Ajker Patrika

ভারতের ‘লটারি কিং’ রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছেন ১৩০০ কোটি রুপি

ভারতের ‘লটারি কিং’ রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছেন ১৩০০ কোটি রুপি

ভারতে সান্তিয়াগো মার্টিন নামে এক লটারি ব্যবসায়ী ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনে ভারতের রাজনৈতিক অর্থদাতা বা অনুদানদাতাদের তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সান্তিয়াগো মার্টিন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে তিনি এই বন্ডগুলো কেনেন। 

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ২০১৮ সালে চালু হয় নির্বাচনী বন্ড। এটি মূলত দাতার পরিচয় ও অর্থের পরিমাণ গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার একটি পদ্ধতি ছিল। চালু হওয়ার পর যে পরিমাণ নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়, তার প্রায় অর্ধেকই কিনেছেন সান্তিয়াগো মার্টিন। 

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দল দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগামকে (ডিএমকে) ৫০০ কোটি রুপির বেশি অনুদান দিয়েছেন মার্টিন। তাঁর বন্ড কেনার ব্যবসাও শুরু তামিলনাড়ু থেকেই। তবে মার্টিনের দেওয়া অনুদানের বাকি অর্থ আর কোন কোন দল পেয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। 

সামান্য এক শ্রমিক থেকে লটারি কিং হয়ে ওঠা মার্টিনের জীবনকাহিনি খুবই চমকপ্রদ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে ভুটানেও তিনি ব্যবসা বিস্তার করেছেন। তবে নানা রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি, অর্থনৈতিক অনিয়ম, এমনকি লটারি জালিয়াতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। 
 
মার্টিন ১৯৬১ সালে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন মিয়ানমারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পর ১৯৮০-এর দশকে তামিলনাড়ু ফিরে চায়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখানে সবার মধ্যে লটারি টিকিট কেনার তুমুল আগ্রহ দেখে তিনিও লটারি ব্যবসা শুরুর কথা ভাবেন। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর শহরে ব্যবসা শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যেই তামিলনাড়ুর সবচেয়ে বড় লটারি ব্যবসায়ীতে পরিণত হন। 
 
ধীরে ধীরে কর্ণাটক ও কেরালা রাজ্য ও ভারতের উত্তর–পূর্বের রাজ্যগুলোতে মার্টিনের ব্যবসার বিস্তার ঘটতে থাকে। ২০০১ সালে রেডিফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্টিন জানান, তিনি প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখের মতো টিকিট বিক্রি করেন। এরপর থেকে মার্টিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের লটারি কার্যক্রমে জড়িত হতে শুরু করেন। সাক্ষাৎকারে মার্টিন জানান, তিনি তামিলনাড়ু সরকারকে প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ রুপি বিক্রয় কর দেন করেন। এ ছাড়া সিকিম সরকারকেও ৭ লাখ ৫৯ হাজার রুপি অনুদান দেন। 

একই সাক্ষাৎকারে মার্টিন জানান, ব্যবসায় সফলতার কারণ, তিনি ক্রেতার মন বুঝতে পারতেন ও ব্যবসার নানা কৌশলও আয়ত্ত করতে পেরেছেন। তবে মার্টিনের বিরুদ্ধে পুরস্কারের অর্থমূল্য চুরি ও লটারির ড্রতে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। আয়কর বিভাগ এই অভিযোগের তদন্ত করছে। কিন্তু মার্টিন এসব অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁর ব্যবসা নষ্ট করতে প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ সব করছে। 

২০০৩ সালে তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা লটারি টিকিট কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ২০১১ সালে সান্তিয়াগো মার্টিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালে সিকিমে করা এক মামলায় মার্টিনের ৪৫০ কোটি রুপির অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হয়। 

২০০৭ সালে কেরালার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দ স্বীকার করেন, তাঁর দলীয় সংবাদপত্র মার্টিনের কাছ থেকে ২ কোটি রুপি অনুদান পায়। কেলেঙ্কারির ভয়ে পরে সেই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় কেরালায় অবৈধ লটারির বিরুদ্ধে অভিযান চালান অচ্যুতানন্দ। 

মার্টিন ২০১১ সালে ম্যাক্সিম গোর্কির উপন্যাস ‘মা’ অবলম্বনে তামিল ভাষায় একটি সিনেমায় অর্থ লগ্নি করেন। তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে নেতা এম করুণানিধি এই সিনেমার সংলাপ লিখেন। জানা যায় সিনেমাটির বানাতে মোট অর্থ বরাদ্দ ছিল ২০ কোটি রুপি। 

যাই হোক, ২০১৯ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন ‘জুনিয়র ভিকাটান’ নামে এক ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। জুনিয়র ভিকাটান ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়, স্ট্যালিন মার্টিনের কাছ থেকে ডিএমকে পার্টির জন্য ৫০০ কোটি রুপি অনুদান নিয়েছেন। মার্টিন ও ডিএমকে দুই পক্ষই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু সবাই পার্টির ওপর প্রশ্ন তুলে যে, কেন রাজ্যে ইলেকটোরাল বন্ড নিষিদ্ধ হওয়ার পরও পার্টি অনুদান গ্রহণ করেছে। 

মার্টিনের পরিবারের সদস্যরাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার জামাই কংগ্রেস সমর্থিত জোটের অন্তর্ভুক্ত বিদুথালাই চিরুথাইগাল কাচি (লিবারেশন প্যানথার্স পার্টি) এর সদস্য। তা ছাড়া তাঁর স্ত্রী লিমা ইন্ডিয়া জননায়াক কাচ্চির (ইন্ডিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি) সদস্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত