Ajker Patrika

জার্মান বধূকে নিয়ে হেলিকপ্টারে ফিরলেন বরিশালের রাকিব

খান রফিক, বরিশাল
জার্মান বধূকে নিয়ে হেলিকপ্টারে ফিরলেন বরিশালের রাকিব

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাবার হাত ধরে পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর ইতালি। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাকিব হোসেন শুভ সেখান থেকে চলে যান জার্মানি। ১১ বছর পর গ্রামে ফিরলেন জার্মান বধূকে নিয়ে হেলিকপ্টারে চেপে। 

বিদেশি বধূকে দেখতে রাকিবের গ্রামের বাড়ি চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাসুরা বাজার ও উলালবাটনা গ্রামে মানুষের ঢল নেমেছে। জার্মানির নাগরিক আলিসা থেওডোরা পিত্তা রাকিবের স্ত্রী। তাঁকে রাজসিকভাবে বরণ করলেন রাকিবের স্বজনেরা। 

গতকাল শনিবার গ্রামে ফেরেন রাকিব। এখন দেশীয় রীতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী তাঁদের গায়েহলুদ ও বিয়ের আয়োজন চলছে। 

দীর্ঘ ১১ বছর পর গ্রামে ফিরলেন রাকিবপ্রবাসী রাকিব হাসান সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের উলালবাটনা গ্রামের মো. শহীদুল ইসলামের ছেলে। ২০১১ সালে ইতালি যান রাকিব। সেখান থেকে যান জার্মানিতে। সেখানে আলিসার সঙ্গে পরিচয়। আলিসা একটি হাসপাতালের নার্স। পরিচয় থেকে প্রেম। এরপর আলিসা পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাঁদের বিয়ে হয়। 

রাকিবের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাকিব হাসান শুভ (২৬) জার্মানির একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখানে পরিচয় ও প্রেম হয় জার্মানির তরুণী আলিসা থেওডোরা পিত্তার সঙ্গে। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আলিসা-রাকিবের বিয়ে হয়। আলিসার কোলজুড়ে আসে একটি ছেলে সন্তান। 

দীর্ঘদিন পর গতকাল শনিবার জার্মান বধূ আর সন্তানকে নিয়ে দেশে আসেন রাকিব হাসান। তাঁদের সঙ্গে এসেছেন আলিসার এক বান্ধবীও। ঢাকায় পৌঁছার পর হেলিকপ্টার ভাড়া করেন। চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা বাজার সংলগ্ন মাঠে অবতরণ করে তাঁদের বহনকারী হেলিকপ্টার। জার্মান বধূ ও ছয় মাসের নাতিকে বরণ করে নিতে সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিলেন রাকিব হাসানের বাবা-মা ও স্বজনেরা। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁরা। 

বিদেশি বধূকে দেখতে মানুষের ঢল। ছবি: আজকের পত্রিকাবিদেশি বধূ আসার খবরে আগে থেকেই শত শত মানুষ জড়ো হয় কাগাশুরা বাজার এলাকায়। হেলিকপ্টার থেকে তারা নেমে আসার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে নেওয়া হয় বাড়িতে। ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি আসার খুশিতে দুপুরে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয় বাড়িতে। আমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ ৫ শতাধিক লোককে। 

দীর্ঘ ১১ বছর পর বিদেশি বধূকে নিয়ে গ্রামে ফেরা প্রসঙ্গে রাকিব হাসান বলেন, ‘করোনার কারণে জার্মানিতে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হয়েছে। বাড়িতে ফেরার জন্য আমরা বেকুল হয়ে উঠছিলাম। আমাদের ছয় মাসের ছেলে ইলিয়াস হাসানকে দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন। বাড়িতে ফেরার পর সবার ভালোবাসায় আমার স্ত্রী অভিভূত।’ 

রাকিব জানান, তাঁরা একে অপরকে বুঝতে বুঝতে প্রেমে পড়ে যান। বিয়ের আগে আলিসা ধর্মান্তরিত হতে রাজি হন। দুই পরিবারের সম্মতিতেই তাঁরা বিয়ে করেন। তিনি বলেন, নতুনভাবে বিয়ের উৎসব করবেন। এ দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী বিয়ের উৎসব হবে। আগামী ৯ মার্চ হবে গায়েহলুদ। ১০ মার্চ গ্রামবাসীর জন্য বউভাতের আয়োজন করা হয়েছে। 

রাকিবের বাবা মো. শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ইতালি থাকেন। এলাকায় তিনি ইতালি শহীদ নামে পরিচিত। শহীদুল জানান, ইতালি থাকাকালে ২০১১ সালে ছেলে রাকিবকে সেখানে নিয়ে যান। পরে রাকিব সেখান থেকে জার্মানিতে যান। বর্তমানে সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। জার্মান তরুণী আলিসাকে বিয়ে করার জন্য রাকিব সম্মতি চেয়েছিলেন। তাঁরা সানন্দে সম্মতি দেন। পুত্রবধূ ও নাতিকে দেখার জন্য তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে শনিবার ছেলে এসেছেন। পুত্রবধূর সঙ্গে তাঁর বান্ধবী জেনিও এসেছেন। 

শহীদুল ইসলাম বলেন, ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে প্রীতিভোজের আয়োজন করেছেন। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার মানুষ দল বেঁধে এসে ছেলের বউ ও নাতিকে দোয়া করছেন। 

গ্রামবাসী ও আত্মীয়স্বজনকে ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারেননি। এ জন্য গায়েহলুদ ও বউভাতের আয়োজন করেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত