Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েলের সম্ভাব্য মুখোমুখি সংঘর্ষের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত

অনলাইন ডেস্ক
গত বছরের জানুয়ারিতে ইরানের মিসাইল প্রদর্শনী। ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের জানুয়ারিতে ইরানের মিসাইল প্রদর্শনী। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করে তুলছে ইসরায়েল ও ইরানের পারস্পরিক হুমকি। একদিকে কূটনৈতিক আলোচনা থমকে আছে, অন্যদিকে সেনা মহড়া ও প্রক্সি লড়াই—সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ বিশ্ব নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন ও পরমাণু সমৃদ্ধকরণে অনড় অবস্থান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সীমারেখা, আর তেহরান-ওয়াশিংটনের মধ্যকার ধীর গতির কূটনৈতিক প্রচেষ্টা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। এই সংঘর্ষ বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে ব্যাঘাত, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জড়িয়ে পড়া এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা গভীরতর করে তুলতে পারে।

এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজউইক-এর একটি প্রতিবেদনে ইরান-ইসরায়েলের সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে পাঁচটি ইঙ্গিতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো—

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানি সংগ্রহ

ইরান সম্প্রতি চীন থেকে হাজার হাজার টন অ্যামোনিয়াম পারক্লোরেট আমদানি করছে—যা কঠিন জ্বালানিভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির মূল উপাদান। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এসব উপাদান দিয়ে প্রায় ৮০০ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি সম্ভব। এর কিছু অংশ ইয়েমেনের হুতি মিলিশিয়াসহ অন্যান্য মিত্র গোষ্ঠীর কাছেও পাঠানো হতে পারে। এটি ইরানের কৌশলগত প্রস্তুতির অংশ।

ইসরায়েলের প্রস্তুতি

ইসরায়েল খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানার জন্য তারা প্রস্তুত। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সম্প্রতি ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে বহু দিবসীয় আক্রমণের মহড়া দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত রাখা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাইলেও, তারা যুদ্ধের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি।

প্রক্সি যুদ্ধের বিস্তার

গত বুধবার সিরিয়া থেকে ইসরায়েলে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলে, ইসরায়েল পাল্টা বিমান হামলা চালায়। তারা এর জন্য দায়ী করেছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে। তবে দামেস্কের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। একই সময়ে ইয়েমেনের হুতিরা তেল-আবিবের জাফায় একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইরান ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোর এই সমন্বিত তৎপরতা যুদ্ধক্ষেত্রকে আরও বাস্তব করে তুলছে।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক চাপ

দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতে ইরানের হুমকিকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। তাঁর মতে, ইরান এখন দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে এবং এটি হামলার জন্য উপযুক্ত সময়।

কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা

গাজায় যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কোণঠাসা। দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নিয়েছে জর্ডান, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তুরস্ক এবং সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনা ভেঙে পড়েছে। বিপরীতে ইরান রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন এনেছে।

সামনে কী হতে পারে

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। ইসরায়েল একতরফাভাবে আঘাত হানতে প্রস্তুত, যদি তারা মনে করে ইরান ‘লাল দাগ’ অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার জোর দিয়ে আগাম সতর্কবার্তা দিচ্ছে যে, হামলা হলে তারাও পাল্টা জবাব দেবে।

এক কথায়, মধ্যপ্রাচ্যে এক অনিশ্চিত যুদ্ধের ঘনঘটা দিনকে দিন ঘনীভূত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত