আর্মেনিয়ায় শান্তিরক্ষা প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের আগমন রুশ সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সোমবার শুরু হওয়া ‘ইগল পার্টনার’ নামের ১০ দিনের এই সামরিক মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ জন এবং আর্মেনিয়ার ১৭৫ জন সৈন্য অংশগ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে আর্মেনিয়ার সৈন্যদের অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করাই এর লক্ষ্য।
সামরিক মহড়াটি আকারে বড় না হলেও রাশিয়ার কাছে এর তাৎপর্য নেহাতই ছোট নয়। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, ‘পুরোনো মিত্র’ আর্মেনিয়া তাদের সঙ্গে যে ‘অবন্ধুসুলভ’ আচরণ করছে, এটি তারই সর্বশেষ পদক্ষেপ।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। সে সঙ্গে, আর্মেনিয়ার পার্লামেন্টও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধি অনুমোদন করতে প্রস্তুত। এর অর্থ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি আর্মেনিয়ায় পা রাখতে চান তবে তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে দেশটি। আর্মেনিয়াকে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের উঠান হিসেবেই দেখে আসছে রাশিয়া।
কিন্তু আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যকার সংঘাতে রাশিয়ার ভূমিকা পরিস্থিতি পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত সাম্রাজ্যে রাশিয়ার এখনো আগের মতোই প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে।
আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন যে, দেশের প্রতিরক্ষার জন্য রাশিয়াকে বিশ্বাস করার যে ‘কৌশলগত ভুল’ করা হয়েছে তার ‘তেতো ফল’ পেতে শুরু করেছে আর্মেনিয়া। এ মাসের শুরুতে ইতালীয় সংবাদমাধ্যম লা রিপাবলিকাকে তিনি বলেন, ‘আর্মেনিয়ার নিরাপত্তা স্থাপনার প্রায় শতভাগই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু আজ আমরা দেখছি যে, রাশিয়ার নিজেরই অস্ত্রের প্রয়োজন। তারা চাইলেও এখন আর্মেনিয়ার চাহিদা মেটাতে পারবে না।’
২০১৮ সালে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ‘ভেলভেট রেভল্যুশনের’ মাধ্যমে আর্মেনিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন নিকোল পাশিনিয়ান। প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মুখোমুখি এখন দেশটি। ককেশাস পর্বতমালায় অবস্থিত নাগর্নো-কারাবাখকেই ধরা হয় প্রায় তিন দশক ধরে চলা দুই দেশের মধ্যকার অস্বস্তির কারণ। নাগর্নো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হলেও অঞ্চলটির অধিবাসীদের বেশির ভাগই জাতিগতভাবে আর্মেনিয়ান।
২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যকার ৪৪ দিনের সংঘাতে আর্মেনিয়ার সামরিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়। তুরস্কের দেওয়া ড্রোন এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে সজ্জিত আজারবাইজান সহজেই নাগর্নো-কারাবাখের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। সে সঙ্গে আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ডেও আক্রমণ করে বিজয় অর্জন করে।
সে সময় রাশিয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ অবসানে সহায়তা করেছিল। তখনকার চুক্তি অনুযায়ী আর্মেনিয়ার সঙ্গে নাগর্নো-কারাবাখের সংযোগকারী একমাত্র রাস্তা লাচিন করিডর পাহারা দেওয়ার জন্য প্রায় ২ হাজার রুশ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয়।
কিন্তু রাশিয়ার শান্তিরক্ষীরা আজারবাইজানের সৈন্যদের লাচিন করিডরে সামরিক চেকপয়েন্ট বসাতে বাধা দেয়নি। এই চেকপয়েন্টের কারণে ছিটমহলটিতে খাদ্য আমদানিও বন্ধ হয়। অবরোধের কথা যেমন আজারবাইজান অস্বীকার করেছে, তেমনি রাশিয়াও স্বীকার করেনি তাদের বিরুদ্ধে আসা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে অবস্থিত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আর্মেনিয়ার বৈদেশিক নীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ভাহরাম টের-মাতেভোসিয়ানের মতে, রাশিয়ার অক্ষমতা বা হস্তক্ষেপ করতে অনীহায় আর্মেনিয়ার সরকার নিজেদের প্রতারিত ভাবতে বাধ্য হয়েছে। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য ৩০ বছর ধরে লড়েছে আর্মেনিয়া। রাশিয়া গত ৩০ বছরে যেমনটি চেয়েছে, আর্মেনিয়া তেমনটাই করেছে। আমি বলবো, ২০০ বছর আগে থেকে দেশটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে আসছে যে, যখন প্রয়োজন হবে রাশিয়া তার দায়িত্ব পালন করবে এবং যেকোনো বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আর্মেনিয়াকে রক্ষা করবে। কিন্তু তেমনটা ২০২০,২০২১ কিংবা ২০২২ সালে দেখা যায়নি।’
রাশিয়ার নেতৃত্বে যৌথ সামরিক নিরাপত্তা জোট সিএসটিও যে আর্মেনিয়ার নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছে না, বিশ্লেষকদের কাছে তা অনেকটাই পরিষ্কার। টের-মাতেভোসিয়ান বলেন, রাশিয়া লাচিন করিডর সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আর্মেনিয়া রাশিয়ার কাছ থেকে যে অস্ত্র কিনেছিল সেসবও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের সম্প্রসারণবাদী এবং আগ্রাসী আচরণ নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। এসব কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনা ছাড়া আর্মেনিয়ার হাতে খুব কম বিকল্পই ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর কারণেই আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো পূরণ করতে পারছে না রাশিয়া। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ওয়াইডার ইউরোপ প্রোগ্রামের পরিচালক মেরি ডুমোলিন বলেছেন যে, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান উভয় দেশকেই একই সঙ্গে পাশে রাখার চেষ্টা করার কারণে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে যুদ্ধের পর থেকে, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে একটি দেশকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা ছিল রাশিয়ার। এর অর্থ হচ্ছে, তারা আজারবাইজানকেই বেছে নিয়েছে। আর এই নিষ্ক্রিয়তা নিজেই একটি আজারবাইজানপন্থী অবস্থান।’
ডুমোলিনের মতে, মস্কো এবং বাকুর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক অনেকটাই নির্ধারিত হচ্ছে পুতিন এবং আজারবাইজানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্কের দ্বারা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না পাশিনিয়ান পুতিনের পছন্দের নেতা। পাশিনিয়ান বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। গণতান্ত্রিক, সংস্কারবাদী, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান রয়েছে তার। অন্যদিকে, আলিয়েভ অনেকটাই সে ধরনের নেতা যাদের পুতিন পছন্দ করেন।’
এসবের প্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধির সদস্য হতে যাচ্ছে আর্মেনিয়া, যা তাদের আজারবাইজানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করার একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম দেবে। কিন্তু আজারবাইজান ইস্যুতে নিজেদের নিরাপত্তা বাড়াতে অসাবধানতাবশত রাশিয়াকেও তিরস্কার করে বসেছে আর্মেনিয়া। ইউক্রেনের শিশুদের নির্বাসনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। রোম সংবিধি অনুসারে, পুতিন আর্মেনিয়ায় গেলে তাকে গ্রেপ্তারে বাধ্য হবে দেশটি।
বিশ্লেষক টের-মাতেভোসিয়ানের মতে, আর্মেনিয়ান সরকার রাশিয়ার মিত্রদের কাছে রোম সংবিধির অনুমোদনের অর্থ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়ার ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। পলিটিকোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাশিয়া গত সপ্তাহে মস্কোতে আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রদূতকে কিছু 'কঠিন কথা' শোনানোর জন্য তলব করেছিল।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-আর্মেনিয়ার যৌথ মহড়া এ অঞ্চলে পারস্পরিক বিশ্বাসের পরিবেশকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে না।’
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নয় আর্মেনিয়ার নেতারা। লা রিপাবলিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিকোল পাশিনিয়ান আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যে আটকে যেতে পারে আর্মেনিয়া। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশ ও বিশেষজ্ঞরা আর্মেনিয়াকে রাশিয়াপন্থী দেশ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে, রাশিয়ার ঘনিষ্ঠরা আর্মেনিয়া ও তার সরকারকে ভাবে পশ্চিম ঘেঁষা।’
ইয়েরেভানের অনেকেই ইতিমধ্যে রাশিয়ার সম্ভাব্য পদক্ষেপ কী হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন। রাশিয়া যেহেতু টেলিযোগাযোগ থেকে শক্তি পর্যস্ত আর্মেনিয়ার অর্থনীতির বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, তাই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভয় এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। ক্রেমলিন এপ্রিল মাসে আর্মেনিয়া থেকে দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল। সেটার পেছনে স্বাস্থ্যগত কারণকেই সামনে আনা হলেও অনেকেই পদক্ষেপটিকে দেখেছে ইয়েরেভানের প্রতি শাস্তি হিসেবে। কারণ আইসিসির অনুমোদনের বিষয়টি তখন বিবেচনা করছিল আর্মেনিয়া।
টের-মাতেভোসিয়ানের জন্য, বর্তমান আর্মেনিয়ান সরকারের মতাদর্শ এসেছে উদারপন্থী পশ্চিমা মূল্যবোধ থেকে। তারা তাদের ধারণা এবং বিশ্বাস বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুযোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা সফল হবে নাকি হবে না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য কতটা দাম দিতে হবে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’
আর্মেনিয়ায় শান্তিরক্ষা প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের আগমন রুশ সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সোমবার শুরু হওয়া ‘ইগল পার্টনার’ নামের ১০ দিনের এই সামরিক মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ জন এবং আর্মেনিয়ার ১৭৫ জন সৈন্য অংশগ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে আর্মেনিয়ার সৈন্যদের অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করাই এর লক্ষ্য।
সামরিক মহড়াটি আকারে বড় না হলেও রাশিয়ার কাছে এর তাৎপর্য নেহাতই ছোট নয়। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, ‘পুরোনো মিত্র’ আর্মেনিয়া তাদের সঙ্গে যে ‘অবন্ধুসুলভ’ আচরণ করছে, এটি তারই সর্বশেষ পদক্ষেপ।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। সে সঙ্গে, আর্মেনিয়ার পার্লামেন্টও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধি অনুমোদন করতে প্রস্তুত। এর অর্থ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি আর্মেনিয়ায় পা রাখতে চান তবে তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে দেশটি। আর্মেনিয়াকে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের উঠান হিসেবেই দেখে আসছে রাশিয়া।
কিন্তু আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যকার সংঘাতে রাশিয়ার ভূমিকা পরিস্থিতি পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত সাম্রাজ্যে রাশিয়ার এখনো আগের মতোই প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে।
আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন যে, দেশের প্রতিরক্ষার জন্য রাশিয়াকে বিশ্বাস করার যে ‘কৌশলগত ভুল’ করা হয়েছে তার ‘তেতো ফল’ পেতে শুরু করেছে আর্মেনিয়া। এ মাসের শুরুতে ইতালীয় সংবাদমাধ্যম লা রিপাবলিকাকে তিনি বলেন, ‘আর্মেনিয়ার নিরাপত্তা স্থাপনার প্রায় শতভাগই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু আজ আমরা দেখছি যে, রাশিয়ার নিজেরই অস্ত্রের প্রয়োজন। তারা চাইলেও এখন আর্মেনিয়ার চাহিদা মেটাতে পারবে না।’
২০১৮ সালে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ‘ভেলভেট রেভল্যুশনের’ মাধ্যমে আর্মেনিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন নিকোল পাশিনিয়ান। প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মুখোমুখি এখন দেশটি। ককেশাস পর্বতমালায় অবস্থিত নাগর্নো-কারাবাখকেই ধরা হয় প্রায় তিন দশক ধরে চলা দুই দেশের মধ্যকার অস্বস্তির কারণ। নাগর্নো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হলেও অঞ্চলটির অধিবাসীদের বেশির ভাগই জাতিগতভাবে আর্মেনিয়ান।
২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যকার ৪৪ দিনের সংঘাতে আর্মেনিয়ার সামরিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়। তুরস্কের দেওয়া ড্রোন এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে সজ্জিত আজারবাইজান সহজেই নাগর্নো-কারাবাখের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। সে সঙ্গে আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ডেও আক্রমণ করে বিজয় অর্জন করে।
সে সময় রাশিয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ অবসানে সহায়তা করেছিল। তখনকার চুক্তি অনুযায়ী আর্মেনিয়ার সঙ্গে নাগর্নো-কারাবাখের সংযোগকারী একমাত্র রাস্তা লাচিন করিডর পাহারা দেওয়ার জন্য প্রায় ২ হাজার রুশ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয়।
কিন্তু রাশিয়ার শান্তিরক্ষীরা আজারবাইজানের সৈন্যদের লাচিন করিডরে সামরিক চেকপয়েন্ট বসাতে বাধা দেয়নি। এই চেকপয়েন্টের কারণে ছিটমহলটিতে খাদ্য আমদানিও বন্ধ হয়। অবরোধের কথা যেমন আজারবাইজান অস্বীকার করেছে, তেমনি রাশিয়াও স্বীকার করেনি তাদের বিরুদ্ধে আসা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে অবস্থিত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আর্মেনিয়ার বৈদেশিক নীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ভাহরাম টের-মাতেভোসিয়ানের মতে, রাশিয়ার অক্ষমতা বা হস্তক্ষেপ করতে অনীহায় আর্মেনিয়ার সরকার নিজেদের প্রতারিত ভাবতে বাধ্য হয়েছে। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য ৩০ বছর ধরে লড়েছে আর্মেনিয়া। রাশিয়া গত ৩০ বছরে যেমনটি চেয়েছে, আর্মেনিয়া তেমনটাই করেছে। আমি বলবো, ২০০ বছর আগে থেকে দেশটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে আসছে যে, যখন প্রয়োজন হবে রাশিয়া তার দায়িত্ব পালন করবে এবং যেকোনো বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আর্মেনিয়াকে রক্ষা করবে। কিন্তু তেমনটা ২০২০,২০২১ কিংবা ২০২২ সালে দেখা যায়নি।’
রাশিয়ার নেতৃত্বে যৌথ সামরিক নিরাপত্তা জোট সিএসটিও যে আর্মেনিয়ার নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছে না, বিশ্লেষকদের কাছে তা অনেকটাই পরিষ্কার। টের-মাতেভোসিয়ান বলেন, রাশিয়া লাচিন করিডর সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আর্মেনিয়া রাশিয়ার কাছ থেকে যে অস্ত্র কিনেছিল সেসবও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের সম্প্রসারণবাদী এবং আগ্রাসী আচরণ নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। এসব কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনা ছাড়া আর্মেনিয়ার হাতে খুব কম বিকল্পই ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর কারণেই আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো পূরণ করতে পারছে না রাশিয়া। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ওয়াইডার ইউরোপ প্রোগ্রামের পরিচালক মেরি ডুমোলিন বলেছেন যে, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান উভয় দেশকেই একই সঙ্গে পাশে রাখার চেষ্টা করার কারণে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে যুদ্ধের পর থেকে, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে একটি দেশকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা ছিল রাশিয়ার। এর অর্থ হচ্ছে, তারা আজারবাইজানকেই বেছে নিয়েছে। আর এই নিষ্ক্রিয়তা নিজেই একটি আজারবাইজানপন্থী অবস্থান।’
ডুমোলিনের মতে, মস্কো এবং বাকুর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক অনেকটাই নির্ধারিত হচ্ছে পুতিন এবং আজারবাইজানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্কের দ্বারা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না পাশিনিয়ান পুতিনের পছন্দের নেতা। পাশিনিয়ান বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। গণতান্ত্রিক, সংস্কারবাদী, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান রয়েছে তার। অন্যদিকে, আলিয়েভ অনেকটাই সে ধরনের নেতা যাদের পুতিন পছন্দ করেন।’
এসবের প্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধির সদস্য হতে যাচ্ছে আর্মেনিয়া, যা তাদের আজারবাইজানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করার একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম দেবে। কিন্তু আজারবাইজান ইস্যুতে নিজেদের নিরাপত্তা বাড়াতে অসাবধানতাবশত রাশিয়াকেও তিরস্কার করে বসেছে আর্মেনিয়া। ইউক্রেনের শিশুদের নির্বাসনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। রোম সংবিধি অনুসারে, পুতিন আর্মেনিয়ায় গেলে তাকে গ্রেপ্তারে বাধ্য হবে দেশটি।
বিশ্লেষক টের-মাতেভোসিয়ানের মতে, আর্মেনিয়ান সরকার রাশিয়ার মিত্রদের কাছে রোম সংবিধির অনুমোদনের অর্থ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়ার ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। পলিটিকোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাশিয়া গত সপ্তাহে মস্কোতে আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রদূতকে কিছু 'কঠিন কথা' শোনানোর জন্য তলব করেছিল।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-আর্মেনিয়ার যৌথ মহড়া এ অঞ্চলে পারস্পরিক বিশ্বাসের পরিবেশকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে না।’
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নয় আর্মেনিয়ার নেতারা। লা রিপাবলিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিকোল পাশিনিয়ান আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যে আটকে যেতে পারে আর্মেনিয়া। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশ ও বিশেষজ্ঞরা আর্মেনিয়াকে রাশিয়াপন্থী দেশ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে, রাশিয়ার ঘনিষ্ঠরা আর্মেনিয়া ও তার সরকারকে ভাবে পশ্চিম ঘেঁষা।’
ইয়েরেভানের অনেকেই ইতিমধ্যে রাশিয়ার সম্ভাব্য পদক্ষেপ কী হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন। রাশিয়া যেহেতু টেলিযোগাযোগ থেকে শক্তি পর্যস্ত আর্মেনিয়ার অর্থনীতির বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, তাই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভয় এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। ক্রেমলিন এপ্রিল মাসে আর্মেনিয়া থেকে দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল। সেটার পেছনে স্বাস্থ্যগত কারণকেই সামনে আনা হলেও অনেকেই পদক্ষেপটিকে দেখেছে ইয়েরেভানের প্রতি শাস্তি হিসেবে। কারণ আইসিসির অনুমোদনের বিষয়টি তখন বিবেচনা করছিল আর্মেনিয়া।
টের-মাতেভোসিয়ানের জন্য, বর্তমান আর্মেনিয়ান সরকারের মতাদর্শ এসেছে উদারপন্থী পশ্চিমা মূল্যবোধ থেকে। তারা তাদের ধারণা এবং বিশ্বাস বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুযোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা সফল হবে নাকি হবে না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য কতটা দাম দিতে হবে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’
হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনকে নিয়ে একটি নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রও এ শান্তিরক্ষায় যুক্ত থাকবে।
৬ ঘণ্টা আগেইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। এ নিয়ে আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বিরল বৈঠক হয়েছে। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গেও ট্রাম্পের বৈঠক হয়েছে। এই আলোচনায় মূল কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ইউক্রেনের
১৪ ঘণ্টা আগে২০১৩-১৪ সালে ইউক্রেনে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হলে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতীকবিহীন সশস্ত্র সৈন্য পাঠিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নেন। পরে পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছর এক ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে এসব ডেটা সেন্টার। ২০২৬ সালে প্রথমবারের মতো আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে এআইয়ের এসব ডেটা সেন্টার।
২ দিন আগে