স্বপ্না রেজা
ডিসেম্বর ও মার্চ মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার হতে দেখা যায়। শিশু, কিশোর, যুবকদের জন্য তো বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা যায়। সেই প্রয়োজনবোধ না থাকাটা পাকিস্তানপ্রীতি বিস্তারে সহায়ক কি না, কে ভাবছি সেই কথা?
‘এ দেশের কিছু মানুষের ভেতরটা এখনো পাকিস্তান বলে মনে হয়। এদের সংখ্যা বাড়ছে। কেন বলুন তো?’ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন একজন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত তিনি। কাজের সুবাদে মাঠেঘাটে, গ্রামগঞ্জে ছোটাছুটি করা মানুষ। তাঁর সংশয়, উদ্বিগ্নতা বা প্রশ্ন গ্রামের মানুষকে ঘিরে নয়, বরং অধিকাংশ শহরাঞ্চলের মানুষকে ঘিরে। এর মধ্যে আছে সমাজের শিক্ষিত, বিত্তবান শ্রেণি, রাজনীতিক ও ছাত্রসমাজ। সমাজে এক প্রভাবশালী অবস্থান নিয়ে এই শ্রেণি বিচরণ করে থাকে। এদের একটা অংশ সহজে তাদের ভেতরকার আসল রূপ প্রকাশ করে না, ভেতরটাকে লুকিয়ে রাখে। আবার আরেকটা অংশ সহজেই বিরূপ অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে।
অর্থাৎ, প্রকাশ্যে প্রাদেশিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পাকিস্তানপ্রীতিতে কাতর হয়। সংকোচ নেই, বরং উচ্ছ্বাস দেখা যায়। আশ্চর্য হতে হয়, স্বাধীন দেশের সব নাগরিক সুবিধা ভোগ করে এই পরগাছারা প্রাদেশিক ধ্যানে মগ্ন। দেশকে সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নাগরিকদের ভেতরে সংশয়, শঙ্কা ও প্রশ্ন জাগে। এটা তো ঠিক যে বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পর একজন নাগরিকের এমন প্রশ্ন সত্যিই উদ্বেগের। ভিন্ন আশঙ্কার সংকেত দেয় বৈকি। নীতিনির্ধারক, সমাজবিদ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকদের এ নিয়ে ভাবতে হবে।
এমন প্রশ্নের উত্তর এক নয়, একাধিক হতে পারে, যদি তার আশঙ্কা সত্যি হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বাঙালি চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক, তারা কিন্তু পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত থেকেছে। আজও থাকছে। সেই সময় আলবদর, রাজাকারের পরিচয়ে বাঙালি হত্যায় ইন্ধন জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী হত্যার কালো নকশা এবং নারীদের সম্ভ্রমহানির বর্বরতা, তা কিন্তু সম্ভব হতে পেরেছে এই আলবদর ও রাজাকারদের সহায়তায়। একজন ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং পারিবারিকভাবেই এরা পাকিস্তানের দোসর হয়ে থেকেছে, এখনো থাকছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো সক্রিয়। শুধু ধরন পাল্টেছে। বলা বাহুল্য, বংশপরম্পরায় এদের উত্তরসূরিরা সেই আদর্শই বহন করছে। এহেন মুখোশধারীরা মিশে গেছে সমাজের সব স্তরে, প্রতিষ্ঠানে। নাগরিক জীবনযাপনে। কৌশলে ছড়াচ্ছে তাদের হীন উদ্দেশ্য। স্বার্থ উদ্ধারে কৌশল বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ এদের ধরতে পারে না প্রকাশ্যে অঘটন না ঘটলে। কেউ কেউ আশঙ্কা করে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির ভেতরেও এই স্বাধীনতাবিরোধী মুখোশধারীরা ঢুকে গেছে এবং এরাই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর ও ক্ষতিকর। এদের সহজে শনাক্ত করা যায় না, অথচ করা দরকার।
অনেকেই মনে করে, সাম্প্রতিক সময়ে পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় উসকানিমূলক যে তথ্য উপস্থাপন, যৌন নিপীড়নের হাত থেকে নারীর রক্ষা পাওয়ার কৌশল বর্ণনা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অস্পষ্টতা, তা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকাশ করে না, জাগিয়ে দেয় না। বরং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যে প্রতিবন্ধকতা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য ধারণে বাধা দেয়। বুঝতে দেয় না, অনুভবে পৌঁছায় না। এমন দায়িত্বশীলদের মনমানসিকতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অতিসত্বর করা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সহজ ও বোধগম্যভাবে উপযুক্ত ব্যক্তি ও প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত হওয়া দরকার। যদিও মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে, তবে তার কতটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়েছে কিংবা যুদ্ধ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছে তা নিরূপণ বা মূল্যায়ন হওয়া দরকার। এ নিয়ে কিন্তু সংশয় বা অতৃপ্তি রয়েই যায়। মুক্তিযুদ্ধের বই যোগ্য ব্যক্তি ও প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হওয়া যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রতিটি নাগরিকের কাছে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ—সবার কাছে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই পৌঁছে দেওয়ার একটা বড় উদ্যোগ থাকা দরকার ছিল। স্বাধীনতার ১০ বা ১৫ বছর পর কিংবা তারও পরে যারা জন্মেছে, এমনকি যারা ভবিষ্যতে জন্মাবে, তাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কী শিক্ষা, জ্ঞান বা ধারণা দেওয়া হচ্ছে, তা গভীরভাবে না দেখাটা প্রাদেশিক চেতনাকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল বৈকি। এ ছাড়া দেশের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনে গড়িমসি কিংবা উদাসীনতা সমাজে প্রাদেশিক ভাবনার বিস্তারে সহায়তা করে। এই সহায়ক গোষ্ঠীকে চেনা দরকার, যে কাজটি করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বিভাগ।
মাঝে মাঝে অভিযোগ উত্থাপিত হয় যে পাঠ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এটা কী করে সম্ভব? সম্ভব হতেই পারে, যদি না সংশ্লিষ্টদের আবির্ভাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনাশ করার লক্ষ্যে হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো, আজ অব্দি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সঠিকভাবে না হওয়া। মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায়, আবার রাজাকারের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাটা ছিল বড় বিস্ময়। এমন একটি সংবেদনশীল বিষয়ে কী করে ভুল হয় তা বোধগম্য নয়। এতে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে তা হলো, সংশ্লিষ্টদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কেবল কাগজে-কলমে, চেতনায় নয়।
কেউ কেউ মনে করে, রাজনৈতিক দল পরিবর্তন রাষ্ট্র ও সমাজকে ঝুঁকিতে ফেলে। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি এবং একইভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদান, এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজে মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরিণত হয়। যেহেতু প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই থাকে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ, চেতনা এবং সৃষ্টির উৎস। আওয়ামী লীগ যে চেতনা ও আদর্শ নিয়ে সংগঠিত হয়েছে, বিএনপি কিন্তু তা নিয়ে নয়। তাহলে দল বদল হওয়া রাজনীতিকের মৌলিকত্ব যেমন থাকে না, তেমনি থাকে না দেশের স্বার্থে তাঁর উন্নত মনমানসিকতা। এই শ্রেণি পারতপক্ষে নিজের স্বার্থে রাজনীতি করে। রাজনীতিকে উত্তম পেশা হিসেবে বেছে নেয়। ইতিবাচক সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বড় প্রতিবন্ধক মিশ্র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ, আকর্ষণ বাড়তে দেয় না এই মিশ্র দলবদল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই শ্রেণির রাজনীতিকেরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার কাজটি করে না সেই রকম দায়িত্ববোধ অনুভব করে না বলেই।
কী করছে মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যমগুলো? অসংখ্য প্রচারমাধ্যম এখন দেশে। ডিসেম্বর ও মার্চ মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার হতে দেখা যায়। শিশু, কিশোর, যুবকদের জন্য তো বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা যায়। সেই প্রয়োজনবোধ না থাকাটা পাকিস্তানপ্রীতি বিস্তারে সহায়ক কি না, কে ভাবছি সেই কথা? আমি জোর গলায় বলতে পারি, রাষ্ট্রের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বারতা নিয়েই অধিকাংশ মিডিয়ার লাইসেন্স পাওয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রকৃত ইতিহাস সঠিকভাবে কেউ জানতে না পারার ব্যর্থতার দায় কিন্তু তাদেরও। বিশেষ দিবস উদ্যাপনের মতো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠান প্রচার নয়, বরং বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান, লেখনী প্রচার ও প্রকাশ পাওয়া দরকার। এটা তো সত্য, মুক্তিযুদ্ধ না জানলে, না বুঝলে, হৃদয়ে না ধারণ করলে পাকিস্তান বা প্রাদেশিক প্রীতি বাড়ার আশঙ্কা তো থাকবেই। এই দায় কিন্তু আমাদের সবার এবং সেটা প্রত্যেকের জায়গা থেকেই।
ডিসেম্বর ও মার্চ মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার হতে দেখা যায়। শিশু, কিশোর, যুবকদের জন্য তো বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা যায়। সেই প্রয়োজনবোধ না থাকাটা পাকিস্তানপ্রীতি বিস্তারে সহায়ক কি না, কে ভাবছি সেই কথা?
‘এ দেশের কিছু মানুষের ভেতরটা এখনো পাকিস্তান বলে মনে হয়। এদের সংখ্যা বাড়ছে। কেন বলুন তো?’ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন একজন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত তিনি। কাজের সুবাদে মাঠেঘাটে, গ্রামগঞ্জে ছোটাছুটি করা মানুষ। তাঁর সংশয়, উদ্বিগ্নতা বা প্রশ্ন গ্রামের মানুষকে ঘিরে নয়, বরং অধিকাংশ শহরাঞ্চলের মানুষকে ঘিরে। এর মধ্যে আছে সমাজের শিক্ষিত, বিত্তবান শ্রেণি, রাজনীতিক ও ছাত্রসমাজ। সমাজে এক প্রভাবশালী অবস্থান নিয়ে এই শ্রেণি বিচরণ করে থাকে। এদের একটা অংশ সহজে তাদের ভেতরকার আসল রূপ প্রকাশ করে না, ভেতরটাকে লুকিয়ে রাখে। আবার আরেকটা অংশ সহজেই বিরূপ অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে।
অর্থাৎ, প্রকাশ্যে প্রাদেশিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পাকিস্তানপ্রীতিতে কাতর হয়। সংকোচ নেই, বরং উচ্ছ্বাস দেখা যায়। আশ্চর্য হতে হয়, স্বাধীন দেশের সব নাগরিক সুবিধা ভোগ করে এই পরগাছারা প্রাদেশিক ধ্যানে মগ্ন। দেশকে সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নাগরিকদের ভেতরে সংশয়, শঙ্কা ও প্রশ্ন জাগে। এটা তো ঠিক যে বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পর একজন নাগরিকের এমন প্রশ্ন সত্যিই উদ্বেগের। ভিন্ন আশঙ্কার সংকেত দেয় বৈকি। নীতিনির্ধারক, সমাজবিদ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকদের এ নিয়ে ভাবতে হবে।
এমন প্রশ্নের উত্তর এক নয়, একাধিক হতে পারে, যদি তার আশঙ্কা সত্যি হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বাঙালি চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক, তারা কিন্তু পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত থেকেছে। আজও থাকছে। সেই সময় আলবদর, রাজাকারের পরিচয়ে বাঙালি হত্যায় ইন্ধন জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী হত্যার কালো নকশা এবং নারীদের সম্ভ্রমহানির বর্বরতা, তা কিন্তু সম্ভব হতে পেরেছে এই আলবদর ও রাজাকারদের সহায়তায়। একজন ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং পারিবারিকভাবেই এরা পাকিস্তানের দোসর হয়ে থেকেছে, এখনো থাকছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো সক্রিয়। শুধু ধরন পাল্টেছে। বলা বাহুল্য, বংশপরম্পরায় এদের উত্তরসূরিরা সেই আদর্শই বহন করছে। এহেন মুখোশধারীরা মিশে গেছে সমাজের সব স্তরে, প্রতিষ্ঠানে। নাগরিক জীবনযাপনে। কৌশলে ছড়াচ্ছে তাদের হীন উদ্দেশ্য। স্বার্থ উদ্ধারে কৌশল বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ এদের ধরতে পারে না প্রকাশ্যে অঘটন না ঘটলে। কেউ কেউ আশঙ্কা করে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির ভেতরেও এই স্বাধীনতাবিরোধী মুখোশধারীরা ঢুকে গেছে এবং এরাই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর ও ক্ষতিকর। এদের সহজে শনাক্ত করা যায় না, অথচ করা দরকার।
অনেকেই মনে করে, সাম্প্রতিক সময়ে পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় উসকানিমূলক যে তথ্য উপস্থাপন, যৌন নিপীড়নের হাত থেকে নারীর রক্ষা পাওয়ার কৌশল বর্ণনা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অস্পষ্টতা, তা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকাশ করে না, জাগিয়ে দেয় না। বরং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যে প্রতিবন্ধকতা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য ধারণে বাধা দেয়। বুঝতে দেয় না, অনুভবে পৌঁছায় না। এমন দায়িত্বশীলদের মনমানসিকতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অতিসত্বর করা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সহজ ও বোধগম্যভাবে উপযুক্ত ব্যক্তি ও প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত হওয়া দরকার। যদিও মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে, তবে তার কতটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়েছে কিংবা যুদ্ধ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছে তা নিরূপণ বা মূল্যায়ন হওয়া দরকার। এ নিয়ে কিন্তু সংশয় বা অতৃপ্তি রয়েই যায়। মুক্তিযুদ্ধের বই যোগ্য ব্যক্তি ও প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হওয়া যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রতিটি নাগরিকের কাছে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ—সবার কাছে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই পৌঁছে দেওয়ার একটা বড় উদ্যোগ থাকা দরকার ছিল। স্বাধীনতার ১০ বা ১৫ বছর পর কিংবা তারও পরে যারা জন্মেছে, এমনকি যারা ভবিষ্যতে জন্মাবে, তাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কী শিক্ষা, জ্ঞান বা ধারণা দেওয়া হচ্ছে, তা গভীরভাবে না দেখাটা প্রাদেশিক চেতনাকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল বৈকি। এ ছাড়া দেশের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনে গড়িমসি কিংবা উদাসীনতা সমাজে প্রাদেশিক ভাবনার বিস্তারে সহায়তা করে। এই সহায়ক গোষ্ঠীকে চেনা দরকার, যে কাজটি করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বিভাগ।
মাঝে মাঝে অভিযোগ উত্থাপিত হয় যে পাঠ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এটা কী করে সম্ভব? সম্ভব হতেই পারে, যদি না সংশ্লিষ্টদের আবির্ভাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনাশ করার লক্ষ্যে হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো, আজ অব্দি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সঠিকভাবে না হওয়া। মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায়, আবার রাজাকারের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাটা ছিল বড় বিস্ময়। এমন একটি সংবেদনশীল বিষয়ে কী করে ভুল হয় তা বোধগম্য নয়। এতে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে তা হলো, সংশ্লিষ্টদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কেবল কাগজে-কলমে, চেতনায় নয়।
কেউ কেউ মনে করে, রাজনৈতিক দল পরিবর্তন রাষ্ট্র ও সমাজকে ঝুঁকিতে ফেলে। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি এবং একইভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদান, এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজে মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরিণত হয়। যেহেতু প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই থাকে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ, চেতনা এবং সৃষ্টির উৎস। আওয়ামী লীগ যে চেতনা ও আদর্শ নিয়ে সংগঠিত হয়েছে, বিএনপি কিন্তু তা নিয়ে নয়। তাহলে দল বদল হওয়া রাজনীতিকের মৌলিকত্ব যেমন থাকে না, তেমনি থাকে না দেশের স্বার্থে তাঁর উন্নত মনমানসিকতা। এই শ্রেণি পারতপক্ষে নিজের স্বার্থে রাজনীতি করে। রাজনীতিকে উত্তম পেশা হিসেবে বেছে নেয়। ইতিবাচক সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বড় প্রতিবন্ধক মিশ্র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ, আকর্ষণ বাড়তে দেয় না এই মিশ্র দলবদল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই শ্রেণির রাজনীতিকেরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার কাজটি করে না সেই রকম দায়িত্ববোধ অনুভব করে না বলেই।
কী করছে মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যমগুলো? অসংখ্য প্রচারমাধ্যম এখন দেশে। ডিসেম্বর ও মার্চ মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার হতে দেখা যায়। শিশু, কিশোর, যুবকদের জন্য তো বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা যায়। সেই প্রয়োজনবোধ না থাকাটা পাকিস্তানপ্রীতি বিস্তারে সহায়ক কি না, কে ভাবছি সেই কথা? আমি জোর গলায় বলতে পারি, রাষ্ট্রের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বারতা নিয়েই অধিকাংশ মিডিয়ার লাইসেন্স পাওয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রকৃত ইতিহাস সঠিকভাবে কেউ জানতে না পারার ব্যর্থতার দায় কিন্তু তাদেরও। বিশেষ দিবস উদ্যাপনের মতো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠান প্রচার নয়, বরং বছরব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান, লেখনী প্রচার ও প্রকাশ পাওয়া দরকার। এটা তো সত্য, মুক্তিযুদ্ধ না জানলে, না বুঝলে, হৃদয়ে না ধারণ করলে পাকিস্তান বা প্রাদেশিক প্রীতি বাড়ার আশঙ্কা তো থাকবেই। এই দায় কিন্তু আমাদের সবার এবং সেটা প্রত্যেকের জায়গা থেকেই।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫