Ajker Patrika

ধলেশ্বরীতে চর, নাব্য সংকট

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ২৬
ধলেশ্বরীতে চর, নাব্য সংকট

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদী দিন দিন মরে যাচ্ছে। প্রায় ১৭ মাইল দৈর্ঘ্যের এই নদীর বিভিন্ন অংশে জেগেছে চর। শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্য অনেক কমে যায়। তখন নদীর বুকে থাকে হাঁটু পানি। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় নৌযান চলাচল। শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় কৃষিজমিতে সেচ সংকট। তা ছাড়া এ সময় স্থানীয় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নাব্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত নদী খনন করা হোক।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনার এই শাখা নদীর শুরু হয়েছে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের ইকুরদিয়া গ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে। সেখান থেকে শুরু হয়ে পূর্ব অষ্টগ্রাম, অষ্টগ্রাম সদর, কাস্তুল, বাজিতপুরের হুমায়ূনপুর ইউনিয়ন, দেওঘর ইউনিয়ন হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মেঘনা নদীতে গিয়ে আবার মিলেছে। এই নদীর পানি থেকে, তীরের কয়েক হাজার হেক্টর বোরো জমিতে সেচ দেওয়া হয়। তা ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা শহর বা উজান এলাকার সঙ্গে নৌ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই নদী। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা পলিমাটি ও নদীতে নানাভাবে মাছের ঘের তৈরি করাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্য কমছে দিন দিন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ইকুরদিয়া থেকে কালীপুর হয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সেতুর পশ্চিমে সাভিয়ানগর বাজার পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন অংশে জেগেছে কয়েকটি চর। শুষ্ক মৌসুমে মাঝনদীতে চোখে পড়ে ধান চাষ করার দৃশ্য। এখন ধলেশ্বরীতে পানির দেখা মেলে খালের মতো। নদীর উভয় তীরে দেখা যায় অলস পড়ে আছে জেলেদের নৌকা ও হাওরে যাত্রী পরিবহনের জন্য চলাচল করা নৌকাগুলো। নদীতে পানি স্বল্পতার কারণে অষ্টগ্রামের লঞ্চঘাট কয়েক বছর আগে চলে গেছে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের কাস্তুল ইউনিয়নে। শুষ্ক মৌসুমে হুমায়ূনপুর থেকে কাস্তুল পর্যন্ত লঞ্চ ও নৌকা চলাচল বিঘ্নিত হয়। অষ্টগ্রাম ও কাস্তুল বাজারের মালামাল পরিবহনের নৌকা থামে সদর হতে ৬ কিলোমিটার দূরের সবুরের খালে। বছর বছর নদীতে নতুন নতুন চর জেগে উঠছে। এতে উদ্বিগ্ন ধলেশ্বরী পাড়ের মানুষেরা। অচিরেই নদী খনন না হলে সেচ সংকটে বাধাগ্রস্ত হবে বোরো উৎপাদন। বেকার হবে জেলে ও পরিবহন শ্রমিক। যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে বাড়বে ব্যয়।

জিয়াউর রহমান নামের এক স্থানীয় কৃষক বলেন, ‘নদীতে ঠিকমতো পানি না থাকলে সঠিক সময়ে সেচ দেওয়া যায় না। মাঝে মাঝে দুই সেচ দিতে হয়।’

স্থানীয় জেলে অমৃত লাল দাস (৪০) বলেন, ‘প্রচুর হুথ (স্রোত) ছিল এক সময়। আমরাও মাছ ধরছি এই গাঙে। আর এহন (এখন) পানি নাই, মাছ ধরমু কেম্নে। হুগনার সময় অন্য কাম (কাজ) কইরা পেট চালান লাগে। গাঙ না খুধলে (খনন করলে) পানি আইব না। ’

স্থানীয় পরিবেশভিত্তিক সংগঠন হাওরাঞ্চলবাসীর অষ্টগ্রামের সভাপতি কবি রেজাউল করীম সেলিম বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের কৃষি ও যোগাযোগের জন্য এই নদীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নদীর নাব্য কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে এলাকার কৃষি উৎপাদন ও কৃষিনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকায়।

উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেম্স বলেন, ‘নাব্য সংকটের কারণে নদীতে নৌকা ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ধলেশ্বরীর সঙ্গে সংযুক্ত গুজিয়ার খাল খননের সময় স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করেছিলাম ধলেশ্বরী নদী খননের জন্য। কোনো লাভ হয়নি। নদী বাঁচাতে ইকুরদিয়ায় মেঘনার সঙ্গে সংযোগ করে গুজিয়ার খালের মুখসহ পুরো ধলেশ্বরী খনন করা জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত