Ajker Patrika

করোনায় মৃতদের গঙ্গায় ফেলে দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা, মিললো ৭১ লাশ

করোনায় মৃতদের গঙ্গায় ফেলে দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা, মিললো ৭১ লাশ

পাটনা: ভারতের উত্তর প্রদেশ এবং বিহার রাজ্যে আজ মঙ্গলবারও বেশ কয়েকটি মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে। কোভিডের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অকালমৃত্যুর মধ্যে দুটি রাজ্যের সীমান্তের কাছে একটি সেতুর নিচে লাশগুলো ভাসতে দেখা গেছে। বিহারের কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল সোমবার বক্সারে গঙ্গার তীরে যে মৃতদেহগুলো ভাসতে দেখা গিয়েছিল সেগুলোসহ এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা ৭১টিতে পৌঁছেছে। এর জন্য উত্তরপ্রদেশকেই দায়ী করছেন তারা।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদীতে ভাসতে থাকা মৃতদেহের বীভৎস ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে অনেকে বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সেতুর উপর থেকে এসব লাশ ফেলে দিয়েছে। কোভিডে প্রাণ হারানো এসব মানুষ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন অনেকে।

বিহারের বিজেপি সাংসদ জনার্দন সিং সিগ্রিওয়াল অভিযোগ করেছেন, উত্তর প্রদেশের বালিয়া সীমান্তে বিহারের সরণে অবস্থিত জয়প্রভা সেতুর উপর থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা কোভিডে মৃতদের লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স চালকরা যাতে এভাবে নদীতে লাশ ফেলে না দেয় সেদিকে নজর দিতে তিনি সরণের জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

তবে স্থানীয়রা দাবি করছেন, এই বীভৎসতার জন্য উভয় রাজ্যই দায়ী। স্থানীয় বাসিন্দা অরবিন্দ সিং বলেন, উত্তর প্রদেশ এবং বিহার উভয় রাজ্যের অ্যাম্বুলেন্স চালকরাই এই কাজটি করেছেন।

গতকাল ফুলে ওঠা এবং পচে যাওয়া বেশ কয়েকটি মৃতদেহ শ্মশানের কাছে বক্সারের চৌসা গ্রামে নদীর ধারে ভাসতে দেখা যায়। বক্সার প্রশাসন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সারা রাত মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয় এবং ময়নাতদন্ত করা হয়। অনেকে ধারণা করছে এসব কোভিডে মৃত মানুষ। যদিও তাদের মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। লাশ শনাক্ত করতে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা দাবি করছেন, দাহ করার জন্য কাঠ পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, দাম অত্যন্ত চড়া। এ কারণে স্থানীয় লোকেরা লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন।

জেলা প্রশাসনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্মশানঘাটে পর্যাপ্ত কাঠ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে আটটি মৃতদেহ দাহ করা হচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলেছি এবং নদীতে লাশ ফেলে না দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন করারও নির্দেশনা দিয়েছি।

বক্সারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমান সমীর বলেন, শ্মশান সঙ্কট বা আর্থিক সঙ্গতির অভাবের কারণে স্বজনরা মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিচ্ছে– এমন গল্প প্রচার করা হচ্ছে। এটি সত্য নয়।

এদিকে গঙ্গায় মরদেহ ভেসে আসার ঘটনা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মধ্যে বিরোধ উসকে দিচ্ছে। বিহারের মন্ত্রী সঞ্জয় কুমার ঝা বলেছেন, এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার অত্যন্ত বেদনাহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, মৃতদেহগুলো উত্তর প্রদেশ থেকে বিহারে ভেসে এসেছে। ময়নাতদন্ত শেষে, আমাদের চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন যে এগুলো চার-পাঁচ দিনের পুরনো লাশ। নীতীশ কুমার দু'টি ট্র্যাজেডির পাশাপাশি গঙ্গা নদীর ক্ষয়ক্ষতিতেও ব্যথিত। এভাবে লাশ ভেসে আসা ঠেকাতে উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের সীমান্তবর্তী রাণীঘাটে বেড়া দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুই রাজ্যই বিজেপি শাসিত হলেও বিহারে নীতীশ কুমারের জনতা দলের সঙ্গে জোট করেছে বিজেপি। বিহার সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজেপি ও জনতা দলের টানাপোড়েন চলছে শুরু থেকেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত