Ajker Patrika

সেদিন কী হয়েছিল ভারতীয় তারকার

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪, ২০: ৫৮
সেদিন কী হয়েছিল ভারতীয় তারকার

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাছে সবশেষ ইংল্যান্ড সিরিজটা বিশেষ কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। টেস্টে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন, সে তো আছেই। টেস্ট খেলার ‘সেঞ্চুরি’ও হয়েছে তাঁর সিরিজে। তবে এ সিরিজেই মাঠের বাইরে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, যেটি কখনোই ভোলার নয় অশ্বিনের। 

রাজকোট টেস্টের দ্বিতীয় দিন হঠাৎ খেলা ছেড়ে চেন্নাইয়ে ছুটে যেতে হয়েছিল অশ্বিনকে। মায়ের অসুস্থতার খবর শোনার পর কী পরিস্থিতিতে যেতে হয়েছিল ভারতীয় তারকাকে, সেদিনের ঘটনার অশ্বিন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে খুলে বলেছেন। 

ঘটনাটা অশ্বিনের কাছ থেকেই শোনা যাক, ‘৪৯৯ উইকেটে ছিলাম, আশা করেছিলাম ভাইজাগে মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলব। সেটা হয়নি। রাজকোট টেস্টে দ্বিতীয় দিন জ্যাক ক্রলিকে ফেরাই। খুব একটা ভালো বল না হলেও মাইলফলকে পৌঁছে যাই। ৫০০ উইকেট নিলাম, স্ত্রী বা বাবার কাছ থেকে ফোন আশা করেছিলাম। সন্ধ্যা ৭টা বেজে যাওয়ার পরও ফোন না আসায় অবাক হই। ভেবেছিলাম সাক্ষাৎকার কিংবা অভিনন্দনবার্তার প্রতিক্রিয়া দিতে দিতে তারাও ব্যস্ত। বেশি কিছু তাই আর ভাবিনি।’ 

বেশ চেষ্টার পর স্ত্রীকে ফোনে পান অশ্বিন। তাঁর কণ্ঠ ভেঙে আসছিল। তাঁকে অশ্বিন গোসল করতে যাওয়ার কথা বললেন। কিন্তু স্ত্রী অশ্বিনকে জানালেন, ড্রেসিংরুমে অন্য খেলোয়াড়দের থেকে দূরে কোথাও একা যেতে। অশ্বিন বললেন, ‘সে বলল, মা প্রচণ্ড মাথাব্যথার পর জ্ঞান হারিয়েছে।’ 

এমন খবর পেয়ে অশ্বিনের তো মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়, ‘কী করেছি মনে নেই, তবে কাঁদছিলাম। চাইনি কেউ আমাকে কাঁদতে দেখুক। জানতাম, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে, কিন্তু এটাও ভাবছিলাম, কীভাবে আমার সতীর্থদের ফেলে চলে যাব। কোচ আর অধিনায়ককেই–বা কী বলব। যদি বাড়ি চলে যাই, তাহলে আমাদের মাত্র ১০ জন খেলোয়াড় থাকবে, এটা তো ইংল্যান্ডকে বাড়তি সুবিধা দেবে। কিন্তু মায়ের কথাও ভাবছিলাম। সর্বশেষ কখন তার সঙ্গে কথা বলেছি, সেটাও ভেবেছি। চিকিৎসকেরা আমাদের জানিয়েছিলেন, কাউকে তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নেই।’ 

ঠিক এ সময় রোহিত এগিয়ে আসেন। ভারতীয় অধিনায়ক সেদিন কত বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন, সেটি অশ্বিনের মুখেই শোনা যাক, ‘রোহিত ভেতরে এসে আমাকে বসে থাকতে দেখে বলে, কী করছ? তোমাকে এখনই যেতে হবে। ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাও।’ 

কিন্তু চাইলেই দ্রুত নিজের শহর চেন্নাইয়ে যাওয়া যায় না। অশ্বিনকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন পূজারা। অশ্বিন বলছিলেন, ‘চেতেশ্বর পূজারাকে ধন্যবাদ দিতে হবে, যে অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমার জন্য চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে।’ 

ফ্লাইটে অশ্বিনকে একা ছাড়েননি রোহিত। সঙ্গে পাঠান ভারত দলের ফিজিও কমলেশকে। যে অধিনায়ক, সতীর্থকে সহায়তা করতে এভাবে এগিয়ে আসেন, তাঁর হৃদয় যেন সোনায় মোড়ানো মনে হয়েছে অশ্বিনের, ‘‘দলে মাত্র দুজন ফিজিও থাকার পরও রোহিত কমলেশকে আমার সঙ্গে চেন্নাই যেতে বলল। কমলেশকে বললাম, ‘সমস্যা নেই, তুমি থাকো।’ কিন্তু বিমানে গিয়ে দেখি, কমলেশ ও একজন নিরাপত্তাকর্মী আগে থেকেই সেখানে আছে। রোহিত বারবার কমলেশকে ফোন করছিল আমার পরিস্থিতি জানতে। এটা আমাকে স্পর্শ করেছে। আমাদের মতো স্বার্থপর সমাজে যে অন্য কারও ভালোর কথা চিন্তা করে, সে সত্যিই মহৎ।’’ 

রোহিতকে প্রশংসার স্তুতিতে ভাসিয়ে অশ্বিন বললেন, ‘রোহিত বিশেষ একজন মানুষ, অসাধারণ নেতা, হৃদয়ও অনেক বড়। মাঠে তার জন্য আমি আমার জীবন দিয়ে দেব, সে এমনই একজন অধিনায়ক। এই গুণগুলোর কারণেই সে পাঁচটি আইপিএলসহ অনেক শিরোপা জিতেছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, রোহিত তার ক্যারিয়ার ও জীবনে আরও অনেক কিছু জিতুক।’ 

চেন্নাইয়ে মাকে দেখার পরের ঘটনাও বর্ণনা করেছেন অশ্বিন, ‘আমার মা আমাকে দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলেন। এটাই এখনকার আর আগের প্রজন্মের মা-বাবার মধ্যে পার্থক্য। তিনি শুধু আমার জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, তা-ই চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, আমি দলের সঙ্গেই থাকি। এমনকি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি আমাকে নিয়ে ভাবছিলেন।’ 

মায়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর বিসিসিআইয়ে সাধারণ সম্পাদক জয় শাহর সহায়তায় আরেকটি চার্টার্ড ফ্লাইটে অশ্বিন ফিরে আসেন রাজকোটে। রাজকোট টেস্টের চতুর্থ দিনেই যোগ দেন দলের সঙ্গে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত