Ajker Patrika

বড় দলকে মোকাবিলার উপায় খুঁজছে এনসিপি

  • এক সপ্তাহের মধ্যে গঠনতন্ত্র প্রস্তুতের নির্দেশনা।
  • মে থেকে শুরু হবে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি গঠন।
  • রাজপথে কর্মসূচি বৃদ্ধির পরিকল্পনা।
সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ০৬
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে বড় দলগুলোকে টেক্কা দেওয়ার উপায় খুঁজছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের প্রায় সাত মাস পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে তরুণদের নতুন দল এনসিপি। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ আনার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসা দলটি আত্মপ্রকাশের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করতে পারেনি। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থতা, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থবিরতা, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সমন্বয়কদের কারও কারও বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ ওঠায় রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা এনসিপি।

‘দ্রুত’ নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে সরব বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীও গত আট মাসে ভোটের মাঠ অনেকটাই গুছিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ নির্বাচন; আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার এবং নির্বাচনের আগে পরিপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এমন বিপরীত অবস্থান রাজনীতির মাঠে বিএনপি ও এনসিপিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

এনসিপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, গত কয়েক মাসে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত বিএনপি ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলার মুখে পড়েন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, ফলে এনসিপির কর্মীদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটছে।

এনসিপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে রাজনীতির মাঠে ‘টেক্কা’ দিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। নানাবিধ ব্যস্ততায় দল গঠনের পর কমিটিগুলো গঠন করতে না পারায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানা গেছে, দলীয় গঠনতন্ত্রের খসড়া নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করলেও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে পারছে না এনসিপি। ফলে আটকে রয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা-উপজেলায় সংগঠন বিস্তারের কাজ। গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে না পারায় আটকে আছে দলের নিবন্ধনের আবেদনও। দলের গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধির অভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ। তবে এ স্থবিরতা কাটিয়ে মে মাস থেকেই রাজপথে থাকার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে ‘বড়’ দল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হতে চায় এনসিপি। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন জোনে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে দলটি। আগামী ২ মে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া মে মাসে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সারা দেশের রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি।

দলের গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের প্রথমে চিন্তা ছিল একটি অন্তর্বর্তী গঠনতন্ত্র তৈরির, তবে এখন আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র তৈরি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মাইগ্রেশন পলিসিটা ঠিক করতে সময় লেগেছে। যাঁরা জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আসছেন; কিংবা যাঁরা নতুন আসবেন তাঁদের কীভাবে দলে সমন্বয় করা হবে, যাঁরা আগে থেকেই কাজ করছেন এবং নতুন সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় কীভাবে হবে—তা নিয়েই মূলত আলোচনা ছিল। এটা একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছে। এখন স্থানীয় কমিটিগুলো হবে।’

সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে ইতিমধ্যে চারটি সাধারণ সভা করেছে এনসিপি। এসব সভায় দলীয় কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি, কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া, নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুরাহার উপায়, আওয়ামী লিগের বিচার ও সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ছক, দল ও নেতাদের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা জানান, দলের তৃতীয় সাধারণ সভায় সদস্যদের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের তদন্তের জন্য ১২ সদস্যের একটি ‘শৃঙ্খলা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। চতুর্থ সভায় সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠন এবং এই কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে, দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে ছয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি ‘গঠনতন্ত্র প্রণয়ন টিম’ গঠন করা হয়েছে।

দলের নেতারা জানান, ইতিমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া চলমান আছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে আসতে পারেন, এমন নেতা ও সংগঠকদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আগ্রহী অনেকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনাও চলছে। মে মাস থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। দলকে বিভিন্ন সেক্টরে ছড়িয়ে দিতে এবং ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা তৈরির লক্ষ্যে দলের একাধিক ‘উইং’ তৈরির পরিকল্পনাও বাস্তবায়নের পথে। ইতিমধ্যে দলটি ‘যুব’, ‘নারী’ ও ‘শ্রমিক’ উইং তৈরির কাজ শেষ করেছে। ‘আইনজীবী’, ‘প্রকৌশলী’, ‘এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স’-এর গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামী মাসের শুরু থেকে ‘সদস্য সংগ্রহ সপ্তাহ’ ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিপির।

দলের যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্থানীয় কমিটি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিটি কীভাবে হবে, বয়স, সদস্যসংখ্যা কেমন হবে, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠনতান্ত্রিক কোনো জটিলতা আপাতত আর নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নবীন-প্রবীণ সবার সমন্বয়ে স্থানীয় কমিটিগুলো করতে চাই। আমাদের অঞ্চল ভাগ করে দিয়েছি, কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফর করে স্থানীয় কমিটিগুলো করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবেন।’

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এনসিপির বৈঠক: বাংলাদেশে সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের (আইডিসিপিসি) সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সন্ধ্যায় এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিবের (দপ্তর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ ও তাহসিন রিয়াজ। আইডিসিপিসির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক পেং শিউবিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপপরিচালক চেন শুয়ানবো, তৃতীয় সচিব চেন ইয়ংপেই এবং অ্যাটাশে ঝাং গুইউ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংলাপে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, এনসিপির সংস্কার পরিকল্পনা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাব্য দিক নিয়ে মতবিনিময় হয়। এনসিপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের চলমান রূপান্তরের সময়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকালীন সময়ে সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত