Ajker Patrika

আমরা ইচ্ছা করলে অসাধ্য সাধন করতে পারি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৬: ২৩
আমরা ইচ্ছা করলে অসাধ্য সাধন করতে পারি: প্রধানমন্ত্রী

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’’। বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না, পারবে না। আমরা যদি ইচ্ছা করি, অসাধ্য সাধন করতে পারি। সেটা ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রমাণ করেছি। আজকে আমরা সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। তার কাজও প্রায় সম্পন্ন।’ 

শরীয়তপুরের জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রথমবার সরকার গঠনের পর জাপানে গিয়েছিলাম। তখন তাদের পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য অনুরোধ জানাই এবং তারা রাজি হয়। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি ২০০১ সালে।’ 

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নির্মাণকাজ বন্ধ করে পদ্মা সেতু ওখান (মাওয়া-জাজিরা) থেকে সরিয়ে নিতে চায়। দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পরে আবার উদ্যোগ নিই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বিশ্বব্যাংক অর্থ বন্ধ করে দেয়, একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে, দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি এবং তাদের বলি এটা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু তারা তা পারেনি।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কানাডার আদালতের মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়, এতে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং সম্ভাবনাও ছিল না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই, কারও অর্থে নয়, যেহেতু মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, এর জবাব আমরা দেব। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব। এটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকেই মনে করেছিল এটা আমরা পারব না। মানুষের সমর্থন ও সাহস পাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া বন্ধুপ্রতিম দেশও আমাদের সহযোগিতা করেছে।’ 

পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশের জিডিপিতে আরও ১ থেকে ২ শতাংশ সংযুক্ত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে আমরা উন্নয়নে আরও একধাপ এগিয়ে যাব।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, যার কাজ অতি শিগগিরই সম্পন্ন হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে শেখ রাসেল সেনানিবাস ভবিষ্যতে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং সেনানিবাসের আশপাশের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কাজে নিয়োজিত থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ 

শেখ হাসিনা জানান, ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই ব্রিগেড শেখ রাসেল সেনানিবাসের মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে স্থানান্তরিত হয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা বিধানে সফলভাবে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই সেনানিবাসের ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ও অধীনস্থ ইউনিটসমূহ নিরলসভাবে পরিশ্রম করে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আজ শেখ রাসেল সেনানিবাস একটি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস হিসেবে পরিণত হয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ এবং প্রশাসনিক সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। আমি এই সেনানিবাস নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ 

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তাঁরা দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রশংসা অর্জন করেছেন।’ 

সেনাবাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, যুদ্ধ করব না। জাতির পিতা আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি শিখিয়ে গেছেন—সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু প্রস্তুত থাকতে হবে, কখনো যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তাহলে আমরা যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি, প্রতিরোধ করতে পারি, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি। সেইভাবে সশস্ত্রবাহিনীকে প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও সমৃদ্ধিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। নিজস্ব প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে নিজেদের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবেন।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার দুই ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। শেখ কামাল ‘বাংলাদেশ প্রথম যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কোর্সে’ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিল। যুদ্ধকালীন প্রধান সেনাপতির এডিসি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। শেখ জামাল সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিল। যুদ্ধের পোশাকে সশস্ত্র অবস্থায় তার একটি ছবি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করে।’ 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট ভাই রাসেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ‘আর্মি অফিসার’ হবে। মাওয়া ও জাজিরা সেনানিবাসকে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ হিসেবে নামকরণ করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’-এর সব অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে ভবিষ্যতে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত