Ajker Patrika

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০৬ মে ২০২৫, ১২: ৫৯
রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে এনসিপি

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের একটি রূপরেখা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ বিষয়ে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, মৌলিক সংস্কার বলতে কোনো নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নয় বা আসনভিত্তিক দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়গুলোকে নয়। বরং ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণ—এ তিন বিষয়কে অর্জন হচ্ছে মৌলিক সংস্কারের মূল ভিত্তি।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এ সংস্কার প্রস্তাব হস্তান্তর করেন আখতার হোসেন। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল সংলাপে অংশ নেয় দলটি। সেদিন আলোচনার মুলতবির পর আজ আবার সংলাপে অংশ নেয় এনসিপি।

আখতার হোসেন বলেন, মৌলিক সংস্কার অর্জন করতে হলে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্র কাঠামো কীভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী উপাদানমুক্ত করা যায়, সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণের বাইরে এসে কীভাবে জাতীয় স্বার্থকে প্রতিফলিত করতে পারি এবং কীভাবে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে হাজির করা যায়—প্রত্যেকটা বিষয়কে মৌলিক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত বলে আমরা মনে করি। সেই মৌলিক সংস্কারের যে বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন, তার রূপরেখা ঐকমত্য কমিশনে জমা দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমরা বারংবার বলে এসেছি, গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ যে শাসন কাঠামোর মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে যে স্বৈরতান্ত্রিক উপাদানগুলো থেকে গেছে, ফ্যাসিবাদী উপাদানগুলো থেকে গেছে, তার কারণে বাংলাদেশের জনগণ নিপীড়িত ও নির্যাতিত হয়ে এসেছে। সেই স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রকাঠামোকে উত্তরণ ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে কীভাবে শামিল করতে পারি, সেই প্রচেষ্টার জায়গা থেকে বাংলাদেশের আপামর ছাত্রজনতা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ যাতে সার্থক হয়।’

আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ যেন অতীতের মতো ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতন্ত্র কাঠামোর মধ্যে না থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে নিজেদের শামিল করতে পারে, সেই জায়গায় এনসিপির পক্ষ থেকে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা হাজির করেছি।

আগামী ১৫ মের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায় সংলাপ শেষ করার আশা প্রকাশ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের পাশাপাশি, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে যেসব মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন আমরা গ্রহণ করলাম। এটি পর্যালোচনা মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এর একটি প্রতিফলন থাকবে বলে আমরা মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে অগ্রসর হচ্ছি। তার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে। যার লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরি করা। সেই প্রক্রিয়া আপনাদের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখাগুলো অবশ্যই সহায়তা করবে। আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে আরও অনেকটা পথ অগ্রসর হওয়া যাবে। প্রাথমিক আলোচনা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা প্রবেশ করতে পারব। সেটা ১৫ মে-এর পরে দ্রুততার সঙ্গে শুরু করতে পারব।’

এনসিপির পক্ষ থেকে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নিয়েছেন—যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আছেন—কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত