পাপড়ি রহমান

বাদলার মরসুম এলেই ঘোড়াউত্রার জলে যেন কী এক রহস্য খেলে যায়। এমনিতেই বছর-কাবারি তার ভাব-সাবের তেমন অদল-বদল নাই। আর দশটা নদ-নদী যেভাবে চলে-ফেরে, ঘাড়-ঘুরিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে অন্য পথে ধায়—ঘোড়াউত্রাও তেমনি চলে। সারা বৎসর তেমন চেত-বেধ নাই, শুধু বাদলার মরসুম এলেই ভিন্নকথা। তখন আষাঢ়ে-জলধর আসমানে সামান্য উড়ল কি, তার ছায়া গাঙের জলে পড়ল কি—ঘোড়াউত্রায় তখন শুরু হয়ে যায় নানান কিসিম। ঘোড়াউত্রার এই রকম-সকম দেখে তারাকান্দার মানুষগুলান কেমন এক ভুলভুলাইয়াতে পড়ে। ওরা তখন আসমানের এন্তার মেঘ দেখবে, না ঘোড়াউত্রার জল দেখবে, ঘোড়াউত্রার জল দেখবে না আসমানের এন্তার মেঘ দেখবে, এই দোটানায় দুলতে দুলতে মতিবিভ্রমে পড়ে। তখন ওদের অস্থির মতির ভেতরে পূর্বের কাহিনি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং দিব্যি মনে পড়ে যায় রাহেলা বেগমের কথা। রাহেলা বেগমের দুই ছাওয়াল—করমালি-রহমালির কথাও তাদের মনে পড়ে। তারাকান্দার মানুষগুলার স্মৃতির বাক্সের ঢাকনা খুলে বেরিয়ে পড়ে বিস্মৃত যত কাহিনি।
আগুনে পুড়ে যাওয়া রাহেলার কয়লা-কয়লা দেহটির কথাও তখন ওদের মনে পড়ে। এমনকি জ্বলন্ত রাহেলার ঘোড়াউত্রার জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ার দৃশ্যটিও স্থির দেখতে পায়। পলকেই চক্ষের পর্দায় বিস্তর দৃশ্যের তালগোলে মনমরা হয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকে না। তাবৎ বিষণ্ণতার ভেতর তারা রাহেলা এবং ওর ছাওয়াল দুইটাকেই কেবল দেখতে থাকে।
এতসব দৃশ্যরাজির সঙ্গে ঘোড়াউত্রাও একেবারে কলকল করে মিলিত হয়। অবশ্য ঘোড়াউত্রা তখন আর টানের মরসুমের ঘোড়াউত্রা থাকে না। তার উদরের ভেতর জল খলবলিয়ে গহিন হতে থাকে। আর সেই জলে বড় বড় ঢেউ ওঠে। ঢেউ উঠে পরমুহূর্তেই তা ভেঙে পড়ে। ফের ঢেউ ওঠে। ফের ভাঙে। ঢেউয়ের ক্রমাগত ওঠা-নামায় জলের ওপর শুভ্র ফেনার স্তূপ জমে। ঢেউয়ের মাথায় মাথায় তখন শুভ্র ফেনার রাশি। যেন সমুদ্দুর হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছে ঘোড়াউত্রার পেটে। আর তপ্ত বালুতে অজস্র খই ভেজে ভাসিয়ে দিয়েছে জলের ওপর। এই খই-ভাসা-ঢেউ রোয়াব দেখিয়ে প্রচণ্ড বেগে ফুলে ওঠে। বেড়ে যায় ঘোড়াউত্রার জলের গভীরতা। দ্রুত বদলাতে থাকে নদীর রং-সুরত। রোষে রোষে সে যেন সব তলিয়ে দিতে চায়। জলের এই রকম উন্মত্ততায় তারাকান্দার মানুষগুলো ফের নতুন করে বিভ্রমে ঢুকে পড়ে এবং এই বিভ্রমের সুযোগে সত্যি-সত্যিই বাদলার মরসুম এসে পড়ে। তারাকান্দার মানুষগুলা সত্যি-সত্যিই কূল নাই কিনার নাই অবস্থার ভেতর পতিত হয়। কিন্তু গাঙের কি এইসবে ভ্রক্ষেপ থাকে নাকি? সে তখন আপন খেলায় মত্ত। প্রচণ্ড রাগে উন্মত্ত। দেহের ভেতর ক্রোধের বিষভাণ্ড জমিয়ে গোখরা সাপের মতো ফণা তোলে সে। অতঃপর ধেয়ে আসে তীরে। মাটিতে বিষ ঢেলে মুহূর্তে ছুটে যায় মধ্যনদীতে। ফের সে দেহে বিষ সঞ্চয় করে এবং ছুটে আসে পাড়ে। জলের তীক্ষ্ণ ছোবলে বিষময় হতে হতে একসময় মাটিতে ধস নামে। বড় বড় চাঙর ভেঙে মিশে যায় জলস্রোতে।
এক্ষণে তারাকান্দার মানুষগুলা যেন হুঁশে ফেরে। নিজেদের ভিটেমাটি বাঁচানোর দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়ে। ওরা তো জানে ঘোড়াউত্রার থাবা তো আর যেই-সেই থাবা নয়। দানোর মতো বিশাল সেই থাবা। একেকটা থাবায় পাড়ের মাটি ভেঙেচুরে গুলিয়ে যায় জলের সঙ্গে। তখন গাঙের জল হয়ে ওঠে দধির মতো ঘন ও ঘোলাটে। কাদাগোলানো-জল দেখে কে বলবে বাদল নামার পূর্বে এই জলই ছিল স্বচ্ছ-টলটলে; একেবারে ডালিমের দানার মতো। তখন তুমি যদি সামান্য ঝুঁকে পড়ো ঘোড়াউত্রার বুকে, তোমার বদনখানি দিব্যি ফুটে উঠবে ওই জলের আয়নায়। অথচ দেখো, বাদল নামল কি জল একেবারে ভোল পাল্টে দধিবর্ণ হয়ে উঠল। তখন তুমি শতবার ঝুঁকে পড়লেই কী? তোমার সুরত তখন আবছা। ঘোড়াউত্রার নিজের চেহারাও তখন আবছা। আবছা নয়তো কী? কূল নাই কিনার নাই অবস্থার ভেতর তুমি কি বা ঠাহর করতে পারবে? নিজের সুরত নাকি ঘোড়াউত্রার সুরত?
আদতে এই মরার আষাঢ় না শ্রাবণে নদীর জোয়ানকি যত স্পষ্ট হয়, ততই ভজঘট ঘটে। কারণ এই মরার আষাঢ় না শ্রাবণেই তারাকান্দার জোয়ান-মরদেরা নাও ভাসিয়ে চলে যায় দূর-দূরান্তে। নিজ গেরামের কইন্যাদের চেহারা-ছবি ওদের কাছে পানসে হয়ে ওঠে। ওরা তখন চায় দিঘল চুলের কইন্যা। চায় বাঁশির মতো সুচিক্কণ নাক-নকশার ঘরনি। চায়—রইদ পড়লে কাঞ্চনের মতো চিকচিকিয়ে উঠবে যার গতর, সেই রকম বিয়ার পাত্রী। উইন্যা মাসে এইসব হবার নয়। তখন তো পায়ে-হাঁটা পথ। মাটির অমসৃণ দাঁতের ওপর পা ফেলে যাতায়াত করতে করতে ওরা ঘেমেনেয়ে ওঠে। অথবা ধুলায় ধুলাকার হয়ে ওঠে ব্যসন-বসন। ফলে বাইস্যা মাসেই ওরা ভরসা পায়। বাইস্যা মাস এলেই ওরা ঘটক পাঠায় দূর-দূর-গেরামে। বৈঠা মেরে জলের ঘুঙুর বাজিয়ে রাঙাবউ নিয়ে ঘরে ফেরে। ছইওয়ালা নাওগুলা তখন ঘেরা থাকে শাড়ির পর্দায়। আমাদের মিজান মিয়াও নাওয়ে শাড়ির পর্দার-ঘের দিয়েই বউ এনেছিল। আর আলেকান্দার কইন্যা রাহেলা ছিল বেজায় সুরত। রাহেলার ছিল দিঘল কেশরাজি। সোনালি গাত্রবর্ণ আর বাঁশির মতো সুচিক্কণ নাক-নকশা। মিজান মিয়ার সৌষ্ঠবের বউ দেখার জন্য তারাকান্দার মানুষগুলা দল বেঁধে এসেছিল।
আর ওই বছরই পরথম সকলে ভুলভুলাইয়ার ভেতর পড়েছিল। ঘোড়াউত্রার মতিগতি ওদের বেদিশা করে দিয়েছিল। ওই বারই প্রথমবারের মতো চিরচেনা গাঙ বিষঢেউ ভাসিয়ে দিয়েছিল। আর ফণা তুলে আঘাত করেছিল নদীপারের জমিনের ওপর। এতে করে তারাকান্দার বেশ কিছু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে ঘোড়াউত্রা লেজ আছড়িয়ে সরে পড়েছিল অন্য এক অচেনা পথে। তবে ঘোড়াউত্রার এতসব কারসাজি মিজান মিয়ার সদ্য দাম্পত্যে আঁচড় কাটতে পারে নাই। ঘোড়াউত্রা বিফল হলেও মিজান মিয়ার মা হালিমা বেগম বিফল হয় নাই। বিফল হয় নাই কইতরি বেগমও। দুইজনে তক্কে তক্কে ছিল রাহেলা বেগমকে ক্ষতিগ্রস্ত করার। রাহেলা বেগমের পিছুলাগা ছাড়া তাদের আর করারও কিছু ছিল না। কইতরি বেগমের স্বামী সেজান মিয়ার বহুদিন কোনো খবরাখবর ছিল না। ঢাকা শহরে কাজের ধান্দায় গিয়ে সে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। কইতরি বেগমও বসে থাকার পাত্রী নয়। সেজান মিয়ার পেছনে লোক লাগিয়ে খবর এনেছিল শহুরে-ছলাকলা জানা এক মাইয়ালোক সেজান মিয়ার চক্ষে ভেলকি লাগিয়েছে এবং বলাই বাহুল্য সেজান মিয়া কইতরি বেগমকে ভুলে গেছে। কিন্তু কইতরি বেগম নিজ স্বামীকে ভুলতে পারে নাই। ফলে সে হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ ঈর্ষাপর এক নারী, যা তারাকান্দার মানুষগুলা ভালো চক্ষে দেখে নাই।
কইতরি বেগমের তীব্র ঈর্ষার ভেতর থেকেও মিজান মিয়া আর রাহেলা বেগমের মিলন হলো। আর জন্ম নিল করমালি। কইতরির নিজের ছাওয়াল নাই, অন্যের ছাওয়াল তাকে দুঃখী করবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে কইতরি বেগম এইবার দুঃখী হলো। ওদিকে রাহেলা বেগম পুত্রের মুখ দেখে ভাবল আর কী বা লাগে এই দুনিয়াদারিতে?
কিন্তু দুনিয়াদারি করতে গেলে ম্যালা কিছুই লাগে। রাহেলা বেগম তখনো বুঝতে পারে নাই দুনিয়াদারির উদর হৈলো আ-মাপা। এই আ-মাপা উদর ভরতে ম্যালা কিছুই লাগে। রাহেলা বেগম এটা বুঝতে পারে, যখন দ্বিতীয় ছাওয়াল রহমালি জন্ম নেয়। আর সংসারে বাড়তে থাকে অভাব। মিজান মিয়া রাতদিন পরিশ্রম করে। জমি বর্গা করে, খেত নিড়িয়ে, মাটি কেটেও সাত পুষ্যির পেট সে ভরাতে পারে না। তখন কী আর করা? বড় ভাই সেজান মিয়ার পথ ধরে মিজান মিয়াও শহরমুখী হয়। আর মোটামুটি মজুরিতে গার্মেন্টসের মজুর বনে যায়।
এদিকে তারাকান্দার রাহেলা বেগমের অস্থির সময় কাটে। মিজান মিয়াকে সে সত্যিই বড় ভালোবাসে। ফলে খুব দ্রুতই হালিমা বেগম, কইতরি বেগম আর আলতাফ মিয়ার চক্ষুশূল হয় সে।
২
ঘোড়াউত্রার রহস্য বোঝা সত্যি মুশকিল হয়ে পড়ে। বর্ষা-শীতের ধন্দ ঘোড়াউত্রাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আষাঢ়ে জল ঝরল কি তুখাস্রোতে ভাসতে থাকে তারাকান্দার মানুষগুলা। আর মাছেরা সাঁতার কাটতে কাটতে ভেসে ওঠে জলের ওপর। আবার টানের মরসুমেই কিনা মাছেরা লুকিয়ে পড়ে জল-কাদার গভীরে। ঘোড়াউত্রার বালু কিরকিরে পাড়ে তখন মাছেদের আনাগোনা এক্কেবারে নাই। কমে যাওয়া থুম-ধরা-জলে বুরবুরি তোলে আর লেজ নাচিয়ে ভালোই কাটিয়ে দেয় শীতাচ্ছন্ন-কাল। তারাকান্দার মিজান মিয়া শহরবাসী হওয়ার পর রাহেলা সংসারের কাজে আরো নিমগ্ন হয়। হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে শ্বশুর-শাশুড়ির মন জোগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছুতেই তাদের তুষ্ট করতে পারে না। তাদের দেওয়া গঞ্জনা থেকে রাহেলা বেগমের যেন কোনো পরিত্রাণ নাই। ফলে সামান্য ক্ষণের জন্য আড়াল খুঁজতে সে এসে বসে ঘোড়াউত্রার পাড়ে। মাঝগাঙের ঢেউ তখন আরো উত্তাল হয়। একলা হয়ে রাহেলা গাঙের কাছে দুঃখের কথা কইবে, এমন উপায় নাই। মাকে খুঁজতে খুঁজতে করমালি আর রহমালিও গাঙের পাড়ে উপস্থিত হয়। ততক্ষণে পাড়ে আসা ঢেউগুলা ফিরে গেছে মধ্য-নদীতে। ঘোড়াউত্রাকে তখন খুব শান্ত আর করুণ দেখায়। করমালি আর রহমালি ছিপ ফেলে বসে যায় শান্ত জলের ধারে। দুই-চারটা পুঁটি-ইঁচা-কই বড়শির আধার গিলে আটকা পড়ে। একটা কই টানে তুলেই ছাওয়ালরা উল্লাসে চিৎকার করে—
‘মাগো, দেখছুনি, মাছ পড়ছে বড়শিতে।’
‘হ, দেখছি।’
‘আইজ তাইলে কই মাছের সালুন রাইন্ধ্যা দিবা।’
‘আইচ্ছা দিমুনে।’
বলেই রাহেলা আনমনা হয়ে যায়। হয়তো মিজান মিয়ার কথা মনে পড়ে। মিজান মিয়ার চলে যাওয়ার ক্ষণটি চোখে ভাসে। রাহেলার কাছে সোয়ামি হৈলো বটবিরিক্ষি। হেরার ছায়া মাথার ওপরে থাকলে জগতের কেউ-ই আর উপ্তাকথা কইতে পারে না। মিজান মিয়ার শহরবাসের পর শ্বশুর-শাশুড়ি আর বড় জায়ের দেওয়া লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় সে প্রায় পাগলদশায় পৌঁছেছে। ওইসব কটুকথা আর অপমান ভুলতেই রাহেলা ঘনঘন গাঙের পাড়ে আসে। গাঙের জলখেলা ওর ভালো লাগে। মন জুড়ায়। ঢেউ আসে আর যায়। যায় আর আসে। ঢেউয়ের আসা-যাওয়া দেখতে দেখতেই রাহেলা আপন মনে গুনগুন করে-
দূরে চাকরিতে প্রাণবন্ধু যাইও না-রে
তুমি গেলা দূর দেশে বন্ধু
আমারে ছাড়িয়া
যাইবার কালে নিষ্ঠুর বন্ধু
না-চাইল রে ফিরিয়া রে...
রাহেলার সুর ছড়িয়ে পড়ে গাঙের জলের ওপর। ঘোড়াউত্রা কিনা হঠাৎ খেপে ওঠে। খেপতে খেপতে জলের স্তম্ভ বানিয়ে ফেলে। একসময় তা ভেঙে পড়লে বিশাল ঢেউ পাড়ে এসে আছড়ে পড়ে। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সামান্য আলো নিয়ে রাতের আকাশে জেগে ওঠে দু-চারটা তারা। আর রাহেলা বিষণ্ণ মন নিয়ে বাড়ি ফেরে।
এমনই এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে রাহেলা ক্লান্ত বোধ করে। ওর চোখ জ্বালা করে ঝাঁপিয়ে জ্বর আসে। প্রচণ্ড তাপে মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রকট যন্ত্রণার ভেতর রাহেলা স্বপ্ন দেখে মিজান মিয়া বাড়ি ফিরে এসেছে। রাহেলার জন্য কিনে এনেছে চওড়া পাড়ের ঢাকাই শাড়ি। করমালি-রহমালির জন্য খেলনাগাড়ি, স্বাদের বিস্কুট।
শাড়ি দেখে হালিমা বেগম ছেলের ওপর রেগে ওঠে!
‘হুদাই ট্যাকা-পয়সা ভাঙছস। শাড়ি আননের কাম কী? হের পিন্ধনের কি শাড়ি নাই?’
মিজান মিয়া নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। হালিমা বেগম আরও রেগে ওঠে। তখন অন্ধকার আরও গাঢ় হয়। ঘরে কেউ আলো জ্বালে না।
হালিমা বেগম তখন কুৎসিত ভাষায় গালাগালি শুরু করে—
‘নবাবের বেটি, সুযোগ পাইলেই হুইয়া-বইসা খাইবার চায়। সন্ধ্যা পারায়া গেছে কুন সমুয়, বাত্তিডাও হে দিয়ার পারে না?’
হালিমা বেগমের এমত চিলচিৎকারে রাহেলার জ্বরঘোর উবে যায়। সে অন্ধকারেই চোখ মেলে তাকাতে চেষ্টা করে। হালিমা বেগমের সাথে কইতরি বেগমও গলা মেলায়। আলতাফ মিয়াও ব্যাপক হম্বিতম্বি শুরু করে।
করমালি-রহমালিও মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েছিল। প্রচণ্ড হাউকাউয়ের শব্দে ওরা জেগে ওঠে।
হালিমা বেগম ততক্ষণে বড় বোতল ভরে কেরোসিন তেল নিয়ে আসে। সে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করে। কারণ রাহেলা বেগমের ঘরে অন্ধকার থইথই করে। এদিকে হালিমা বেগম কেরোসিন তেল ঢেলে দেয় রাহেলার শরীরে। হয়তো অন্ধকারের ভুলভুলাইয়ার ভেতর পড়ে হালিমা বেগম এই কাজ করে। দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বলে উঠলে তা রাহেলা বেগমকে পেঁচিয়ে ধরে। আগুন আর তেল রাহেলার শরীরে তা-থৈ তা-থৈ নৃত্য করে। পুড়ে কয়লা হতে হতে রাহেলা চিৎকার দিয়ে কাঁদে। কিন্তু আগুন নেভানোর চেষ্টায় কেউ এগিয়ে আসে না। তখন সে ঘোড়াউত্রার দিকে দৌড়ায়। রাহেলা বেগম দৌড় শুরু করলেই জোর হাওয়া বইতে শুরু করে। রাহেলা জ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘোড়াউত্রার জলে। তখন প্রচণ্ড ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। দূরে ভেসে যায় রাহেলা—বহু দূরে।
হয়তোবা আলেকান্দা হয়ে ওর শরীর ভেসে যেতে থাকে। অতঃপর কয়লা হয়ে যাওয়া রাহেলার পোড়া দেহ তারাকান্দার মানুষগুলোর চক্ষের আড়াল হয়ে যায়।
৩
ঘোড়াউত্রা নদীতে রাহেলার পোড়া দেহ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর তেমন কিছুই আর ঘটে না। শুধু তারাকান্দার মানুষগুলা আহারে-বিহারে করে সারা বছর কাটিয়ে দেয়।
তত দিনে আসমানে ফের আষাঢ়ে-জলধর ঘনায়মান হয়। দুই-এক ফোঁটা জল ঘোড়াউত্রায় ঝরে পড়ে কি পড়ে না। অথচ গাঙ তখনই ফুঁসে ওঠে। ফুঁসতে ফুঁসতে জলস্তম্ভের আকার পায়। আর পরক্ষণেই তা ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়েই ঢেউ হয়ে ছুটে আসে তীরে। তখন মাটির বড়-বড় চাঙর ভেঙে মিশতে থাকে জলস্রোতে। আর তারাকান্দার মানুষগুলার অবাক চোখের সম্মুখে ঘোড়াউত্রার জল ফের ঘোলা হতে থাকে। সেই ঘোলাজলের ওপর ভুস করে ভেসে ওঠে এক অতিকায় মাছ! আগুনরাঙা আগুনের মাছ। বিশাল শরীর, কাঁটাওয়ালা দিঘল ল্যাঞ্জা আর উড়োজাহাজের ডানার মতো তার পাখনা। সে তার অগ্নিরঙা দেহ নিয়ে ঘোড়াউত্রার গভীর জলে ডুব দেয়। ফের ভেসে ওঠে। তখন জলের ওপর আগুনের হলকা দেখা দেয়। আগুনমাছ পরক্ষণই জলের তলায় তলিয়ে যায়। হয়তো তখন ডাঙার ঘর-সংসারের কথা মনে পড়ে। বহুদূরে শহরে থাকা সোয়ামির কথা মনে পড়ে। ভাটির পথ তার কাছে অচেনা মনে হয়। বিপৎসংকুল মনে হয়। ফলে সেই আগুনমাছ উপ্তাপথে ছুটতে শুরু করে। এই উপ্তাপথ উজানের পথ। এই পথের হদিস জানা নাই। এই পথ দুর্গম; বন্ধুর। আগুনমাছ এই উপ্তাপথেই ছুটতে শুরু করে। তার কাঁটাওয়ালা ল্যাঞ্জার আঘাতে জলে রুপালি ঝিলিক ওঠে। আগুনমাছের পিছু পিছু গাঙের সমস্ত মাছ ছুটতে শুরু করে। এরা সকলেই বেপথু হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ উজানমুখী ছুটতে ছুটতে আর কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। তারা ছুটে যায় নদীর উৎসমূল অভিমুখে। পাহাড়ের বুক চিরে যেখানে জন্ম হয়েছে নদীর, সেখানে পৌঁছে খুশিতে উল্লাস করে ওঠে অগ্নিরঙা আগুনমাছ। তারপর ডিম দেয়। আর মরে যায়। সেই ডিম থেকে জন্ম নেওয়া মাছগুলো ফের স্রোতের টানে ভেসে ভেসে ভাটিতে আসে। এই ভাটিতে বাস করে তারাকান্দার মানুষগুলা। যারা বাদলার মরসুম এলেই আগুনমাছের ছুটে যাওয়া দেখে। দেখে মূক-বধির হয়ে যায়। তবুও তারা বৃষ্টি নামলেই ওই আগুনমাছের অপেক্ষা করে। আগুনমাছের আগুন ছড়িয়ে ছুটে যাওয়া দেখতে ওরা ভালোবাসে। হয়তো মনে মনে ভাবে, ওই আগুনরঙা মাছ, যার নাম রাহেলা। শাশুড়ির অত্যাচারে জ্বলন্ত দেহ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল ঘোড়াউত্রার জলে। অতঃপর নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিবছরই বানের জল আসামাত্রই সে জ্বলন্ত শরীর নিয়ে ভেসে ওঠে গাঙে। আর ঘোড়াউত্রার জলকাদায় ভুলভুলাইয়া মিশিয়ে দিয়ে উজানমুখী হয়। আগুনমাছের পিছু পিছু গাঙের মাছেরা বেপথু হয়। এই বেপথু মাছেরা কখনো তাদের জন্মমাটি খুঁজে পায় কি না কে জানে?
জলমগ্ন হতে হতে বউজীবনের কথা ওদের মনে পড়ে। হয়তো ওই কথা মনে করেই ওরা অগ্নিরাঙা হয়ে ওঠে।
আগুনমাছদের এইসব কিস্সা-কাহিনি নিয়ে ঘোড়াউত্রা নিরন্তর বয়ে চলে। তবে ঘোড়াউত্রার গন্তব্য ঠাহর করা যায় না। উজান না ভাটি? ভাটি না উজান? তারাকান্দার মানুষগুলা ঘোড়াউত্রার ভুলভুলাইয়ার ভেতর ক্রমাগত দুলতে থাকে...!

বাদলার মরসুম এলেই ঘোড়াউত্রার জলে যেন কী এক রহস্য খেলে যায়। এমনিতেই বছর-কাবারি তার ভাব-সাবের তেমন অদল-বদল নাই। আর দশটা নদ-নদী যেভাবে চলে-ফেরে, ঘাড়-ঘুরিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে অন্য পথে ধায়—ঘোড়াউত্রাও তেমনি চলে। সারা বৎসর তেমন চেত-বেধ নাই, শুধু বাদলার মরসুম এলেই ভিন্নকথা। তখন আষাঢ়ে-জলধর আসমানে সামান্য উড়ল কি, তার ছায়া গাঙের জলে পড়ল কি—ঘোড়াউত্রায় তখন শুরু হয়ে যায় নানান কিসিম। ঘোড়াউত্রার এই রকম-সকম দেখে তারাকান্দার মানুষগুলান কেমন এক ভুলভুলাইয়াতে পড়ে। ওরা তখন আসমানের এন্তার মেঘ দেখবে, না ঘোড়াউত্রার জল দেখবে, ঘোড়াউত্রার জল দেখবে না আসমানের এন্তার মেঘ দেখবে, এই দোটানায় দুলতে দুলতে মতিবিভ্রমে পড়ে। তখন ওদের অস্থির মতির ভেতরে পূর্বের কাহিনি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং দিব্যি মনে পড়ে যায় রাহেলা বেগমের কথা। রাহেলা বেগমের দুই ছাওয়াল—করমালি-রহমালির কথাও তাদের মনে পড়ে। তারাকান্দার মানুষগুলার স্মৃতির বাক্সের ঢাকনা খুলে বেরিয়ে পড়ে বিস্মৃত যত কাহিনি।
আগুনে পুড়ে যাওয়া রাহেলার কয়লা-কয়লা দেহটির কথাও তখন ওদের মনে পড়ে। এমনকি জ্বলন্ত রাহেলার ঘোড়াউত্রার জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ার দৃশ্যটিও স্থির দেখতে পায়। পলকেই চক্ষের পর্দায় বিস্তর দৃশ্যের তালগোলে মনমরা হয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকে না। তাবৎ বিষণ্ণতার ভেতর তারা রাহেলা এবং ওর ছাওয়াল দুইটাকেই কেবল দেখতে থাকে।
এতসব দৃশ্যরাজির সঙ্গে ঘোড়াউত্রাও একেবারে কলকল করে মিলিত হয়। অবশ্য ঘোড়াউত্রা তখন আর টানের মরসুমের ঘোড়াউত্রা থাকে না। তার উদরের ভেতর জল খলবলিয়ে গহিন হতে থাকে। আর সেই জলে বড় বড় ঢেউ ওঠে। ঢেউ উঠে পরমুহূর্তেই তা ভেঙে পড়ে। ফের ঢেউ ওঠে। ফের ভাঙে। ঢেউয়ের ক্রমাগত ওঠা-নামায় জলের ওপর শুভ্র ফেনার স্তূপ জমে। ঢেউয়ের মাথায় মাথায় তখন শুভ্র ফেনার রাশি। যেন সমুদ্দুর হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছে ঘোড়াউত্রার পেটে। আর তপ্ত বালুতে অজস্র খই ভেজে ভাসিয়ে দিয়েছে জলের ওপর। এই খই-ভাসা-ঢেউ রোয়াব দেখিয়ে প্রচণ্ড বেগে ফুলে ওঠে। বেড়ে যায় ঘোড়াউত্রার জলের গভীরতা। দ্রুত বদলাতে থাকে নদীর রং-সুরত। রোষে রোষে সে যেন সব তলিয়ে দিতে চায়। জলের এই রকম উন্মত্ততায় তারাকান্দার মানুষগুলো ফের নতুন করে বিভ্রমে ঢুকে পড়ে এবং এই বিভ্রমের সুযোগে সত্যি-সত্যিই বাদলার মরসুম এসে পড়ে। তারাকান্দার মানুষগুলা সত্যি-সত্যিই কূল নাই কিনার নাই অবস্থার ভেতর পতিত হয়। কিন্তু গাঙের কি এইসবে ভ্রক্ষেপ থাকে নাকি? সে তখন আপন খেলায় মত্ত। প্রচণ্ড রাগে উন্মত্ত। দেহের ভেতর ক্রোধের বিষভাণ্ড জমিয়ে গোখরা সাপের মতো ফণা তোলে সে। অতঃপর ধেয়ে আসে তীরে। মাটিতে বিষ ঢেলে মুহূর্তে ছুটে যায় মধ্যনদীতে। ফের সে দেহে বিষ সঞ্চয় করে এবং ছুটে আসে পাড়ে। জলের তীক্ষ্ণ ছোবলে বিষময় হতে হতে একসময় মাটিতে ধস নামে। বড় বড় চাঙর ভেঙে মিশে যায় জলস্রোতে।
এক্ষণে তারাকান্দার মানুষগুলা যেন হুঁশে ফেরে। নিজেদের ভিটেমাটি বাঁচানোর দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়ে। ওরা তো জানে ঘোড়াউত্রার থাবা তো আর যেই-সেই থাবা নয়। দানোর মতো বিশাল সেই থাবা। একেকটা থাবায় পাড়ের মাটি ভেঙেচুরে গুলিয়ে যায় জলের সঙ্গে। তখন গাঙের জল হয়ে ওঠে দধির মতো ঘন ও ঘোলাটে। কাদাগোলানো-জল দেখে কে বলবে বাদল নামার পূর্বে এই জলই ছিল স্বচ্ছ-টলটলে; একেবারে ডালিমের দানার মতো। তখন তুমি যদি সামান্য ঝুঁকে পড়ো ঘোড়াউত্রার বুকে, তোমার বদনখানি দিব্যি ফুটে উঠবে ওই জলের আয়নায়। অথচ দেখো, বাদল নামল কি জল একেবারে ভোল পাল্টে দধিবর্ণ হয়ে উঠল। তখন তুমি শতবার ঝুঁকে পড়লেই কী? তোমার সুরত তখন আবছা। ঘোড়াউত্রার নিজের চেহারাও তখন আবছা। আবছা নয়তো কী? কূল নাই কিনার নাই অবস্থার ভেতর তুমি কি বা ঠাহর করতে পারবে? নিজের সুরত নাকি ঘোড়াউত্রার সুরত?
আদতে এই মরার আষাঢ় না শ্রাবণে নদীর জোয়ানকি যত স্পষ্ট হয়, ততই ভজঘট ঘটে। কারণ এই মরার আষাঢ় না শ্রাবণেই তারাকান্দার জোয়ান-মরদেরা নাও ভাসিয়ে চলে যায় দূর-দূরান্তে। নিজ গেরামের কইন্যাদের চেহারা-ছবি ওদের কাছে পানসে হয়ে ওঠে। ওরা তখন চায় দিঘল চুলের কইন্যা। চায় বাঁশির মতো সুচিক্কণ নাক-নকশার ঘরনি। চায়—রইদ পড়লে কাঞ্চনের মতো চিকচিকিয়ে উঠবে যার গতর, সেই রকম বিয়ার পাত্রী। উইন্যা মাসে এইসব হবার নয়। তখন তো পায়ে-হাঁটা পথ। মাটির অমসৃণ দাঁতের ওপর পা ফেলে যাতায়াত করতে করতে ওরা ঘেমেনেয়ে ওঠে। অথবা ধুলায় ধুলাকার হয়ে ওঠে ব্যসন-বসন। ফলে বাইস্যা মাসেই ওরা ভরসা পায়। বাইস্যা মাস এলেই ওরা ঘটক পাঠায় দূর-দূর-গেরামে। বৈঠা মেরে জলের ঘুঙুর বাজিয়ে রাঙাবউ নিয়ে ঘরে ফেরে। ছইওয়ালা নাওগুলা তখন ঘেরা থাকে শাড়ির পর্দায়। আমাদের মিজান মিয়াও নাওয়ে শাড়ির পর্দার-ঘের দিয়েই বউ এনেছিল। আর আলেকান্দার কইন্যা রাহেলা ছিল বেজায় সুরত। রাহেলার ছিল দিঘল কেশরাজি। সোনালি গাত্রবর্ণ আর বাঁশির মতো সুচিক্কণ নাক-নকশা। মিজান মিয়ার সৌষ্ঠবের বউ দেখার জন্য তারাকান্দার মানুষগুলা দল বেঁধে এসেছিল।
আর ওই বছরই পরথম সকলে ভুলভুলাইয়ার ভেতর পড়েছিল। ঘোড়াউত্রার মতিগতি ওদের বেদিশা করে দিয়েছিল। ওই বারই প্রথমবারের মতো চিরচেনা গাঙ বিষঢেউ ভাসিয়ে দিয়েছিল। আর ফণা তুলে আঘাত করেছিল নদীপারের জমিনের ওপর। এতে করে তারাকান্দার বেশ কিছু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে ঘোড়াউত্রা লেজ আছড়িয়ে সরে পড়েছিল অন্য এক অচেনা পথে। তবে ঘোড়াউত্রার এতসব কারসাজি মিজান মিয়ার সদ্য দাম্পত্যে আঁচড় কাটতে পারে নাই। ঘোড়াউত্রা বিফল হলেও মিজান মিয়ার মা হালিমা বেগম বিফল হয় নাই। বিফল হয় নাই কইতরি বেগমও। দুইজনে তক্কে তক্কে ছিল রাহেলা বেগমকে ক্ষতিগ্রস্ত করার। রাহেলা বেগমের পিছুলাগা ছাড়া তাদের আর করারও কিছু ছিল না। কইতরি বেগমের স্বামী সেজান মিয়ার বহুদিন কোনো খবরাখবর ছিল না। ঢাকা শহরে কাজের ধান্দায় গিয়ে সে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। কইতরি বেগমও বসে থাকার পাত্রী নয়। সেজান মিয়ার পেছনে লোক লাগিয়ে খবর এনেছিল শহুরে-ছলাকলা জানা এক মাইয়ালোক সেজান মিয়ার চক্ষে ভেলকি লাগিয়েছে এবং বলাই বাহুল্য সেজান মিয়া কইতরি বেগমকে ভুলে গেছে। কিন্তু কইতরি বেগম নিজ স্বামীকে ভুলতে পারে নাই। ফলে সে হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ ঈর্ষাপর এক নারী, যা তারাকান্দার মানুষগুলা ভালো চক্ষে দেখে নাই।
কইতরি বেগমের তীব্র ঈর্ষার ভেতর থেকেও মিজান মিয়া আর রাহেলা বেগমের মিলন হলো। আর জন্ম নিল করমালি। কইতরির নিজের ছাওয়াল নাই, অন্যের ছাওয়াল তাকে দুঃখী করবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে কইতরি বেগম এইবার দুঃখী হলো। ওদিকে রাহেলা বেগম পুত্রের মুখ দেখে ভাবল আর কী বা লাগে এই দুনিয়াদারিতে?
কিন্তু দুনিয়াদারি করতে গেলে ম্যালা কিছুই লাগে। রাহেলা বেগম তখনো বুঝতে পারে নাই দুনিয়াদারির উদর হৈলো আ-মাপা। এই আ-মাপা উদর ভরতে ম্যালা কিছুই লাগে। রাহেলা বেগম এটা বুঝতে পারে, যখন দ্বিতীয় ছাওয়াল রহমালি জন্ম নেয়। আর সংসারে বাড়তে থাকে অভাব। মিজান মিয়া রাতদিন পরিশ্রম করে। জমি বর্গা করে, খেত নিড়িয়ে, মাটি কেটেও সাত পুষ্যির পেট সে ভরাতে পারে না। তখন কী আর করা? বড় ভাই সেজান মিয়ার পথ ধরে মিজান মিয়াও শহরমুখী হয়। আর মোটামুটি মজুরিতে গার্মেন্টসের মজুর বনে যায়।
এদিকে তারাকান্দার রাহেলা বেগমের অস্থির সময় কাটে। মিজান মিয়াকে সে সত্যিই বড় ভালোবাসে। ফলে খুব দ্রুতই হালিমা বেগম, কইতরি বেগম আর আলতাফ মিয়ার চক্ষুশূল হয় সে।
২
ঘোড়াউত্রার রহস্য বোঝা সত্যি মুশকিল হয়ে পড়ে। বর্ষা-শীতের ধন্দ ঘোড়াউত্রাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আষাঢ়ে জল ঝরল কি তুখাস্রোতে ভাসতে থাকে তারাকান্দার মানুষগুলা। আর মাছেরা সাঁতার কাটতে কাটতে ভেসে ওঠে জলের ওপর। আবার টানের মরসুমেই কিনা মাছেরা লুকিয়ে পড়ে জল-কাদার গভীরে। ঘোড়াউত্রার বালু কিরকিরে পাড়ে তখন মাছেদের আনাগোনা এক্কেবারে নাই। কমে যাওয়া থুম-ধরা-জলে বুরবুরি তোলে আর লেজ নাচিয়ে ভালোই কাটিয়ে দেয় শীতাচ্ছন্ন-কাল। তারাকান্দার মিজান মিয়া শহরবাসী হওয়ার পর রাহেলা সংসারের কাজে আরো নিমগ্ন হয়। হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে শ্বশুর-শাশুড়ির মন জোগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছুতেই তাদের তুষ্ট করতে পারে না। তাদের দেওয়া গঞ্জনা থেকে রাহেলা বেগমের যেন কোনো পরিত্রাণ নাই। ফলে সামান্য ক্ষণের জন্য আড়াল খুঁজতে সে এসে বসে ঘোড়াউত্রার পাড়ে। মাঝগাঙের ঢেউ তখন আরো উত্তাল হয়। একলা হয়ে রাহেলা গাঙের কাছে দুঃখের কথা কইবে, এমন উপায় নাই। মাকে খুঁজতে খুঁজতে করমালি আর রহমালিও গাঙের পাড়ে উপস্থিত হয়। ততক্ষণে পাড়ে আসা ঢেউগুলা ফিরে গেছে মধ্য-নদীতে। ঘোড়াউত্রাকে তখন খুব শান্ত আর করুণ দেখায়। করমালি আর রহমালি ছিপ ফেলে বসে যায় শান্ত জলের ধারে। দুই-চারটা পুঁটি-ইঁচা-কই বড়শির আধার গিলে আটকা পড়ে। একটা কই টানে তুলেই ছাওয়ালরা উল্লাসে চিৎকার করে—
‘মাগো, দেখছুনি, মাছ পড়ছে বড়শিতে।’
‘হ, দেখছি।’
‘আইজ তাইলে কই মাছের সালুন রাইন্ধ্যা দিবা।’
‘আইচ্ছা দিমুনে।’
বলেই রাহেলা আনমনা হয়ে যায়। হয়তো মিজান মিয়ার কথা মনে পড়ে। মিজান মিয়ার চলে যাওয়ার ক্ষণটি চোখে ভাসে। রাহেলার কাছে সোয়ামি হৈলো বটবিরিক্ষি। হেরার ছায়া মাথার ওপরে থাকলে জগতের কেউ-ই আর উপ্তাকথা কইতে পারে না। মিজান মিয়ার শহরবাসের পর শ্বশুর-শাশুড়ি আর বড় জায়ের দেওয়া লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় সে প্রায় পাগলদশায় পৌঁছেছে। ওইসব কটুকথা আর অপমান ভুলতেই রাহেলা ঘনঘন গাঙের পাড়ে আসে। গাঙের জলখেলা ওর ভালো লাগে। মন জুড়ায়। ঢেউ আসে আর যায়। যায় আর আসে। ঢেউয়ের আসা-যাওয়া দেখতে দেখতেই রাহেলা আপন মনে গুনগুন করে-
দূরে চাকরিতে প্রাণবন্ধু যাইও না-রে
তুমি গেলা দূর দেশে বন্ধু
আমারে ছাড়িয়া
যাইবার কালে নিষ্ঠুর বন্ধু
না-চাইল রে ফিরিয়া রে...
রাহেলার সুর ছড়িয়ে পড়ে গাঙের জলের ওপর। ঘোড়াউত্রা কিনা হঠাৎ খেপে ওঠে। খেপতে খেপতে জলের স্তম্ভ বানিয়ে ফেলে। একসময় তা ভেঙে পড়লে বিশাল ঢেউ পাড়ে এসে আছড়ে পড়ে। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সামান্য আলো নিয়ে রাতের আকাশে জেগে ওঠে দু-চারটা তারা। আর রাহেলা বিষণ্ণ মন নিয়ে বাড়ি ফেরে।
এমনই এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে রাহেলা ক্লান্ত বোধ করে। ওর চোখ জ্বালা করে ঝাঁপিয়ে জ্বর আসে। প্রচণ্ড তাপে মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রকট যন্ত্রণার ভেতর রাহেলা স্বপ্ন দেখে মিজান মিয়া বাড়ি ফিরে এসেছে। রাহেলার জন্য কিনে এনেছে চওড়া পাড়ের ঢাকাই শাড়ি। করমালি-রহমালির জন্য খেলনাগাড়ি, স্বাদের বিস্কুট।
শাড়ি দেখে হালিমা বেগম ছেলের ওপর রেগে ওঠে!
‘হুদাই ট্যাকা-পয়সা ভাঙছস। শাড়ি আননের কাম কী? হের পিন্ধনের কি শাড়ি নাই?’
মিজান মিয়া নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। হালিমা বেগম আরও রেগে ওঠে। তখন অন্ধকার আরও গাঢ় হয়। ঘরে কেউ আলো জ্বালে না।
হালিমা বেগম তখন কুৎসিত ভাষায় গালাগালি শুরু করে—
‘নবাবের বেটি, সুযোগ পাইলেই হুইয়া-বইসা খাইবার চায়। সন্ধ্যা পারায়া গেছে কুন সমুয়, বাত্তিডাও হে দিয়ার পারে না?’
হালিমা বেগমের এমত চিলচিৎকারে রাহেলার জ্বরঘোর উবে যায়। সে অন্ধকারেই চোখ মেলে তাকাতে চেষ্টা করে। হালিমা বেগমের সাথে কইতরি বেগমও গলা মেলায়। আলতাফ মিয়াও ব্যাপক হম্বিতম্বি শুরু করে।
করমালি-রহমালিও মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েছিল। প্রচণ্ড হাউকাউয়ের শব্দে ওরা জেগে ওঠে।
হালিমা বেগম ততক্ষণে বড় বোতল ভরে কেরোসিন তেল নিয়ে আসে। সে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করে। কারণ রাহেলা বেগমের ঘরে অন্ধকার থইথই করে। এদিকে হালিমা বেগম কেরোসিন তেল ঢেলে দেয় রাহেলার শরীরে। হয়তো অন্ধকারের ভুলভুলাইয়ার ভেতর পড়ে হালিমা বেগম এই কাজ করে। দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বলে উঠলে তা রাহেলা বেগমকে পেঁচিয়ে ধরে। আগুন আর তেল রাহেলার শরীরে তা-থৈ তা-থৈ নৃত্য করে। পুড়ে কয়লা হতে হতে রাহেলা চিৎকার দিয়ে কাঁদে। কিন্তু আগুন নেভানোর চেষ্টায় কেউ এগিয়ে আসে না। তখন সে ঘোড়াউত্রার দিকে দৌড়ায়। রাহেলা বেগম দৌড় শুরু করলেই জোর হাওয়া বইতে শুরু করে। রাহেলা জ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘোড়াউত্রার জলে। তখন প্রচণ্ড ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। দূরে ভেসে যায় রাহেলা—বহু দূরে।
হয়তোবা আলেকান্দা হয়ে ওর শরীর ভেসে যেতে থাকে। অতঃপর কয়লা হয়ে যাওয়া রাহেলার পোড়া দেহ তারাকান্দার মানুষগুলোর চক্ষের আড়াল হয়ে যায়।
৩
ঘোড়াউত্রা নদীতে রাহেলার পোড়া দেহ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর তেমন কিছুই আর ঘটে না। শুধু তারাকান্দার মানুষগুলা আহারে-বিহারে করে সারা বছর কাটিয়ে দেয়।
তত দিনে আসমানে ফের আষাঢ়ে-জলধর ঘনায়মান হয়। দুই-এক ফোঁটা জল ঘোড়াউত্রায় ঝরে পড়ে কি পড়ে না। অথচ গাঙ তখনই ফুঁসে ওঠে। ফুঁসতে ফুঁসতে জলস্তম্ভের আকার পায়। আর পরক্ষণেই তা ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়েই ঢেউ হয়ে ছুটে আসে তীরে। তখন মাটির বড়-বড় চাঙর ভেঙে মিশতে থাকে জলস্রোতে। আর তারাকান্দার মানুষগুলার অবাক চোখের সম্মুখে ঘোড়াউত্রার জল ফের ঘোলা হতে থাকে। সেই ঘোলাজলের ওপর ভুস করে ভেসে ওঠে এক অতিকায় মাছ! আগুনরাঙা আগুনের মাছ। বিশাল শরীর, কাঁটাওয়ালা দিঘল ল্যাঞ্জা আর উড়োজাহাজের ডানার মতো তার পাখনা। সে তার অগ্নিরঙা দেহ নিয়ে ঘোড়াউত্রার গভীর জলে ডুব দেয়। ফের ভেসে ওঠে। তখন জলের ওপর আগুনের হলকা দেখা দেয়। আগুনমাছ পরক্ষণই জলের তলায় তলিয়ে যায়। হয়তো তখন ডাঙার ঘর-সংসারের কথা মনে পড়ে। বহুদূরে শহরে থাকা সোয়ামির কথা মনে পড়ে। ভাটির পথ তার কাছে অচেনা মনে হয়। বিপৎসংকুল মনে হয়। ফলে সেই আগুনমাছ উপ্তাপথে ছুটতে শুরু করে। এই উপ্তাপথ উজানের পথ। এই পথের হদিস জানা নাই। এই পথ দুর্গম; বন্ধুর। আগুনমাছ এই উপ্তাপথেই ছুটতে শুরু করে। তার কাঁটাওয়ালা ল্যাঞ্জার আঘাতে জলে রুপালি ঝিলিক ওঠে। আগুনমাছের পিছু পিছু গাঙের সমস্ত মাছ ছুটতে শুরু করে। এরা সকলেই বেপথু হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ উজানমুখী ছুটতে ছুটতে আর কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। তারা ছুটে যায় নদীর উৎসমূল অভিমুখে। পাহাড়ের বুক চিরে যেখানে জন্ম হয়েছে নদীর, সেখানে পৌঁছে খুশিতে উল্লাস করে ওঠে অগ্নিরঙা আগুনমাছ। তারপর ডিম দেয়। আর মরে যায়। সেই ডিম থেকে জন্ম নেওয়া মাছগুলো ফের স্রোতের টানে ভেসে ভেসে ভাটিতে আসে। এই ভাটিতে বাস করে তারাকান্দার মানুষগুলা। যারা বাদলার মরসুম এলেই আগুনমাছের ছুটে যাওয়া দেখে। দেখে মূক-বধির হয়ে যায়। তবুও তারা বৃষ্টি নামলেই ওই আগুনমাছের অপেক্ষা করে। আগুনমাছের আগুন ছড়িয়ে ছুটে যাওয়া দেখতে ওরা ভালোবাসে। হয়তো মনে মনে ভাবে, ওই আগুনরঙা মাছ, যার নাম রাহেলা। শাশুড়ির অত্যাচারে জ্বলন্ত দেহ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল ঘোড়াউত্রার জলে। অতঃপর নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিবছরই বানের জল আসামাত্রই সে জ্বলন্ত শরীর নিয়ে ভেসে ওঠে গাঙে। আর ঘোড়াউত্রার জলকাদায় ভুলভুলাইয়া মিশিয়ে দিয়ে উজানমুখী হয়। আগুনমাছের পিছু পিছু গাঙের মাছেরা বেপথু হয়। এই বেপথু মাছেরা কখনো তাদের জন্মমাটি খুঁজে পায় কি না কে জানে?
জলমগ্ন হতে হতে বউজীবনের কথা ওদের মনে পড়ে। হয়তো ওই কথা মনে করেই ওরা অগ্নিরাঙা হয়ে ওঠে।
আগুনমাছদের এইসব কিস্সা-কাহিনি নিয়ে ঘোড়াউত্রা নিরন্তর বয়ে চলে। তবে ঘোড়াউত্রার গন্তব্য ঠাহর করা যায় না। উজান না ভাটি? ভাটি না উজান? তারাকান্দার মানুষগুলা ঘোড়াউত্রার ভুলভুলাইয়ার ভেতর ক্রমাগত দুলতে থাকে...!

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

বাদলার মরসুম এলেই ঘোড়াউত্রার জলে যেন কী এক রহস্য খেলে যায়। এমনিতেই বছর-কাবারি তার ভাব-সাবের তেমন অদল-বদল নাই। আর দশটা নদ-নদী যেভাবে চলে-ফেরে, ঘাড়-ঘুরিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে অন্য পথে ধায়—ঘোড়াউত্রাও তেমনি চলে। সারা বৎসর তেমন চেত-বেধ নাই, শুধু বাদলার মরসুম এলেই ভিন্নকথা। তখন আষাঢ়ে-জলধর আসমানে সামান্য
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাদলার মরসুম এলেই ঘোড়াউত্রার জলে যেন কী এক রহস্য খেলে যায়। এমনিতেই বছর-কাবারি তার ভাব-সাবের তেমন অদল-বদল নাই। আর দশটা নদ-নদী যেভাবে চলে-ফেরে, ঘাড়-ঘুরিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে অন্য পথে ধায়—ঘোড়াউত্রাও তেমনি চলে। সারা বৎসর তেমন চেত-বেধ নাই, শুধু বাদলার মরসুম এলেই ভিন্নকথা। তখন আষাঢ়ে-জলধর আসমানে সামান্য
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

বাদলার মরসুম এলেই ঘোড়াউত্রার জলে যেন কী এক রহস্য খেলে যায়। এমনিতেই বছর-কাবারি তার ভাব-সাবের তেমন অদল-বদল নাই। আর দশটা নদ-নদী যেভাবে চলে-ফেরে, ঘাড়-ঘুরিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে অন্য পথে ধায়—ঘোড়াউত্রাও তেমনি চলে। সারা বৎসর তেমন চেত-বেধ নাই, শুধু বাদলার মরসুম এলেই ভিন্নকথা। তখন আষাঢ়ে-জলধর আসমানে সামান্য
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

বাদলার মরসুম এলেই ঘোড়াউত্রার জলে যেন কী এক রহস্য খেলে যায়। এমনিতেই বছর-কাবারি তার ভাব-সাবের তেমন অদল-বদল নাই। আর দশটা নদ-নদী যেভাবে চলে-ফেরে, ঘাড়-ঘুরিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে অন্য পথে ধায়—ঘোড়াউত্রাও তেমনি চলে। সারা বৎসর তেমন চেত-বেধ নাই, শুধু বাদলার মরসুম এলেই ভিন্নকথা। তখন আষাঢ়ে-জলধর আসমানে সামান্য
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫