Ajker Patrika

গঙ্গা চুক্তির পর্যালোচনা চাইবে বাংলাদেশ

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২২, ১০: ২৯
গঙ্গা চুক্তির পর্যালোচনা চাইবে বাংলাদেশ

গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সর্বশেষ চুক্তিটি সই হয় ১৯৯৬ সালে। ৩০ বছর মেয়াদি এ চুক্তির ২৬ বছর পার হয়ে গেছে। বাকি আছে চার বছর। ১২ বছর আগে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি আজও সই হয়নি ভারতের কারণে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন চার বছর পর গঙ্গা চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে—তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গেছে সরকারের ভেতরে। ভাবছেন পানি বিশেষজ্ঞরাও।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার মধ্যে গঙ্গার পানি নিয়ে যে চুক্তিটি সই হয়েছিল তাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন ভারতের প্রভাবশালী বাম রাজনীতিক জ্যোতি বসু। তিনি এখন পরলোকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়াও এখন অশীতিপর। রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। তবে বাংলাদেশে নেতৃত্ব শেখ হাসিনার হাতে আছে। দুই দেশের সরকারেরই দাবি, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের স্বর্ণযুগ চলছে এখন। তবুও পানি ভাগাভাগিসহ নানা ইস্যুতে দর-কষাকষির বেকায়দা ধরনে স্বস্তিতে নেই সরকার। এর বড় কারণ, চূড়ান্ত হওয়ার পরও তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যর্থতা। এই বিবেচনা থেকেই গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকার।

গঙ্গা চুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ৭ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। বর্তমান চুক্তিটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তাঁরা যে সুপারিশ করবেন, তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পানিবণ্টনের আলোচনাকে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিস্তাসহ অন্য নদী নিয়ে তাদের (ভারত) মনে কী আছে এটা বোঝা মুশকিল। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হচ্ছে না ১২ বছর হলো। আমরা বলেছি, সিদ্ধান্তে আসতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু বৈঠকে বসতে অসুবিধা কোথায়?’

বাংলাদেশ ও ভারত শুকনো মৌসুমের পাঁচ মাস (জানুয়ারি থেকে মে) ফারাক্কা বাঁধে প্রাপ্ত গঙ্গার পানি ভাগাভাগির জন্য ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তিটি স্বাক্ষর করে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে এই চুক্তির পুরো সুফল বাংলাদেশ পায়নি। এ কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উভয় তরফে চুক্তিটি পর্যালোচনা করা জরুরি। বর্তমান চুক্তিতেই এমন বিধান আছে বলে তাঁরা জানান।

গঙ্গা চুক্তি পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, কমিটি সরকারের দর-কষাকষির সুবিধার জন্য কিছু সুপারিশমালা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের ওয়েজেনিজেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কানাডার আলবার্টা পরিবেশ ও পার্ক বিভাগে কর্মরত তিন গবেষক ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রথম ২৩ বছর শুকনো মৌসুমের ৬৫ ভাগ সময় বাংলাদেশ পানি কম পেয়েছে।

১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের ফারাক্কা ও বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ রেল সেতু এলাকায় পানিপ্রবাহের সরকারি পরিসংখ্যান যাচাই করে ‘গঙ্গার পানি ভাগাভাগি প্রক্রিয়া পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান চুক্তির প্রধান দুর্বলতাগুলো হলো ভবিষ্যতে ফারাক্কায় কী পরিমাণ পানি পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে ভুল পূর্বাভাস দেওয়া, শুকনো মৌসুমে ফারাক্কার ভাটিতে যথেষ্ট পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা না থাকা, হার্ডিঞ্জ রেল সেতু এলাকায় কী পরিমাণ পানি পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত না করা, ১৯৭৭ সালের চুক্তির মতো নিশ্চয়তামূলক অনুচ্ছেদ (গ্যারান্টি ক্লজ) না থাকা এবং নদীর প্রবাহের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক নির্দেশকগুলো বিবেচনায় না রাখা। ১৯৭৭ সালের চুক্তিতে শুকনো মৌসুমে ফারাক্কায় প্রাপ্ত পানির অন্তত ৮০ ভাগ বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা দেওয়া নিশ্চিত করতে চুক্তি নবায়নকালে একটি নিশ্চয়তামূলক অনুচ্ছেদ (গ্যারান্টি ক্লজ) সংযুক্ত করার জন্য গবেষকরা প্রতিবেদনে সুপারিশ করেন।

ভারত ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সীমান্তে গঙ্গার ওপর ফারাক্কা বাঁধ চালু করার পর নদীর বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত