Ajker Patrika

২৫ হাজার রুপি ঋণের জন্য ছেলেকে ‘বন্ধক’, অন্য রাজ্যে মিলল লাশ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ১৫: ০৪
মারা যাওয়া ছেলেটির লাশ তোলার জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: এনডিটিভি
মারা যাওয়া ছেলেটির লাশ তোলার জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: এনডিটিভি

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে ঋণের মাত্র ২৫ হাজার রুপির বিপরীতে ছেলেকে বন্ধক রেখেছিলেন এক নারী। কিছুদিন পর অন্য একটি রাজ্যে সেই ছেলের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় যে দম্পতির কাছে বন্ধক রাখা হয়েছিল, তাদের পরিবারের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতিতে এক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিবারটি এক নারী ও তাঁর তিন সন্তানকে ২৫ হাজার টাকা ঋণের জন্য জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে ‘বন্ধক’ রেখেছিলেন। ওই নারী স্থানীয় একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য। ওই ব্যক্তি ঋণের বিপরীতে ওই নারীর ছেলেকে ‘জামানত’ হিসেবে রেখেছিলেন। পরে ছেলেটির মৃত্যু হলে তার লাশ অন্য এক রাজ্যে গোপনে দাফন করেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ছেলেটি জন্ডিসে মারা গেছে।

অবশেষে ওই নারী যখন চড়া সুদসহ ঋণের টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হন, তখন লোকটি তাঁকে বলেন, তাঁর ছেলে পালিয়ে গেছে। মামলা হওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, ছেলেটি মারা গেছে এবং তিনি তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমে তাঁর শ্বশুরবাড়ির কাছে লাশটি দাফন করেছেন।

মঙ্গলবার পুলিশ যখন ছেলেটির লাশ তোলার জন্য খননকাজ শুরু করে, তখন আনাকাম্মা নামে ওই নারী মাটিতে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন। আনাকাম্মা, তাঁর স্বামী চেঞ্চাইয়া এবং তাঁদের তিন ছেলে ইয়ানাদি উপজাতি সম্প্রদায়ের সদস্য। তারা সবাই তিরুপতির সেই ব্যক্তির পরিবারে এক বছর ধরে কাজ করছিল।

চেঞ্চাইয়ার মৃত্যুর পর ওই ব্যক্তি আনাকাম্মা ও তাঁর তিন সন্তানকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করেন। তিনি বলেছিলেন, চেঞ্চাইয়া তাঁর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলের, তাই তারা চলে যেতে পারবে না।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনাকাম্মা ও তাঁর তিন সন্তানকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। আনাকাম্মা বেশি মজুরির জন্য অনুরোধ করলেও ওই ব্যক্তি রাজি হননি। এ অবস্থায় আনাকাম্মা কাজ ছেড়ে চলে যেতে চাইলে লোকটি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৪৫ হাজার রুপি দাবি করেন, যার মধ্যে ২০ হাজার ছিল সুদ।

আনাকাম্মা টাকা জোগাড় করার জন্য ১০ দিন সময় চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে বলা হয়, তাঁর এক সন্তানকে জামানত হিসেবে রেখে যেতে হবে। আর কোনো উপায় না পেয়ে তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হন। আনাকাম্মা মাঝে মাঝে ফোনে তাঁর ছেলের সঙ্গে কথা বলতেন এবং প্রতিবারই ছেলেটি তাঁকে এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করত। ছেলেটি বলত যে, তাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে। সর্বশেষ ১২ এপ্রিল তাদের কথা হয়েছিল।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে আনাকাম্মা টাকা জোগাড় করেন এবং ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ছেলেকে নেওয়ার জন্য আসছেন। লোকটি প্রথমে তাঁকে বলেন যে, ছেলেটিকে অন্য কোথাও পাঠানো হয়েছে। যখন তিনি আরও তথ্যের জন্য চাপ দিতে থাকেন, তখন লোকটি বলেন যে ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবশেষে তিনি বলেন যে, ছেলেটি পালিয়ে গেছে।

নিজের ছেলের কিছু হয়েছে এমন আশঙ্কায় আনাকাম্মা কিছু উপজাতি সম্প্রদায়ের নেতার সহায়তায় স্থানীয় পুলিশের কাছে যান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেই ব্যক্তি স্বীকার করেন যে, ছেলেটি মারা গেছে এবং তিনি গোপনে কাঞ্চিপুরমে লাশটি দাফন করেছেন। সেই ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিরুপতির কালেক্টর ভেঙ্কটেশ্বর এনডিটিভিকে জানান যে, তারা মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই ব্যক্তির পরিবার বলছে, ছেলেটি জন্ডিসে মারা গেছে। কিন্তু তাঁকে গোপনে দাফন করা হয়েছিল এবং তার পরিবারকে জানানো হয়নি। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

মানবাধিকার কর্মীরা জানান, ইয়ানাদি উপজাতিরা জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি এই সম্প্রদায়ের ৫০ জন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। একজন কর্মী বলেন, ‘সাধারণত, অগ্রিম টাকা দিয়ে ভুক্তভোগীদের ফাঁদে ফেলা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত