Ajker Patrika

থ্যালাসেমিয়া জিনগত এই রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার

ডা. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ০৮: ৫৬
থ্যালাসেমিয়া জিনগত এই রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার

দেশের ১০ থেকে ১২ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। দেশে আনুমানিক ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে। প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ হাজার শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহকসংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন এবং প্রতিবছর ১ লাখ শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

থ্যালাসেমিয়া হলো উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া রক্তজনিত রোগ। এটি রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিনের অপর্যাপ্ত পরিমাণ অথবা অস্বাভাবিক গঠন তৈরির জন্য দায়ী। লোহিত রক্তকণিকার মধ্যস্থিত হিমোগ্লোবিন শরীরের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন পরিবহন করে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লোহিত রক্তকণিকা বিপুলসংখ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগীর রক্তাল্পতা 
তৈরি করে।

থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ
রোগীর রক্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে থ্যালাসেমিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো থ্যালাসেমিয়া মেজর (অতিমাত্রা), মাইনর (অল্প মাত্রা) এবং ইন্টারমিডিয়া (মধ্যম মাত্রা)। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির হিমোগ্লোবিনের গঠন অনেক ধরনের হতে পারে। সেগুলোর মধ্যে আছে বিটা থ্যালাসেমিয়া, ই বিটা থ্যালাসেমিয়া, হিমোগ্লোবিন ই ডিজিজ, আলফা থ্যালাসেমিয়া, এস বিটা থ্যালাসেমিয়া, হিমোগ্লোবিন এস ডিজিজ, হিমোগ্লোবিন ডি পাঞ্জাব, হিমোগ্লোবিন ডি আরব ইত্যাদি।

রোগের কারণ ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। মা অথবা বাবা, কিংবা মা-বাবা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানদের আক্রান্ত করে। মা ও বাবা উভয়ে থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হলে ভূমিষ্ঠ শিশুর ২৫ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া নির্ধারণ করা সম্ভব। এ জন্য কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ও হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামের দুটি পরীক্ষা করানো হয়।

রক্ত পরীক্ষায় সাধারণত যে পরিবর্তনগুলো দেখা যায়

  • অপর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট রক্তকণিকা।
  • ফ্যাকাশে লোহিত কণিকা।
  • লোহিত কণিকায় আনইভেন হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি।

লক্ষণ ও উপসর্গ

  • থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গগুলো মূলত রক্তস্বল্পতাজনিত উপসর্গ। 
  • ক্লান্তি, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাশে ত্বক ইত্যাদি।
  • রক্ত বেশি ভেঙে যায় বলে জন্ডিস হয়ে ত্বক হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবও হলুদ হতে পারে।
  • প্লীহা ও যকৃৎও বড় হয়ে যেতে পারে।
  • অস্থির ঘনত্ব কমে যেতে পারে।
  • নাকের হাড় দেবে যাওয়া ও মুখের গড়নে পরিবর্তন আসা।
  • শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • দিনে দিনে জটিলতা বাড়তে থাকে।

প্রতিরোধের উপায়
শুধু বংশানুক্রমিকভাবে যোগসূত্র থাকা ব্যক্তিই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়; অর্থাৎ আক্রান্ত শিশু এ রোগ নিয়েই জন্ম নেয়। ফলে জিনগত এই ব্যাধি থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। তবে এর জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করার জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
স্বামী বা স্ত্রী—যে কারও এই রোগ থাকলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিকস কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যঝুঁকির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনাটাই মূল উদ্দেশ্য।

একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর জীবনধারণ পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। এখানে প্রথমেই নজর দিতে হয় খাবারের দিকে। এ সময় সহায়ক খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে হবে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল ও সবজি। যেমন কমলা, আঙুর, সবুজ ও লাল মিষ্টি মরিচ, স্ট্রবেরি, কিউইফল, ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি।

তবে এড়িয়ে চলতে হবে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। এই তালিকায় রয়েছে মাছ, মাংস ও পালংশাক। খাদ্যাভ্যাস গঠনের পাশাপাশি মনোনিবেশ করতে হবে শরীরচর্চার প্রতিও। মূলত খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা পরিপূর্ণভাবে থ্যালাসেমিয়া নিরাময় করতে পারে না, তবে এতে ঝুঁকির তীব্রতা অনেকটা উপশম হয়।

পরামর্শ দিয়েছেন:
ডা. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (হেমাটোলজি), রক্তরোগ ও ব্লাড ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত