববিদ্যালয়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত