Ajker Patrika

দুশ্চিন্তার সাগরে নিহত সংবাদকর্মীর পরিবার

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১২: ২১
দুশ্চিন্তার সাগরে নিহত সংবাদকর্মীর পরিবার

ঝালকাঠি শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে শেখেরহাট ইউনিয়নের শিরজুগ গ্রামে নিহত সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের গ্রামের বাড়ি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়িচাপায় তাঁর মৃত্যুর হয়। এখন দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ আর বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে দুশ্চিন্তার সাগরে পড়েছেন স্ত্রী নাদিরা পারভীন রেখা।

আহসান কবির খানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজনেরা কবর জিয়ারত করছেন। ঘরের ভেতরে শোকার্ত বাবা আবদুল মান্নান খান, মা আমেনা বেগম, স্ত্রী নাদিরা পারভীন রেখা, ছেলে সাদমান শাহরিয়ার কাইফ ও মেয়ে সাফরিন কবির দিয়া বসে বিলাপ করছেন। বাড়ির সামনেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাঁর লাশ।

আহসান কবির খানের স্ত্রী নাদিরা পারভীন রেখা বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার মগবাজারের সোনালীবাগ চান বেকারী গলির বাসায় একসঙ্গে পরিবারের সবাই নাস্তা করি। কোনো একটি গার্মেন্টসে মালামাল দেওয়ার কথা ছিল। এটা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর ব্যস্ততা ছিল। ছেলেমেয়ে অঙ্ক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ভালো করে পড়ালেখার পরামর্শ দিয়ে বাসা থেকে বের হন আহসান কবির। শুনেছি মালামাল কিনে মিরপুরের দিকে যাওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের চাপায় তাঁর মৃত্যু হয়।’

নাদিরা পারভীন রেখা বলেন, ‘আমার স্বামীর জমানো কোনো অর্থ নেই। গার্মেন্টসের বিভিন্ন মালামাল সরবরাহের পেছনে তাঁর কিছু টাকা বিনিয়োগ করা আছে। কিন্তু এই টাকা কোথায় আছে, আমি তা জানি না। পত্রিকায় চাকরি আর ব্যবসার টাকায় আমাদের দুটি সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ চলত। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শূন্য হয়ে পড়েছি। ছেলে ও মেয়ের পড়ালেখার জন্য আমাকে ঢাকায় থাকতে হবে। মালিবাগ ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুলে ছেলে নবম শ্রেণিতে এবং মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের রিকশায় স্কুলে নিয়ে যেত কবির। আমি গিয়ে আনতাম। এখন আর বাবার সঙ্গে স্কুলে যাওয়া হবে না ছেলেমেয়ের। আমি এখনো জানি না কীভাবে আমাদের সংসার চলবে। একটি মৃত্যু যেন পরিবারের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।’

নাদিরা পারভীন রেখা আরও বলেন, ‘আমি বিএ পাস করেছি, কিন্তু চাকরি করি না। এখন আমার একটি চাকরি প্রয়োজন। অন্তত সন্তানের পড়ালেখা ও বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সংসার চালানোর জন্য। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পক্ষ থেকে একজন উপসচিব (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তিনি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমি পড়ালেখা জানি, তাই আমাকে যেন সিটি করপোরেশনে একটি চাকরি দেওয়া হয়। তা না হলে আমাদের বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে।’

কবীরের ছেলে সাদমান শাহরিয়ার কাইফ বলেন, ‘বাবা আমাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বুয়েটে পড়ে একদিন আমি ইঞ্জিনিয়ার হব, আমার বোন ডাক্তার হবে। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন এখন স্বপ্নই রয়ে গেল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত