থামছে না মৃত্যুর মিছিল

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেন হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। কিন্তু এই মহাসড়কে কোনোভাবেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল। সরকারি হিসাবে চলতি বছরে ১৪৬টি দুর্ঘটনায় ৯৪ জনের প্রাণ গেছে এই সড়কে। মহাসড়কের পাশে কলকারখানা, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং, অনিয়ন্ত্রিত গতিসহ সব ধরনের যান চলাচল এসব দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই সড়কে ১৪৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের। আহত হয়েছেন ১৮৩ জন। তবে এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ৪৯টি। জিডি হয়েছে ৯৬টি। ২০২০ সালে ২১১টি দুর্ঘটনায় এই সড়কে ৩৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।

ত্রিশালের বগারবাজার এলাকার ব্যবসায়ী হাসেম আলী বলেন, মহাসড়কের বগারবাজার এলাকায় ২০ অক্টোবর একটি লেগুনা ইউটার্ন নেওয়ার সময় ঢাকাগামী ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়। অথচ মহাসড়কে লেগুনা চলার নিয়ম নেই। এগুলো প্রশাসন দেখেও দেখে না।

হাসেম আলী আরও বলেন, এর আগে ১৬ অক্টোবর দুটি বাস একসঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল। ত্রিশালের চেলেরঘাট এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে সাত বাসযাত্রীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আহমদ খান বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ কারখানা। মহাসড়কের পাশে কোনো কারখানা থাকার নিয়ম নেই। মহাসড়কের ওপর রয়েছে বাজার, নেই তাঁদের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। কিভাবে প্রশাসন এগুলো অনুমোদন দেয় তা বোধগম্য নয়।

এসপি আলী আহমদ খান আরও বলেন, কারখানার শ্রমিকদের কারণে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। মহাসড়কে নেই কোনো ফুটপাত। মানুষ যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তবে এগুলো ছাড়াও মহাসড়কে দুর্ঘটনার বড় কারণ দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ময়মনসিংহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মহাসড়ক শুধু নামের। মহাসড়কের ওপর যেমন চলছে অবৈধ গাড়ি, রাখা হচ্ছে রাস্তার পাশে বালু। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ার পাশাপাশি মহাসড়ক ঘেঁষে কলকারখানা হওয়ায় দুর্ঘটনাও কমছে না। দুর্ঘটনা কমাতে হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ওই মহাসড়ক চার লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার আগে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়নি। যার ফলে আজকে চার লেন দুই লেনে রূপান্তরিত হয়েছে। যত্রতত্র গাড়ি পাকিং, বাজার, কারখানাসহ সড়কজুড়ে বালুবাহী ট্রাকের কারণে একদিকে ভাঙছে রাস্তা, অন্যদিকে ঘটছে দুর্ঘটনা।

নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান আরও বলেন, অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগামী বছর তা মেরামতের জন্য ৩৫ কোটি টাকার মতো বাজেট চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় আরও দুর্ঘটনা ঘটবে।

ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ তিন চাকার যান। অনেক সময় এসব যান উল্টো পথে চলে। এ কারণেও দুর্ঘটনা বেড়েছে। দুর্ঘটনা কমাতে হলে তিন চাকার যান চলতে দেওয়া যাবে না।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা) ময়মনসিংহের সভাপতি আবদুল কাদির চৌধুরী মুন্না বলেন, রাস্তায় খানাখন্দ, অটোরিকশাসহ অপ্রাপ্ত ও অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া ডিভাইডার ও ইউটার্ন পরিকল্পিত না হওয়ায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে।