Ajker Patrika

ইন্টারনেট গেমিং ডিজঅর্ডার থেকে মুক্ত থাকতে যা করবেন

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

‘ডিজিটাল অন্তরঙ্গতা বাস্তব জীবনের প্রতি আগ্রহ নষ্ট করে। তাই শিশুরা যখন গেম খেলে অথবা জীবনসঙ্গীরা যখন গেমে মগ্ন হয়, তারা প্রকৃত ঘনিষ্ঠতার প্রতি আগ্রহ হারায়। শিশুরা পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও সংযুক্তির প্রয়োজন মেটানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে; যা তাদের ও মা-বাবার মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষয় করে।’—গর্ডন নিউফেল্ড আধুনিক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ইন্টারনেট গেমিং ডিজঅর্ডারকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ সমস্যার মূলে রয়েছে গেমে আসক্তি। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক ও স্বাস্থ্য ধ্বংস হতে পারে।

লক্ষণ কী কী—

শারীরিক ও মানসিক

ঘন ঘন মাথাব্যথা, চোখে জ্বালাপোড়া, অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি।

গেম বন্ধ করলে উদ্বেগ, রাগ বা বিষণ্নতা, উইথড্রয়াল সিম্পটম।

আচরণগত পরিবর্তন

  • পরিবার, কাজ বা পড়াশোনায় অবহেলা।
  • গেমিংয়ের জন্য মিথ্যা বলা বা গোপন করা।
  • সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়া।
  • সময় ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা
  • গেমিংয়ে অতিরিক্ত সময় দেওয়া, সময়ের হিসাব হারানো।

কারণগুলো হলো—

স্নায়বিক

  • ডোপামিন নিঃসরণ: গেমিংয়ের সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ে, যা আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। এই রিওয়ার্ড সিস্টেমের অতিরিক্ত সক্রিয়তা আসক্তি তৈরি করে।
  • প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের দুর্বলতা: মস্তিষ্কের এই অংশ সিদ্ধান্ত নেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গেমে আসক্তদের ক্ষেত্রে এটি কম সক্রিয় থাকে।

মানসিক

  • এসকেপিজম: কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতার মতো বাস্তব জীবনের সমস্যা থেকে পালাতে গেমিংকে ব্যবহার করা।
  • মনোযোগের অভাব (এডিএইচডি) বা বিষণ্নতা: গবেষণায় দেখা গেছে, এডিএইচডি বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা গেমে বেশি আসক্ত হন।

শৈশবকালীন

  • অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা অবহেলা: শৈশবে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা বা অবহেলার কারণে কোনো ব্যক্তি ভার্চুয়াল জগতে স্বাধীনতা খোঁজেন।
  • গেমিংয়ের প্রাথমিক এক্সপোজার: কম বয়সে স্মার্টফোন/কম্পিউটার ব্যবহারের অভ্যাস পরে আসক্তি বাড়ায়।

সামাজিক

  • সামাজিক স্বীকৃতির অভাব: বাস্তব জীবনে সাফল্য বা সম্মান না পেলে ভার্চুয়াল সাফল্যকে গুরুত্ব দেওয়া।
  • পিয়ার প্রেশার: বন্ধুদের সঙ্গে গেমিং কমিউনিটিতে যুক্ত থাকার চাপ।

যা করা যেতে পারে

  • পেশাদারের সাহায্য নিন
  • কগনিটিভ-বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি): এটি গেমিংয়ের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আচরণ পরিবর্তনে সাহায্য করে।
  • সাইকোথেরাপি: দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়।
  • ওষুধ-চিকিৎসা: বিষণ্নতা বা উদ্বেগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খেতে হতে পারে।

সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করুন

  • গেমিংয়ের সময়সীমা নির্ধারণ করুন (যেমন দিনে ১-২ ঘণ্টা)।
  • পারিবারিক কার্যক্রম (যেমন ভ্রমণ, গেমস) বাড়ান।
  • নিজের যত্ন নিন
  • আপনার মানসিক চাপ কমাতে কাউন্সেলিং বা সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিন।

কখন সাইকোথেরাপি নিতে হবে

  • যখন গেমিং ব্যক্তির কাজ, স্বাস্থ্য বা সম্পর্কের ক্ষতি করে।
  • যদি তিনি নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন বা আত্মহত্যার কথা ভাবেন।
  • পারিবারিক সহায়তা কাজ না করলে।

পুনরায় আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি

গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার পর আবার গেমিংয়ে ফিরে যান। এর কারণ:

  • মানসিক চাপ বা একাকিত্ব।
  • গেমিং-সম্পর্কিত পরিবেশ (যেমন বন্ধুদের প্রভাব)।
  • থেরাপি বন্ধ করে দেওয়া।

প্রতিরোধের উপায়

  • নিয়মিত ফলোআপ থেরাপি নেওয়া।
  • স্বাস্থ্যকর শখ (যেমন ব্যায়াম, আর্ট) গড়ে তোলা।

গেমিং ডিজঅর্ডার জেনেটিক, স্নায়বিক ও পরিবেশগত কারণের জটিল মিশ্রণ। তবে সঠিক চিকিৎসা ও পারিবারিক সমর্থনে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ধৈর্য ধরে জীবনসঙ্গীর পাশে থেকে পেশাদারের সাহায্য নিতে দ্বিধা না করা এখানে মুনশিয়ানা।

পরামর্শ: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত