Ajker Patrika

শিক্ষক-সংকটে পাঠদান ব্যাহত

পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি
শিক্ষক-সংকটে পাঠদান ব্যাহত

পরশুরাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৩৬টি পদের শিক্ষকশূন্যতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, উপজেলা শিক্ষা অফিসের নিয়মিত তদারকির অভাবসহ নানা সংকটের কারণে প্রাথমিকে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অভিভাবকেরা এমন অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করে শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ে স্কুলে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছেন। ইউএনও বলেন, ‘কয়েকটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দেখে দেখে ঠিকভাবে বাংলা পড়তে পারে না। স্কুলের শিক্ষকরাও যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত হন না। পাঠদানে শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে আন্তরিকতার ঘাটতি।’

পরশুরাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় সর্বমোট ৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩১টি। ১০ জনের মতো মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন অজুহাতে ছুটিতে রয়েছেন।

অন্যদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসেও রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর শূন্যতা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন দায়িত্ব পালন করলেও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা চারজনের মধ্যে একজন কর্মরত। বাকি তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে চার বছর আগে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হলে তিনি সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুতি হয়েছেন। সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) সুমন দেব অফিসে উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও রহস্যজনকভাবে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। শুধু অর্ধেক বেতনভাতাসহ নানা সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে সুমনদেবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া অফিসের উচ্চমান সহকারীর এক, অফিস সহকারীর দুই এবং অফিস পিয়নের একটি পদ শূন্য রয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করার কথা থাকলেও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতি মাসে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতি মাসে ১০টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করার নিয়ম রয়েছে, তবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির বেশ কয়েকজন সভাপতি বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষক স্কুলে যথাসময়ে উপস্থিত হন না। সকাল ৯টায় ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উপজেলার বেশির ভাগ স্কুলে ক্লাস শুরু হয় ১০টা সাড়ে ১০টার পর। আবার ছুটি হয়ে যায় আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ৪টার অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যায়।

পরশুরাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে নারী শিক্ষকেরা পরিবহনসংকটের কারণে উপস্থিত হতে পারেন না। তবে বেশির ভাগ শিক্ষক ১০টার মধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নেন।

মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি রয়েছে। 
পরশুরাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, অফিসের এটিও সংকটসহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের স্কুলে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করে শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হওয়ার বিষয় সত্যতা পেয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতিও রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী দেখে দেখেও বাংলা পড়তে পারছে না। শিক্ষকদের আরও আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদানে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত