Ajker Patrika

ভাষার লড়াই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
ভাষার লড়াই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র

এখনো দেশভাগের আগের সময়টা নিয়েই কথা বলছি। ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই দৈনিক আজাদে প্রকাশিত ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র লেখাটি যে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. জিয়াউদ্দীন আহমদের উর্দুর পক্ষে ওকালতির একটা জবাব ছিল, সেটা বোঝা যায় প্রবন্ধটি পড়লে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলছেন, ‘ড. জিয়াউদ্দীন আহমদ উর্দু‌‌‌কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এই কথা ভুলিয়া গিয়েছেন যে পাকিস্তানে মুসলমান ব্যতীত বহু সংখ্যক হিন্দু ও শিখ নাগরিক আছে। অনেকেই এরূপ ধারণার বশবর্তী যে একটি রাষ্ট্রে একটিমাত্র রাষ্ট্রভাষা থাকিবে। সোভিয়েত রাশিয়ার কয়েকটি ভাষা রাষ্ট্রভাষা রূপে পরিগণিত হইয়াছে। সেই রূপে কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা, বেলজিয়ামে ফরাসি ও ফ্লেমিশ ভাষা এবং সুইজারল্যান্ডে ফরাসি, ইতালীয় ও জার্মান ভাষা রাষ্ট্রভাষা রূপে পরিগণিত। কংগ্রেসের নির্দিষ্ট হিন্দির অনুকরণে উর্দু পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা রূপে গণ্য হইলে তাহা শুধু পশ্চাৎগমনই হইবে।...পাকিস্তানের ডোমিনিয়নের অধিকাংশ অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা এবং বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধশালী। সুতরাং পাকিস্তানের ভাষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা শ্রেষ্ঠ!’

‘কত অধিক সংখ্যক লোকে একটি ভাষা বলে, এই অনুযায়ী বাংলা ভাষা বিশ্ব ভাষার মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করিয়াছে। যদি বিদেশি ভাষা বলিয়া ইংরেজি ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ না করিবার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। যদি বাংলা ভাষার অতিরিক্ত কোন দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করিতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবি বিবেচনা করা কর্তব্য। ভারতের সর্বত্রই অনেকে মোটামুটি ভাবে উর্দু ভাষা বুঝিতে পারে।’

আরও কোনো ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হলে আরবিকেও বিবেচনার মধ্যে রাখতে বলেছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। অর্থাৎ শুধু বাংলা ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা রূপে বিবেচিত করার পরিবর্তে তিনি আরও উদার হয়েছিলেন। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এরপর তিনি লিখেছেন, ‘ব্রিটিশ আমলেও বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের দান নগণ্য নয়, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছে। বাংলাদেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দি ভাষা গ্রহণ করা হইলে ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর হইবে।’

উল্লিখিত শেষ বাক্যটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে লক্ষ্য করা যায়, উচ্চ আদালত ও উচ্চশিক্ষায় এখনো বাংলা ভাষা হাঁটি হাঁটি পা পা অবস্থায় রয়েছে। সেখানকার পরাধীনতার জিঞ্জির আজও ভেঙে পড়েনি।

একটি অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হলো, ব্যক্তিগতভাবে ধর্মাচরণ করার ক্ষেত্রে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ খুবই রক্ষণশীল ছিলেন অথচ একই সঙ্গে ভিন্ন ধর্ম ও মতের প্রতি তিনি ছিলেন উদার। সে কারণেই চরম সাম্প্রদায়িক পরিবেশের মধ্যেও তাঁর ধর্মবিশ্বাস সাম্প্রদায়িক চেহারা নিয়ে প্রকাশিত হয়নি। ১৯৪২ সালে সোভিয়েত মেলার দ্বারোদ্‌ঘাটন করেছিলেন তিনি এবং ১৯৪৩ সালে প্রগতি লেখক সংঘের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। এ দুটি সংগঠনের রাজনৈতিক মত বা দৃষ্টিভঙ্গি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র মতের সঙ্গে যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত