Ajker Patrika

সালমান রুশদিকে অন্ধ করে দেওয়া হামলাকারীর ২৫ বছরের কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক
সালমান রুশদি। ছবি: এএফপি
সালমান রুশদি। ছবি: এএফপি

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান সাহিত্যিক সালমান রুশদির ওপর হামলাকারী হাদি মাতারকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। শুক্রবার (১৬ মে) নিউইয়র্কের চৌতকোয়া শহরের আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নিউজার্সির ২৭ বছর বয়সী হাদি মাতারকে হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্য সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চে উঠে সালমান রুশদিকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন মাতার। রুশদি সে সময় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। হামলায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তাঁর ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।

আদালতে রায় ঘোষণার আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে মাতার বলেন, ‘সালমান রুশদি অন্যদের অসম্মান করতে চায়...সে একজন খারাপ ব্যক্তি, সে মানুষকে তুচ্ছ মনে করে। আমি তার সঙ্গে একমত নই।’

মাতার শুধু রুশদিকে নয়, রুশদির সঙ্গে মঞ্চে থাকা অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক রাল্ফ হেনরি রিসকেও আঘাত করেন। এ ঘটনায় রিসকে আহত করার দায়ে মাতারকে আরও সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়, যদিও দুটি সাজা একই সঙ্গে কার্যকর হবে।

চৌতকোয়া শহরের জেলা অ্যাটর্নি জেসন স্মিত বলেন, ‘এই হামলা শুধু সালমান রুশদির ওপর নয়, বরং সেখানে উপস্থিত ১ হাজার ৪০০ দর্শক ও বৃহত্তর সমাজের ওপর একটি আঘাত। হামলাটি সুপরিকল্পিত ছিল।’ তিনি আরও জানান, সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার বিষয়টি নিজেই বেছে নিয়েছেন হাদি মাতার।

মাতারের পক্ষে নিয়োজিত জনরক্ষক আইনজীবী নাথানিয়েল ব্যারোনে বলেন, তাঁর মক্কেল আগে কখনো কোনো অপরাধে জড়াননি এবং মামলাটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অতিরিক্ত প্রচার পেয়েছে, যার ফলে মাতার শুরু থেকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে বিবেচিত হননি।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের মেভিলে বিচারের দ্বিতীয় দিনে আদালতে হাদি মাতার। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ১১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের মেভিলে বিচারের দ্বিতীয় দিনে আদালতে হাদি মাতার। ছবি: এপির সৌজন্যে

মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন স্বয়ং সালমান রুশদি। তিনি আদালতে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম, আমি রক্তের মধ্যে পড়ে আছি...চোখ ও হাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম, হয়তো আমি মারা যাচ্ছি।’ ছুরিকাঘাতে তাঁর যকৃৎ, অন্ত্র ও বাঁ হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এক বক্তব্যে রুশদির বিরুদ্ধে ইরানের জারি করা ফতোয়ার সমর্থন জানান। সেই বক্তব্য শুনে মাতার এই হামলার অনুপ্রেরণা পান। তবে হামলার পর ২০২২ সালে মাতার স্বীকার করেন, তিনি রুশদির বিখ্যাত বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর মাত্র দু-এক পৃষ্ঠা পড়েছিলেন।

এ ঘটনার পর সালমান রুশদি নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি আত্মজীবনী লিখেছেন ‘নাইফ: মেডিটেশনস আফটার অ্যান অ্যাটেম্পড মার্ডার’। এতে উঠে এসেছে ওই ভয়াবহ দিনের স্মৃতি এবং সেরে ওঠার দিনগুলোর কথা।

রুশদি ১৯৮৮ সালে তাঁর উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর থেকে হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন। বইটি মুসলিম ধর্মের নবীর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হলেও এটি অনেক মুসলমানের কাছে ধর্ম অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে এবং বহু দেশে এটি নিষিদ্ধ করা হয়।

জানা যায়, দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইটি প্রকাশের পরের বছর, ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন। রুশদিকে কেউ হত্যা করলে তাঁর জন্য ৩০ লাখ ডলারের পুরস্কারও ঘোষণা করেন তিনি। এর পর থেকে রুশদি বহু বছর লুকিয়ে ছিলেন।

ইরান সরকার পরে এই ফতোয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিলেও ২০১২ সালে একটি ইরানি ধর্মীয় সংস্থা পুরস্কারের পরিমাণ আরও ৫ লাখ ডলার বাড়িয়ে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত