Ajker Patrika

আগুন–লোহার সঙ্গে মিতালি

প্রতিনিধি, আমতলী (বরগুনা) 
আগুন–লোহার সঙ্গে মিতালি

আমতলীতে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন দুই নারী কামার। ক্যানসারে স্বামী মারা যাওয়ার পর এই দুই নারী কামার পেশা বেছে নিয়েছেন। কারণ তাঁদের স্বামীও কামার ছিলেন। পুরুষেরাই যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে নারীদের কামার পেশা বেছে নেওয়ায় লোকজনের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এই দুই নারী কামার আমতলী পৌর শহরের সদর রোডে লোহার জিনিসপত্র তৈরি করেন।

জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের সদর রোডের শ্যাম কর্মকারের ছেলে আশীষ কর্মকার ও অসীম কর্মকার। তাঁরা কামার শিল্পের কাজ করতেন। কিন্তু ২০১০ সালে আশীষ কর্মকার ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দুই বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০১২ সালে মারা যান তিনি। পরে স্বামীর পেশা ধরে রাখতে বৃদ্ধ শ্বশুর ও দেবর অসীম কর্মকারের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার কাজে সহযোগিতা করেন বিধবা ঝুমা। কিছুদিন পরই ফুসফুস ক্যানসারের আক্রান্ত হন অসীম কর্মকার। ৫ বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০১৯ সালে ৫ নভেম্বর তিনিও মারা যান। বিধবা হন পুতুল রানী কর্মকার। দুই ছেলেকে হারিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ শ্যাম কর্মকার (৮০)। মানুষের সাহায্য–সহযোগিতায় তারা কোনোমতে দিনাতিপাত করতে থাকেন। প্রায় বন্ধ হয়ে যায় তাঁদের কামার পেশা। এমন মুহূর্তে ঝুমা রানী কর্মকার ও পুতুল রানী কর্মকার কামার শিল্পের হাল ধরেন। দিনরাত অদম্য শ্রম দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন দা, বটি, কুঠার, হাতুড়ি, ছেনা, চাকু, খুন্তিসহ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করেন। আগুন ও লোহার সঙ্গে তাঁরা গড়ে তুলেছেন গভীর মিতালী। এ কাজ করেই তাদের পরিবারের ৭ সদস্যের সংসার চলে। এই কামার শিল্পের অর্থেই চলছে দুই বিধবার সন্তান অন্তু কর্মকার ও অন্তরা কর্মকারের লেখাপড়া। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে তাঁদের কাজ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এ কারণে তাঁরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

সরকারি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে তাঁরা আরও এগিয়ে যেতে পারবেন বলে দাবি করেন ঝুমা কর্মকার। 

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নারী কামার পুতুল রানী কামারশালায় বসে কাজ করছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বছর বেচাকেনা কম ছিল। তবে কোরবানি উপলক্ষে কিছুটা বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানান পুতুল রানী কর্মকার।

পুতুল রানী কর্মকার বলেন, ‘যতই কষ্ট হোক স্বামীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করব দুই জা মিলে। আমরা মিলে মিশে কাজ করি। কষ্ট হলেও ঝামেলাবিহীন জীবন দুই জায়ের।’

ঝুমা রানী কর্মকার বলেন, ‘যত দিন শক্তি সামর্থ্য আছে তত দিন স্বামীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। এখান থেকে সরে যাব না।’ 
পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, ‘দুই বিধবা নারী কামারকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত