তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬৫৮ কোটি টাকায় কেনা ডিজেলচালিত ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) এবং ১৪৭টি যাত্রীবাহী কোচের বেশ কয়েকটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এগুলোর ডিসপ্লে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ঘোষণা শুনতে পাচ্ছে না যাত্রীরা। এ কারণে ডিসপ্লে, পিআইএস, কাপলার প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। অকেজো পড়ে আছে তিনটি পাওয়ার কার।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (ওয়ারেন্টির মেয়াদকালে) কোরীয় ঠিকাদারের ত্রুটি মেরামত করার কথা। কিন্তু প্রকল্প দপ্তর, কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরীয় প্রতিনিধিকে জানানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য সার্কিট ডায়াগ্রাম, ম্যানুয়াল, প্রোডাক্ট ব্রুশিয়ারের হার্ড কপি এবং সফট কপি সরবরাহ করা হয়নি।
তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলওয়ে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সমস্যা হয়েছে। এর আগে কিছু ত্রুটি ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না। এখনকার সমস্যাগুলো কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকল্প দপ্তরে এলে এবং ওয়ারেন্টির মেয়াদ থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া যাবে।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ২০টি লোকোমোটিভ ও ১৪৭টি কোচ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চলাচল করছে। রেলের পূর্বাঞ্চলের সূত্র জানায়, এসব কোচ ও ইঞ্জিনে বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোচের ডিসপ্লে, অ্যামপ্লিফায়ার, কাপলার ও ভলিউম অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রেলওয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ইঞ্জিন এবং কোচ কেনে। আটটি ধাপে এসব কোচ-ইঞ্জিন দেশে আসে। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি এসেছিল প্রথম চালান এবং শেষ অর্থাৎ অষ্টম চালান আসে ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল। কোচগুলো বাংলাদেশে সরবরাহের সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০টি লোকোমোটিভ এবং ৫৮টি কোচের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড (দুই বছর) শেষ হয়ে গেছে। বাকি ৮৯টির ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মেয়াদ ধাপে ধাপে শেষ হবে ২০২৬ সালের ১৭ এপ্রিল নাগাদ।
এই প্রকল্পে ৬৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ের ৭৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অর্থায়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)। বাকি ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের। ঠিকাদার দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ কোম্পানি সুংশিন আরএসটি-পসকো ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রকল্পে কিছু টাকা সাশ্রয় হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ৩৫টি কোচ কিনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অবশ্য এর একটিও এখনো দেশে আসেনি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কোরিয়ার কোচগুলোয় একাধিক কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। কোচগুলোর ডিসপ্লে ও পাবলিক অ্যাড্রেস (পিএ) ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরিয়ান প্রতিনিধিকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও এখনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৭০৩ (মহানগর গোধূলী)/ ৭৪২ (তূর্ণা নিশীথা), ৭৪১ (তূর্ণা নিশীথা)/ ৭০৪ (মহানগর প্রভাতী), ৭৮৭ (সোনার বাংলা এক্সপ্রেস)/ ৭৮৮ (সোনার বাংলা এক্সপ্রেস) নম্বর ট্রেনের ডিসপ্লের পাবলিক ইনফরমেশন সিস্টেম (পিআইএস) কন্ট্রোলার অকার্যকর হয়ে আছে। পিআইএস কন্ট্রোলার নতুন লাগানো ছাড়া ডিসপ্লে সিস্টেম কার্যকর করা যাবে না। পিআইএস কন্ট্রোলারের জন্য আপডেট সফটওয়্যার দিতে হবে। সফটওয়্যার দেওয়া হয়নি এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোচভিত্তিক নম্বর ইনপুট দেওয়ার জন্য কোনো ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক কেব্ল দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারকে ডিসপ্লের সফটওয়্যার আপডেট দিতে বলা হলেও সেটি করছে না।
৭০১ (সুবর্ণ এক্সপ্রেস)/৭০২ (সুবর্ণ এক্সপ্রেস), ৭০৩/৭৪২, ৭৪১/৭০৪ নম্বর ট্রেনের উভয় দিকের অ্যামপ্লিফায়ার (সাউন্ড রেগুলেটর) অকার্যকর হয়ে গেছে। ৭৮৭/৭৮৮ নম্বর ট্রেনের শুধু এক দিকের অ্যামপ্লিফায়ার কার্যকর। এতে প্রায়ই অ্যামপ্লিফায়ার বন্ধ হয়ে যায়। আপৎকালের জন্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে পিএ সিস্টেম সচল রাখা হয়।
সূত্র জানায়, কোরীয় কোচগুলোর ৪০টি কাপলার অকার্যকর রয়েছে। এগুলো বদলে কার্যকর কাপলার সরবরাহ করা না হলে কোনোভাবে ট্রেনগুলোর ডিসপ্লে সিস্টেম সচল করা সম্ভব নয়। কাপলারের মাধ্যমে ট্রেনের দরজার কন্ট্রোল এবং যাত্রীদের তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। কাপলারে মোট ৩৮টি পিন থাকে। যেকোনো একটি পিন নষ্ট হলে বা পানি ঢুকলে বা শর্টসার্কিট হলে, এমনকি ভারী কুয়াশা হলেও পিএ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ছাড়া ৭০১/৭০২, ৭০৩/৭৪২, ৭৪১/৭০৪, ৭৮৭/৭৮৮ নম্বর ট্রেনের ১৩১টি ভলিউম কন্ট্রোলার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে জানানো হলেও ভলিউম কন্ট্রোলার প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এ কারণে যাত্রীরা ট্রেনে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা যথাযথভাবে শুনতে পায় না।
প্রতি কোচে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও একটি এনজিআর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিও চিত্র দেখার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর কি না, তা বোঝা যায় না।
রেলের পূর্বাঞ্চলের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরিয়ার পাওয়ার কারের জেনারেটর ১৫টির বেশি কোচের লোড নিতে পারে না। তাই এসব পাওয়ার কারে সর্বোচ্চ ১৫টি কোচ সংযুক্ত করা যায়। এই পাওয়ার কারে ঈদের সময় বাড়তি কোচ যুক্ত করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তিনটি পাওয়ার কার অকেজো পড়ে আছে।
কোচের এসব ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ লোকোমোটিভ ও ১৫০ মিটারগেজ যাত্রী কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন কোচের এসব সমস্যা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে হয়েছে। এসব কোচ যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। কোচের কাপলারগুলো খুলে রাখায় সেগুলোয় পানি ঢুকে সমস্যা হয়েছে। এর আগেও কিছু সমস্যা হয়েছিল, ঠিকাদারের কাছ থেকে সেসব ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। তবে এখন যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এগুলোর জন্য কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে এই দপ্তরে এলে, ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে এবং চুক্তিতে থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়া যাবে। তবে ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না।
এসব কোচ ও ইঞ্জিন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রেলের বিভিন্ন বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রকল্পে উল্লেখ আছে রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ ২ বছর। রক্ষণাবেক্ষণ মেয়াদে ত্রুটি দেখা দিলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে ঠিক করতে হবে অর্থাৎ ঠিকাদার করে দেবে। ঠিকাদার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে না। সেটার দায় রেলের ওপর চাপাতে চাইছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করায় সমস্যা হচ্ছে। কাপলার ট্রেনের বাইরের অংশে থাকে, সেগুলো রোদ-বৃষ্টিতে এত দ্রুত নষ্ট হবে কেন?
প্রকল্প দপ্তর সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী কোচ দেশে আসার সময় থেকে পরবর্তী দুই বছর প্রতিটি কোচ ও ইঞ্জিনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবে। তবে রেলের কর্মীদের ভুলে সমস্যা তৈরি হলে এর দায় ঠিকাদার নেবে না। কারিগরি ত্রুটি হলে ঠিকাদার দেখবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব কোচের সমস্যা হয়েছে, সেগুলো ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যেই আছে। এরপরও সেগুলোর ত্রুটি সারাচ্ছে না ঠিকাদার।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোরিয়া থেকে কোচ-ইঞ্জিন আনার আগে কি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল? এমন কোচ অন্য যেসব দেশ কিনেছে, তাদের এত দ্রুত সমস্যা হয়েছে কি না, এগুলো চিন্তা না করেই ক্রয় কমিটির কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হয়েছে। রেলে কোচ-ইঞ্জিনের যে সংকট, তাতে এত কোটি টাকার একটি প্রকল্পে এমন সমস্যা যদি হতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে এসব কোচের দশা ডেমুর মতো হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬৫৮ কোটি টাকায় কেনা ডিজেলচালিত ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) এবং ১৪৭টি যাত্রীবাহী কোচের বেশ কয়েকটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এগুলোর ডিসপ্লে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ঘোষণা শুনতে পাচ্ছে না যাত্রীরা। এ কারণে ডিসপ্লে, পিআইএস, কাপলার প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। অকেজো পড়ে আছে তিনটি পাওয়ার কার।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (ওয়ারেন্টির মেয়াদকালে) কোরীয় ঠিকাদারের ত্রুটি মেরামত করার কথা। কিন্তু প্রকল্প দপ্তর, কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরীয় প্রতিনিধিকে জানানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য সার্কিট ডায়াগ্রাম, ম্যানুয়াল, প্রোডাক্ট ব্রুশিয়ারের হার্ড কপি এবং সফট কপি সরবরাহ করা হয়নি।
তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলওয়ে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সমস্যা হয়েছে। এর আগে কিছু ত্রুটি ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না। এখনকার সমস্যাগুলো কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকল্প দপ্তরে এলে এবং ওয়ারেন্টির মেয়াদ থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে ঠিক করিয়ে নেওয়া যাবে।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ২০টি লোকোমোটিভ ও ১৪৭টি কোচ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চলাচল করছে। রেলের পূর্বাঞ্চলের সূত্র জানায়, এসব কোচ ও ইঞ্জিনে বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোচের ডিসপ্লে, অ্যামপ্লিফায়ার, কাপলার ও ভলিউম অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রেলওয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ইঞ্জিন এবং কোচ কেনে। আটটি ধাপে এসব কোচ-ইঞ্জিন দেশে আসে। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি এসেছিল প্রথম চালান এবং শেষ অর্থাৎ অষ্টম চালান আসে ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল। কোচগুলো বাংলাদেশে সরবরাহের সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০টি লোকোমোটিভ এবং ৫৮টি কোচের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড (দুই বছর) শেষ হয়ে গেছে। বাকি ৮৯টির ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মেয়াদ ধাপে ধাপে শেষ হবে ২০২৬ সালের ১৭ এপ্রিল নাগাদ।
এই প্রকল্পে ৬৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ের ৭৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অর্থায়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)। বাকি ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের। ঠিকাদার দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ কোম্পানি সুংশিন আরএসটি-পসকো ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রকল্পে কিছু টাকা সাশ্রয় হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ৩৫টি কোচ কিনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অবশ্য এর একটিও এখনো দেশে আসেনি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কোরিয়ার কোচগুলোয় একাধিক কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। কোচগুলোর ডিসপ্লে ও পাবলিক অ্যাড্রেস (পিএ) ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কোরিয়ান প্রতিনিধিকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও এখনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৭০৩ (মহানগর গোধূলী)/ ৭৪২ (তূর্ণা নিশীথা), ৭৪১ (তূর্ণা নিশীথা)/ ৭০৪ (মহানগর প্রভাতী), ৭৮৭ (সোনার বাংলা এক্সপ্রেস)/ ৭৮৮ (সোনার বাংলা এক্সপ্রেস) নম্বর ট্রেনের ডিসপ্লের পাবলিক ইনফরমেশন সিস্টেম (পিআইএস) কন্ট্রোলার অকার্যকর হয়ে আছে। পিআইএস কন্ট্রোলার নতুন লাগানো ছাড়া ডিসপ্লে সিস্টেম কার্যকর করা যাবে না। পিআইএস কন্ট্রোলারের জন্য আপডেট সফটওয়্যার দিতে হবে। সফটওয়্যার দেওয়া হয়নি এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোচভিত্তিক নম্বর ইনপুট দেওয়ার জন্য কোনো ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক কেব্ল দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারকে ডিসপ্লের সফটওয়্যার আপডেট দিতে বলা হলেও সেটি করছে না।
৭০১ (সুবর্ণ এক্সপ্রেস)/৭০২ (সুবর্ণ এক্সপ্রেস), ৭০৩/৭৪২, ৭৪১/৭০৪ নম্বর ট্রেনের উভয় দিকের অ্যামপ্লিফায়ার (সাউন্ড রেগুলেটর) অকার্যকর হয়ে গেছে। ৭৮৭/৭৮৮ নম্বর ট্রেনের শুধু এক দিকের অ্যামপ্লিফায়ার কার্যকর। এতে প্রায়ই অ্যামপ্লিফায়ার বন্ধ হয়ে যায়। আপৎকালের জন্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে পিএ সিস্টেম সচল রাখা হয়।
সূত্র জানায়, কোরীয় কোচগুলোর ৪০টি কাপলার অকার্যকর রয়েছে। এগুলো বদলে কার্যকর কাপলার সরবরাহ করা না হলে কোনোভাবে ট্রেনগুলোর ডিসপ্লে সিস্টেম সচল করা সম্ভব নয়। কাপলারের মাধ্যমে ট্রেনের দরজার কন্ট্রোল এবং যাত্রীদের তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। কাপলারে মোট ৩৮টি পিন থাকে। যেকোনো একটি পিন নষ্ট হলে বা পানি ঢুকলে বা শর্টসার্কিট হলে, এমনকি ভারী কুয়াশা হলেও পিএ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ছাড়া ৭০১/৭০২, ৭০৩/৭৪২, ৭৪১/৭০৪, ৭৮৭/৭৮৮ নম্বর ট্রেনের ১৩১টি ভলিউম কন্ট্রোলার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে জানানো হলেও ভলিউম কন্ট্রোলার প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এ কারণে যাত্রীরা ট্রেনে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা যথাযথভাবে শুনতে পায় না।
প্রতি কোচে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও একটি এনজিআর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিও চিত্র দেখার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর কি না, তা বোঝা যায় না।
রেলের পূর্বাঞ্চলের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরিয়ার পাওয়ার কারের জেনারেটর ১৫টির বেশি কোচের লোড নিতে পারে না। তাই এসব পাওয়ার কারে সর্বোচ্চ ১৫টি কোচ সংযুক্ত করা যায়। এই পাওয়ার কারে ঈদের সময় বাড়তি কোচ যুক্ত করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তিনটি পাওয়ার কার অকেজো পড়ে আছে।
কোচের এসব ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ লোকোমোটিভ ও ১৫০ মিটারগেজ যাত্রী কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন কোচের এসব সমস্যা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে হয়েছে। এসব কোচ যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। কোচের কাপলারগুলো খুলে রাখায় সেগুলোয় পানি ঢুকে সমস্যা হয়েছে। এর আগেও কিছু সমস্যা হয়েছিল, ঠিকাদারের কাছ থেকে সেসব ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। তবে এখন যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এগুলোর জন্য কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যথাযথভাবে এই দপ্তরে এলে, ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে এবং চুক্তিতে থাকলে ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়া যাবে। তবে ঠিকাদারকে ঢালাও দায় দেওয়া যাবে না।
এসব কোচ ও ইঞ্জিন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রেলের বিভিন্ন বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রকল্পে উল্লেখ আছে রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ ২ বছর। রক্ষণাবেক্ষণ মেয়াদে ত্রুটি দেখা দিলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে ঠিক করতে হবে অর্থাৎ ঠিকাদার করে দেবে। ঠিকাদার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে না। সেটার দায় রেলের ওপর চাপাতে চাইছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করায় সমস্যা হচ্ছে। কাপলার ট্রেনের বাইরের অংশে থাকে, সেগুলো রোদ-বৃষ্টিতে এত দ্রুত নষ্ট হবে কেন?
প্রকল্প দপ্তর সূত্র বলছে, চুক্তি অনুযায়ী কোচ দেশে আসার সময় থেকে পরবর্তী দুই বছর প্রতিটি কোচ ও ইঞ্জিনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবে। তবে রেলের কর্মীদের ভুলে সমস্যা তৈরি হলে এর দায় ঠিকাদার নেবে না। কারিগরি ত্রুটি হলে ঠিকাদার দেখবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব কোচের সমস্যা হয়েছে, সেগুলো ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যেই আছে। এরপরও সেগুলোর ত্রুটি সারাচ্ছে না ঠিকাদার।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোরিয়া থেকে কোচ-ইঞ্জিন আনার আগে কি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল? এমন কোচ অন্য যেসব দেশ কিনেছে, তাদের এত দ্রুত সমস্যা হয়েছে কি না, এগুলো চিন্তা না করেই ক্রয় কমিটির কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হয়েছে। রেলে কোচ-ইঞ্জিনের যে সংকট, তাতে এত কোটি টাকার একটি প্রকল্পে এমন সমস্যা যদি হতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে এসব কোচের দশা ডেমুর মতো হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পারস্পারিক সামরিক সহযোগিতা জোরদার করতে একমত হয়েছে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (০৬ মে) সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকা সেনানিবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রথম যৌথ কমিটির সভায় এই ঐক্যমত্য হয়।
৬ ঘণ্টা আগেমিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার যোগাযোগ স্থাপন করায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে দেশটির সামরিক সরকার। তবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোসহ সীমান্তের অন্যান্য বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে জান্তার অসন্তুষ্টি আমলে না নিচ্ছেনা বাংলাদেশ।
৬ ঘণ্টা আগেভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
৭ ঘণ্টা আগেঢাকার শিক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ’বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক’-এর কর্ণধার খায়রুল বাশার বাহার বিদেশে উচ্চশিক্ষার লোভ দেখিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে ১৪১ জনের কাছ থেকে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাশার সপরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
৯ ঘণ্টা আগে