Ajker Patrika

সত্যিই কি সাকিবের সময় শেষ

রানা আব্বাস, নিউইয়র্ক থেকে
আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ১২: ১৫
সত্যিই কি সাকিবের সময় শেষ

হঠাৎ সাকিবের মনে হলো, মানা করার পরও তাঁর পরিবারকে ভিডিও করছেন একজন সাংবাদিক। মুহূর্তেই তিনি সেই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে তুলে দিলেন নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে।

বছর দুয়েক আগে সাকিব আল হাসান নিজেই বলেছিলেন, যেদিন নিজেকে আর ‘গাড়ির চালক’ মনে হবে না, মনে হবে শুধুই একজন যাত্রী; তাঁর ওপর ভরসা করে গাড়িতে কেউ বসে না থাকলে তিনি আর খেলবেন না। 

বিশ্রাম, ছুটি কিংবা চোটের বিষয় না থাকলে সাকিবের নামটা সবার আগে লিখেই দল করতে হয় নির্বাচকদের। প্রায় দুই দশকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সব সময় নিজেকে দলের জন্য অপরিহার্য আর প্রাসঙ্গিক করে রাখার সামর্থ্য-ক্ষমতা সব খেলোয়াড়ের থাকে না। প্রতিভা, সাফল্য মিলিয়ে সাকিব সেই বিরল প্রতিভার খেলোয়াড়দের একজন, যিনি বছরের পর বছর দলে ‘অটোমেটিক চয়েস’। 

ক্যারিয়ারের শেষ দিকে আসা সাকিবই এখন আলোচনায় বিবর্ণ পারফরম্যান্স নিয়ে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখনো খোলসবন্দী তারকা অলরাউন্ডার। নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফিরেছেন ৩ রানে, ডালাসে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে করেছেন ৮ রান। এ বিশ্বকাপে তাঁর স্ট্রাইকরেট ৬১.১১। দুই ম্যাচেই তিনি উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন শর্ট বলে। 

ডালাসে শ্রীলঙ্কার পেসার মাতিশা পাতিরানাকে আপার কাট করতে গিয়ে মাহিশ তিকশানার দারুণ এক ক্যাচ হয়েছেন। নিউইয়র্কে ব্যাটারদের বধ্যভূমিতে এনরিখ নরকিয়াকে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে এইডেন মার্করামের ক্যাচ হয়েছেন সাকিব। নিজের শক্তির বাইরের শট খেলে আউট হওয়া সাকিবকে রীতিমতো তুলাধোনা করেছেন বীরেন্দর শেবাগ। ক্রিকবাজের এক প্রোগ্রামে ভারতের সাবেক ব্যাটার বলেছেন, ‘তুমি তো হেইডেন বা গিলক্রিস্ট না যে তুমি শর্ট বলে পুল করতে যাবে। তোমার মান অনুযায়ী খেলো। যখন হুক বা পুল করতে পারছ না, তোমার মতোই শট খেলো।’ 

সাকিবের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে, তিনি যেহেতু অলরাউন্ডার, এক বিভাগে ব্যর্থ হলে আরেকটিতে পুষিয়ে দিতে পারেন। এবার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংয়েও নিষ্প্রভ। টুর্নামেন্টে দুই ম্যাচে নিজের বোলিং কোটা শেষ করতে পারেননি। ২ ম্যাচে করেছেন ৪ ওভার, উইকেট পাননি একটিও। যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে যে ৫ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি। সাকিবের ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও গিয়েছিল ভুলে যাওয়ার মতো, ৫ ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ৪৪ রান। ২০২১ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে করেছিলেন ১৩১ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ফিফটির দেখা পেয়েছেন দুই বছর আগে অর্থাৎ ১৯ ইনিংস আগে। 

এই পারফরম্যান্স দেখে শেবাগের রায়, ২০ ওভারের ক্রিকেটে সাকিব আর চলেন না! সাবেক ভারতীয় ওপেনার বলেছেন, ‘গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় মনে হয়েছে, টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের সময় শেষ। দীর্ঘদিন সে অধিনায়ক। সিনিয়র এক ক্রিকেটার। তার বোঝা উচিত যে টি-টোয়েন্টিতে আর সে চলে না।’ 

 ফর্ম নিয়ে সাকিব তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে কখনো এতটা সমালোচনার মুখে পড়েছেন কি না, মনে করা কঠিন। পরশু নাসাউয়ে খেলা শেষে টিম বাসে ওঠার আগে পরিবারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ গল্প করতে দেখা গেল সাকিবকে। বাবা সন্ধ্যার ফ্লাইটে দলের সঙ্গে চলে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে, কন্যা আলাইনা জড়িয়ে ধরে কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না সাকিবকে। বাবা-কন্যার এই অপার্থিব দৃশ্য দেখার পরই এক অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা। হঠাৎ সাকিবের মনে হলো, মানা করার পরও তাঁর পরিবারকে ভিডিও করছেন একজন সাংবাদিক। মুহূর্তেই তিনি সেই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে তুলে দিলেন নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে। 

 ‘কোনো ভিডিও করা হয়নি’—সাংবাদিক যতই দাবি করুন, সাকিবের তা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পর ওই সংবাদকর্মী তাঁর ফোন ফিরে পান। পুরো ঘটনা দেখে মনে হলো, সব মিলিয়ে সাকিব খুব একটা মানসিক স্বস্তিতে নেই। তাঁর স্বস্তি ফেরাতে পারে শুধুই ভালো পারফরম্যান্স। না হলে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে ‘চালক’ থেকে হয়ে যেতে পারেন শুধুই একজন যাত্রী!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত