মাসুদ রানা
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। তিন বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সিন্ডিকেট এবং সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
জিনিসপত্রের দাম এখনো না কমার কারণ কী?
একেবারেই যে কমেনি, সেটা বলার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি। যারা আসলে সুযোগে অসাধু হয়ে ওঠে। সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। বিগত সরকারের আমলে তারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বিগত সরকার সেই সময় সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি। বর্তমান সরকার আসার পর চেষ্টা করছে বাজার নিয়ন্ত্রণের। সাধারণ ভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে। বর্তমানে বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলেও দুই দিন আগে দেখা গেছে, সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম কমেছে। সরকার কিছু পণ্য আমদানি করায় দাম আরও কমে আসবে বলে ক্যাবের পক্ষ থেকে মনে করছি।
ট্রেনের মাধ্যমে কৃষিপণ্য আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে কোনো উপকার হবে কি?
সরকার এটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা কিন্তু অনেক আগে থেকে এ কথা বলে আসছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনে কৃষিপণ্য আনা গেলে যাতায়াত খরচ অনেক কমে যাবে। ফলে পণ্যের দামও কমে যাবে।
আমরা জানি, জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ সিন্ডিকেট। বর্তমান সরকার কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
সিন্ডিকেট তো এখনো বাজারে সক্রিয়। দেশে অধিকাংশ পণ্যের জোগানে অভাব নেই। পর্যাপ্ত পণ্য বাজারে আছে। কিন্তু দাম সে তুলনায় কমছে না। এটার মূল কারণ হলো ‘সিন্ডিকেট’। এ জন্য বাজার তদারকির জন্য শুধু খুচরা বাজারে গেলে হবে না, পাইকারি বাজারে যেতে হবে। মানে, যারা পণ্যের দাম বাড়ায়, তাদের কাছে যেতে হবে। কিন্তু ভোক্তা অধিকার বাজারে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে পণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু বাজার থেকে চলে গেলে পণ্যের দাম আবার বাড়ানো হয়। এটাও সিন্ডিকেটের কারণে হয়। এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে পরামর্শ হলো, বাজার তদারকির জন্য ভোক্তা অধিকার ছাড়া কোনো মন্ত্রণালয় সেখানে যায় না। তাই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না। সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষমতা একমাত্র সরকারের হাতে। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে এটা ভাঙা সম্ভব নয়।
সরকার টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলেছে। সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে পণ্যের দাম কমে যেতে পারে। তবে সিন্ডিকেট ভাঙা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। কারণ, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়ায়। দেখা যায়, কখনো পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়, কখনো ডিম বা ডালের দাম বাড়ানো হয়; কখনো আলু, কখনো মাছসহ নানা ক্ষেত্রে তারা এই অপকর্মগুলো করে থাকে। নানা সময় বিভিন্ন পণ্যের ওপর সিন্ডিকেট থাবা বসায়।
সম্প্রতি কোল্ডস্টোরেজ থেকে লাখ লাখ ডিম উদ্ধার করা হয়। কোল্ডস্টোরেজে আলু থাকার কথা। কিন্তু সেখানে ডিম পাওয়া গেছে। এই যে ঘটনাগুলো, এসব নিয়ন্ত্রণ করা না
গেলে সিন্ডিকেট ভাঙা অসম্ভব। সিন্ডিকেটের ঘটনা আরেকটা ক্ষেত্রে ঘটে; যেমন কেউ যদি তার পণ্য বিক্রি না করে, সেটাও তো একধরনের সিন্ডিকেট।
আমরা মনে করি, সরকারের হাত অনেক লম্বা। তারা যদি চেষ্টা করে, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর সব ব্যবসায়ীর কথা বলতে পারব না। তবে কিছু ব্যবসায়ী এখনো সিন্ডিকেট করে তাদের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
নিত্যপণ্যের বিপণনব্যবস্থায় যে অনিয়ম আছে, সেটাকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে?
এটা অবশ্যই সম্মিলিতভাবে করতে হবে। যেসব মন্ত্রণালয় এসবের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। যেমন কৃষি মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিপণন অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—সবাই যদি সমন্বিতভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তাহলে বাজার সিন্ডিকেট কার্যকর থাকবে না।
সরকার ডিম আমদানি করছে। তারপরেও কীভাবে বাজার থেকে ডিম উধাও হয়ে যায়? আবার সরকার যখন কোনো পণ্য আমদানির কথা ঘোষণা করে, তখন ব্যবসায়ীরা বলে, তারা এ পণ্য কম দামে বিক্রি করতে পারবে। বড় ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর একধরনের মানসিক নিপীড়ন চালায়। বড় ব্যবসায়ীরা বাজার এমনভাবে সিস্টেম করে রেখেছে, তাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্য ক্রয় করা ছাড়া উপায় থাকে না। সরকারকে এই সিস্টেমও ভেঙে দিতে হবে। এ জায়গায় মজুরি কমিশনকেও সক্রিয় করার দরকার আছে। কেউ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করবে, তাদেরকে এলসি খোলার জন্য সহযোগিতা করতে হবে, তাহলে সিন্ডিকেট থাকবে না। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য তো প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কোনোভাবেই পণ্যের দামের প্রতিযোগিতা হয় না। আমাদের দেশে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে এটা হয় না।
এখানে এমন একটা মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি আছে, তাদের ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স লাগে না এবং ভ্যাটও দিতে হয় না। আবার ব্যবসা করার জন্য তেমন পুঁজিরও দরকার পড়ে না। তারা শুধু মোবাইল দিয়ে যোগাযোগ করে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। এগুলোর ক্ষেত্রেও সরকারের বিশেষ তদারকির দরকার আছে।
ভোক্তা অধিকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে?
তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ করছে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। কারণ, সব জেলায় তাদের প্রতিনিধি নেই। এভাবে তো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তারা তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজগুলো করে থাকে। ক্যাব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিষ্ঠানটি দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিংয়ের সঙ্গে ভোক্তাদের সচেতন করার কাজও করে থাকে।
ক্যাব টাস্কফোর্সের সঙ্গে যুক্ত। যদিও ক্যাবের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তারা কাউকে জরিমানা করতে পারে না। রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে, তারা সেসব করতে পারে। আমরা মূলত পণ্যমূল্যের বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতন করতে পারি। আবার ভোক্তারা যাতে নিজ থেকে সচেতন থাকেন; যেমন নিজেরা বেশি বেশি পণ্য কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করেন।
প্রতিটি পণ্যবাজারের ব্যবসায়িক সমিতি আছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসে একই কাজ করে থাকি। তারাও যেন সচেতন হয়। আমরা সমিতির নেতাদের বলি, আপনারা ব্যবসা করবেন, কিন্তু প্রান্তিক, নিম্ন আয়ের এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করবেন। এভাবে আমরা তাদেরকে নৈতিকতার পরামর্শ দিয়ে থাকি। অল্প লোক নিয়ে আমরা কিন্তু সারা দেশে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক জায়গায় ক্যাবের কমিটি আছে। সেই কমিটি তাদের সাধ্যমতো স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছে।
দাম বাড়ানোর জন্য কাউকে অভিযুক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা আমাদের দেশে না থাকায় বাজারে স্বেচ্ছাচারিতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
এ রকম একটা দাবি আমাদেরও ছিল। যারা ভালো ব্যবসায়ী, তাদের যেমন উৎসাহিত করতে হবে, তেমনি যারা অপরাধী, কারসাজি এবং সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায়, তাদের যে সরকার চেনে না, বিষয়টা সে রকম নয়। তাদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় একজনকেও আনা হয়নি। তাই আইনের প্রয়োগ করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর সবকিছু যে আইন দিয়ে করা যাবে, সেটা মনে করি না। মানুষকে সচেতনও করতে হবে।
তবে এ ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া না হলে সিন্ডিকেট এ অপকর্মগুলো করতেই থাকবে। তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। তাদের পরিবারের লোক, আত্মীয়স্বজন জানুক, তারা হলো অসাধু ব্যবসায়ী। অসাধু ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি দেওয়ার কাজটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী কোনো সমাধান কি আছে?
কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান হয় না। কখন কোথায় বন্যা, খরা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে, সেটা তো অগ্রিম জানার সুযোগ নেই। এটা সরকারসহ কেউ জানতে পারে না। এটা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে থাকে। এখন ব্যবসায়ীরা যেমন বলছে, শাকসবজির দাম বেড়েছে বন্যার কারণে। কিন্তু অনেক জেলায় তো বন্যা হয়নি। সেখানে সাপ্লাই চেইনেরও সমস্যা হয়নি। তারপরেও দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার একটা কাজ করতে পারে, আর তা হলো দেশের যেসব জায়গায় বেশি শাকসবজি উৎপাদিত হয়, সেখানে কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করা। তাহলে মৌসুমের সময়কার উদ্বৃত্ত সবজি মৌসুমহীন সময়ে বিক্রি করা যাবে। এটাতেও পুরোপুরি সমাধান না-ও হতে পারে। তবে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ান, তাদের এসব অপকর্ম ঠেকানোর জন্য সরকারিভাবে পণ্য সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করতে হবে। এভাবেই সিন্ডিকেট ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। তিন বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সিন্ডিকেট এবং সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
জিনিসপত্রের দাম এখনো না কমার কারণ কী?
একেবারেই যে কমেনি, সেটা বলার সুযোগ নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি। যারা আসলে সুযোগে অসাধু হয়ে ওঠে। সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। বিগত সরকারের আমলে তারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বিগত সরকার সেই সময় সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি। বর্তমান সরকার আসার পর চেষ্টা করছে বাজার নিয়ন্ত্রণের। সাধারণ ভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে। বর্তমানে বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলেও দুই দিন আগে দেখা গেছে, সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম কমেছে। সরকার কিছু পণ্য আমদানি করায় দাম আরও কমে আসবে বলে ক্যাবের পক্ষ থেকে মনে করছি।
ট্রেনের মাধ্যমে কৃষিপণ্য আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে কোনো উপকার হবে কি?
সরকার এটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা কিন্তু অনেক আগে থেকে এ কথা বলে আসছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনে কৃষিপণ্য আনা গেলে যাতায়াত খরচ অনেক কমে যাবে। ফলে পণ্যের দামও কমে যাবে।
আমরা জানি, জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ সিন্ডিকেট। বর্তমান সরকার কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
সিন্ডিকেট তো এখনো বাজারে সক্রিয়। দেশে অধিকাংশ পণ্যের জোগানে অভাব নেই। পর্যাপ্ত পণ্য বাজারে আছে। কিন্তু দাম সে তুলনায় কমছে না। এটার মূল কারণ হলো ‘সিন্ডিকেট’। এ জন্য বাজার তদারকির জন্য শুধু খুচরা বাজারে গেলে হবে না, পাইকারি বাজারে যেতে হবে। মানে, যারা পণ্যের দাম বাড়ায়, তাদের কাছে যেতে হবে। কিন্তু ভোক্তা অধিকার বাজারে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে পণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু বাজার থেকে চলে গেলে পণ্যের দাম আবার বাড়ানো হয়। এটাও সিন্ডিকেটের কারণে হয়। এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে পরামর্শ হলো, বাজার তদারকির জন্য ভোক্তা অধিকার ছাড়া কোনো মন্ত্রণালয় সেখানে যায় না। তাই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না। সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষমতা একমাত্র সরকারের হাতে। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে এটা ভাঙা সম্ভব নয়।
সরকার টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলেছে। সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে পণ্যের দাম কমে যেতে পারে। তবে সিন্ডিকেট ভাঙা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। কারণ, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়ায়। দেখা যায়, কখনো পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়, কখনো ডিম বা ডালের দাম বাড়ানো হয়; কখনো আলু, কখনো মাছসহ নানা ক্ষেত্রে তারা এই অপকর্মগুলো করে থাকে। নানা সময় বিভিন্ন পণ্যের ওপর সিন্ডিকেট থাবা বসায়।
সম্প্রতি কোল্ডস্টোরেজ থেকে লাখ লাখ ডিম উদ্ধার করা হয়। কোল্ডস্টোরেজে আলু থাকার কথা। কিন্তু সেখানে ডিম পাওয়া গেছে। এই যে ঘটনাগুলো, এসব নিয়ন্ত্রণ করা না
গেলে সিন্ডিকেট ভাঙা অসম্ভব। সিন্ডিকেটের ঘটনা আরেকটা ক্ষেত্রে ঘটে; যেমন কেউ যদি তার পণ্য বিক্রি না করে, সেটাও তো একধরনের সিন্ডিকেট।
আমরা মনে করি, সরকারের হাত অনেক লম্বা। তারা যদি চেষ্টা করে, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর সব ব্যবসায়ীর কথা বলতে পারব না। তবে কিছু ব্যবসায়ী এখনো সিন্ডিকেট করে তাদের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
নিত্যপণ্যের বিপণনব্যবস্থায় যে অনিয়ম আছে, সেটাকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে?
এটা অবশ্যই সম্মিলিতভাবে করতে হবে। যেসব মন্ত্রণালয় এসবের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। যেমন কৃষি মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিপণন অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—সবাই যদি সমন্বিতভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তাহলে বাজার সিন্ডিকেট কার্যকর থাকবে না।
সরকার ডিম আমদানি করছে। তারপরেও কীভাবে বাজার থেকে ডিম উধাও হয়ে যায়? আবার সরকার যখন কোনো পণ্য আমদানির কথা ঘোষণা করে, তখন ব্যবসায়ীরা বলে, তারা এ পণ্য কম দামে বিক্রি করতে পারবে। বড় ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর একধরনের মানসিক নিপীড়ন চালায়। বড় ব্যবসায়ীরা বাজার এমনভাবে সিস্টেম করে রেখেছে, তাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্য ক্রয় করা ছাড়া উপায় থাকে না। সরকারকে এই সিস্টেমও ভেঙে দিতে হবে। এ জায়গায় মজুরি কমিশনকেও সক্রিয় করার দরকার আছে। কেউ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করবে, তাদেরকে এলসি খোলার জন্য সহযোগিতা করতে হবে, তাহলে সিন্ডিকেট থাকবে না। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য তো প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কোনোভাবেই পণ্যের দামের প্রতিযোগিতা হয় না। আমাদের দেশে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে এটা হয় না।
এখানে এমন একটা মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি আছে, তাদের ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স লাগে না এবং ভ্যাটও দিতে হয় না। আবার ব্যবসা করার জন্য তেমন পুঁজিরও দরকার পড়ে না। তারা শুধু মোবাইল দিয়ে যোগাযোগ করে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। এগুলোর ক্ষেত্রেও সরকারের বিশেষ তদারকির দরকার আছে।
ভোক্তা অধিকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে?
তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ করছে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। কারণ, সব জেলায় তাদের প্রতিনিধি নেই। এভাবে তো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তারা তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজগুলো করে থাকে। ক্যাব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিষ্ঠানটি দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিংয়ের সঙ্গে ভোক্তাদের সচেতন করার কাজও করে থাকে।
ক্যাব টাস্কফোর্সের সঙ্গে যুক্ত। যদিও ক্যাবের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তারা কাউকে জরিমানা করতে পারে না। রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে, তারা সেসব করতে পারে। আমরা মূলত পণ্যমূল্যের বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতন করতে পারি। আবার ভোক্তারা যাতে নিজ থেকে সচেতন থাকেন; যেমন নিজেরা বেশি বেশি পণ্য কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করেন।
প্রতিটি পণ্যবাজারের ব্যবসায়িক সমিতি আছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসে একই কাজ করে থাকি। তারাও যেন সচেতন হয়। আমরা সমিতির নেতাদের বলি, আপনারা ব্যবসা করবেন, কিন্তু প্রান্তিক, নিম্ন আয়ের এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করবেন। এভাবে আমরা তাদেরকে নৈতিকতার পরামর্শ দিয়ে থাকি। অল্প লোক নিয়ে আমরা কিন্তু সারা দেশে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক জায়গায় ক্যাবের কমিটি আছে। সেই কমিটি তাদের সাধ্যমতো স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছে।
দাম বাড়ানোর জন্য কাউকে অভিযুক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা আমাদের দেশে না থাকায় বাজারে স্বেচ্ছাচারিতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
এ রকম একটা দাবি আমাদেরও ছিল। যারা ভালো ব্যবসায়ী, তাদের যেমন উৎসাহিত করতে হবে, তেমনি যারা অপরাধী, কারসাজি এবং সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায়, তাদের যে সরকার চেনে না, বিষয়টা সে রকম নয়। তাদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় একজনকেও আনা হয়নি। তাই আইনের প্রয়োগ করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর সবকিছু যে আইন দিয়ে করা যাবে, সেটা মনে করি না। মানুষকে সচেতনও করতে হবে।
তবে এ ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া না হলে সিন্ডিকেট এ অপকর্মগুলো করতেই থাকবে। তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। তাদের পরিবারের লোক, আত্মীয়স্বজন জানুক, তারা হলো অসাধু ব্যবসায়ী। অসাধু ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি দেওয়ার কাজটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী কোনো সমাধান কি আছে?
কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান হয় না। কখন কোথায় বন্যা, খরা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে, সেটা তো অগ্রিম জানার সুযোগ নেই। এটা সরকারসহ কেউ জানতে পারে না। এটা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে থাকে। এখন ব্যবসায়ীরা যেমন বলছে, শাকসবজির দাম বেড়েছে বন্যার কারণে। কিন্তু অনেক জেলায় তো বন্যা হয়নি। সেখানে সাপ্লাই চেইনেরও সমস্যা হয়নি। তারপরেও দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার একটা কাজ করতে পারে, আর তা হলো দেশের যেসব জায়গায় বেশি শাকসবজি উৎপাদিত হয়, সেখানে কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করা। তাহলে মৌসুমের সময়কার উদ্বৃত্ত সবজি মৌসুমহীন সময়ে বিক্রি করা যাবে। এটাতেও পুরোপুরি সমাধান না-ও হতে পারে। তবে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ান, তাদের এসব অপকর্ম ঠেকানোর জন্য সরকারিভাবে পণ্য সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করতে হবে। এভাবেই সিন্ডিকেট ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪