Ajker Patrika

নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের দাবি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের দাবি 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে নিরাপত্তা এবং নির্বাচনকালীন সুরক্ষায় ‘প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের দাবি করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের শঙ্কা, ভোটকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়সহ বাড়িঘরে হামলা চালাতে পারে একটি পক্ষ। 

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা জানানো হয়। 

এ সময় বক্তারা আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে ভোটদানে নিরাপত্তার পাশাপাশি সংসদে যেন কোনো রাজাকার স্থান না পায়—সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান। 

নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি আমেরিকাকে ডেকে আনছে মন্তব্য করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাফল্য ও উন্নয়নের ধারা স্তব্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বন্ধ করে দেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ, সন্ত্রাসী, জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে জামায়াত-বিএনপির মতো ৭১ ও ৭৫-এর খুনিরা আবার মাঠে নেমেছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলনের নামে তাণ্ডব করছে এবং গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে।’

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে, যারা গণতন্ত্রের নামে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পারেননি। আগামী নির্বাচনে যাতে দেশের সকল নাগরিক শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আগেই নিশ্চিত করতে হবে।’

মানবাধিকার নেত্রী ও সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশের যারা সংখ্যালঘু রয়েছেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী একটি ষড়যন্ত্র চলছে। এ জন্য সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা জরুরি। ১৫ বছর ধরে শান্তিতে আছি শান্তিতে থাকতে চাই।’

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমাদের উচিত এখনই শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে কাজ আরম্ভ করা। অতীতে আপনারা যে নির্বাচনকালীন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, সেই সহিংসতার সঠিক তথ্য প্রমাণ নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার অ্যাম্বাসিগুলোর সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি পুনরায় নির্বাচিত না হন তাহলে কেবল সংখ্যালঘুরাই নন, গ্রামের পর গ্রাম আওয়ামী লীগারদেরও দেশত্যাগ করতে হবে।’ 

শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ বলেন, ‘নির্বাচন আসলেই আমরা আতঙ্কিত হই। কিন্তু তখন আতঙ্কিত না হয়ে সমমনাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ-এর সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তির জন্য আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিলাম, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় বৈষম্য, পীড়ন ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এ দাবি পূরণের ঘোষণার পুনরায় দাবি জানাচ্ছি।’ 

২০০১ সালের নির্বাচন সংখ্যালঘুদের জন্য এক অভিশাপ ছিল মন্তব্য করে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানবাধিকার নেতা নির্মল রোজারিও বলেন, ‘নির্বাচন আসলে দেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি ও শঙ্কা কাজ করতে থাকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মনে করে, যেকোনো জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচন মানেই হলো নির্যাতন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের এই ধারণা হয়েছে।’

দেশে অসাম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল গৌরব ফিরে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। সেসব ভয়ংকর ঘটনা আজও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের তাড়া করে। সব ঘটনার সঙ্গে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী জড়িত। আমরা কেউ চাই না বাংলাদেশে সেই অপশক্তি পুনরায় ক্ষমতায় আসুক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত