বিভুরঞ্জন সরকার
আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের ৫১ বছর পার করলাম। আপনার কি মনে হয়, ঠিক পথেই চলছে বাংলাদেশ?
মোনায়েম সরকার: আমি প্রথমেই এই বিজয়ের মাসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা রাখা
জাতীয় চার নেতার প্রতি। আপনার প্রশ্নের উত্তরে যদি এককথায় বলি, বাংলাদেশ ঠিক পথে চলছে না, তাহলে প্রকৃতপক্ষে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে একটি অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। যারা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যারা মুক্তিপাগল নিরীহ বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যায় সহযোগিতা করেছিল, তারা খুশি হয় এটা বলে যে আমরা পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম। আসলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম বাঙালির জীবনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের জন্মের চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে! স্বাধীনতা-পরবর্তী নানা চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা-ও বিস্ময়কর এবং এটা অস্বীকার করার চেয়ে নিমকহারামি আর হতে পারে না।
আজকের পত্রিকা: পাকিস্তানে গণতন্ত্র ছিল না, ছিল সাম্প্রদায়িকতা। বাংলাদেশেও তো তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তাহলে অগ্রগতি কী হলো?
মোনায়েম সরকার: হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু পিছু হটা আছে। তবে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে নির্মোহভাবে। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি প্রধানত তিনটি ধারায় বিভক্ত ছিল। ১. গণতান্ত্রিক ধারা, ২. বাম প্রগতিশীল ধারা এবং ৩. ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ধারা। গণতান্ত্রিক ও বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা একসময় কাছাকাছি অবস্থানে থেকে প্রধান ধারায় পরিণত হয়েছিল। এ ধারাই মূলত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর রাজনৈতিক ধারায় অনেকটা নিভৃতে বড় পরিবর্তন ঘটে যায়। আওয়ামী লীগ থেকে একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে জাসদ নামের দল গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় অঘটনের সূচনা করেছিল। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়ক হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তারা আত্মগোপনে যায় এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতির চালচিত্র পুরো পাল্টে যায়। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যে প্রগতিমুখীন ধারার সূচনা করেছিলেন, তা পাল্টে আবার পাকিস্তানি ধারা চালু করা হয়। এরপর সামরিক স্বৈরাচারী শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনকালে রাজনৈতিক শক্তির নতুন বিন্যাস ঘটে। বাম প্রগতিশীল নেতাদের কারও কারও ক্ষমতার লোভ কিংবা ভুল রাজনৈতিক তত্ত্ব চর্চার কারণে রাজনীতির এই ধারা জনবিচ্ছিন্ন ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি। দেশি-বিদেশি এজেন্টদের আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতায় এরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা অর্জন করে।
আজকের পত্রিকা: গণতান্ত্রিক ধারার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ কি রাজনীতিতে সঠিক অবস্থান রাখতে পেরেছে?
মোনায়েম সরকার: পঁচাত্তর-পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিছু ওলটপালট ঘটায়নি, তা তো নয়। রাষ্ট্রক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য আওয়ামী লীগও কখনো কখনো আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। রাজনীতিতে নীতির প্রশ্নে অনমনীয় থেকে কৌশলে নমনীয় হতে হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এ নীতিতেই অবিচল থেকেছেন। রাজনীতিতে দর-কষাকষির সুযোগ কখনো হাতছাড়া করতে নেই। ১৯৭১ সালের ১ মার্চের পর অগ্নিগর্ভ উত্তাল অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনায় বসার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান থেকে তিনি কিন্তু বিরত হননি। নমনীয়তা রাজনীতির জন্য কোনো সময়ই খারাপ কৌশল নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতিক অতীতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নীতির প্রশ্নে আপস করে আর কৌশলে আপসহীন থেকে জনপ্রিয় হওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হওয়ায় আওয়ামী লীগও এতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে আওয়ামী লীগের সমান্তরাল কোনো শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দল দেশে গড়ে না ওঠায় কিছু ত্রুটি-দুর্বলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগই এখনো গণতান্ত্রিক ধারার প্রধান দল হিসেবে আছে।
আজকের পত্রিকা: ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ কি গণতান্ত্রিক আচরণ করছে?
মোনায়েম সরকার: কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে এখন গণতান্ত্রিক দল বলতে না চাইলেও ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস, দৃঢ়তা, সততা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে আওয়ামী লীগ এখনো বাঙালির শেষ আশ্রয় বা ঠিকানা হয়ে আছে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র নিয়ে একধরনের আবেগ আছে। এই আবেগের প্রতি কী আওয়ামী লীগ সম্মান দেখাতে পারছে?
মোনায়েম সরকার: দেখুন, আবেগ আর রাজনৈতিক বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে এখন সবাই গণতন্ত্র নিয়ে হইচই করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে গণতন্ত্রবিরোধী বলতেও দ্বিধা করছে না বিএনপি। অথচ বিএনপি কি গণতান্ত্রিক দল? এ দলটি তো ক্ষমতায় ছিল। তখন দেশে কেমন গণতন্ত্র ছিল? বিএনপির দলীয় কার্যক্রম কি গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হয়? আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার আগে এ প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া উচিত নয় কি? আমাদের দেশের সর্বত্রই স্ববিরোধী আচরণ লক্ষ করা যায়। কথা ও কাজের অসংগতি সাধারণ ব্যাপার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা ও অসংগতি অস্থিরতা তৈরি করে সন্দেহ নেই। কিন্তু হত্যা, খুন, গুম, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি–কোনটায় বিএনপির রেকর্ড উজ্জ্বল?
আজকের পত্রিকা: বিএনপির খারাপটা কেন আওয়ামী লীগ অনুসরণ করবে?
মোনায়েম সরকার: না, সেটা করা মোটেও উচিত নয়। এটাও মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক দল কিন্তু আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সে দলে কিছু দুর্বৃত্ত, সুযোগসন্ধানী জোটে, এটা সত্য। এসব দুর্বৃত্ত দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে দল ও দলীয় সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ রকম কিছু দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেও শেখ হাসিনার সরকার সমালোচিত হচ্ছে, জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে–এটাও অস্বীকার করার মতো নয়। এখনই যদি এসব দুর্বৃত্তকে দমন করা না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
আজকের পত্রিকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
মোনায়েম সরকার: আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি চাই তিনি আরও অন্তত এক মেয়াদে দেশের নেতৃত্ব দিন। সাহস করে সত্য কথা বলার রেওয়াজ আমাদের দেশ থেকে উঠে যেতে বসেছে। তবে আমি যা সঠিক বলে মনে করি, তা দ্বিধাহীন চিত্তেই প্রকাশ করি। বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার কথা বলছে। কিন্তু বিএনপি তো কোনো বিপ্লবী দল নয়। জনভিত্তিসম্পন্ন ও সুসংগঠিত দল নয়। চরিত্রগত কারণেই গণ-অভ্যুত্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি। তবে মানুষের মনে যে কিছু ক্ষোভ-অসন্তোষ জমা হয়েছে বা হচ্ছে, তা দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সুযোগও তাঁর আছে। শাসনতান্ত্রিকভাবেও সে ক্ষমতা তাঁর রয়েছে বলে জানি।বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। মানুষ কষ্টে আছে। এ ছাড়া ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগও ব্যাপক। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দ্রুত ও দৃশ্যমান উদ্যোগ আশা করে মানুষ। অর্থ পাচারকারী, অসৎ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তত কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? প্রতীকী হলেও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মানুষ একজন মানবিক অথচ ন্যায়ের প্রশ্নে কঠোর শাসক শেখ হাসিনাকে দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। আগামী জাতীয় সম্মেলনে যদি সৎ ও অবিতর্কিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গতিশীল নেতৃত্ব উপহার না দেওয়া হয়, তাহলে দলও উজ্জীবিত হবে না।মন্ত্রিসভায় একটি রদবদলও বহুল প্রত্যাশিত। যাঁরা ব্যর্থ, অকর্মণ্য ও বিতর্কিত, তাঁদের বাদ দেওয়া দরকার। মন্ত্রী পদ তো কারও জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। যদি এ কাজগুলো করা হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবেই প্রশংসিত হবেন।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোনায়েম সরকার: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে আজকের পত্রিকার পাঠক-শুভানুধ্যায়ীদেরও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের ৫১ বছর পার করলাম। আপনার কি মনে হয়, ঠিক পথেই চলছে বাংলাদেশ?
মোনায়েম সরকার: আমি প্রথমেই এই বিজয়ের মাসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা রাখা
জাতীয় চার নেতার প্রতি। আপনার প্রশ্নের উত্তরে যদি এককথায় বলি, বাংলাদেশ ঠিক পথে চলছে না, তাহলে প্রকৃতপক্ষে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে একটি অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। যারা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যারা মুক্তিপাগল নিরীহ বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যায় সহযোগিতা করেছিল, তারা খুশি হয় এটা বলে যে আমরা পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম। আসলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম বাঙালির জীবনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের জন্মের চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে! স্বাধীনতা-পরবর্তী নানা চড়াই-উতরাই সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা-ও বিস্ময়কর এবং এটা অস্বীকার করার চেয়ে নিমকহারামি আর হতে পারে না।
আজকের পত্রিকা: পাকিস্তানে গণতন্ত্র ছিল না, ছিল সাম্প্রদায়িকতা। বাংলাদেশেও তো তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তাহলে অগ্রগতি কী হলো?
মোনায়েম সরকার: হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু পিছু হটা আছে। তবে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে নির্মোহভাবে। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি প্রধানত তিনটি ধারায় বিভক্ত ছিল। ১. গণতান্ত্রিক ধারা, ২. বাম প্রগতিশীল ধারা এবং ৩. ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ধারা। গণতান্ত্রিক ও বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা একসময় কাছাকাছি অবস্থানে থেকে প্রধান ধারায় পরিণত হয়েছিল। এ ধারাই মূলত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর রাজনৈতিক ধারায় অনেকটা নিভৃতে বড় পরিবর্তন ঘটে যায়। আওয়ামী লীগ থেকে একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে জাসদ নামের দল গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় অঘটনের সূচনা করেছিল। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়ক হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তারা আত্মগোপনে যায় এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতির চালচিত্র পুরো পাল্টে যায়। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যে প্রগতিমুখীন ধারার সূচনা করেছিলেন, তা পাল্টে আবার পাকিস্তানি ধারা চালু করা হয়। এরপর সামরিক স্বৈরাচারী শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনকালে রাজনৈতিক শক্তির নতুন বিন্যাস ঘটে। বাম প্রগতিশীল নেতাদের কারও কারও ক্ষমতার লোভ কিংবা ভুল রাজনৈতিক তত্ত্ব চর্চার কারণে রাজনীতির এই ধারা জনবিচ্ছিন্ন ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি। দেশি-বিদেশি এজেন্টদের আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতায় এরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা অর্জন করে।
আজকের পত্রিকা: গণতান্ত্রিক ধারার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ কি রাজনীতিতে সঠিক অবস্থান রাখতে পেরেছে?
মোনায়েম সরকার: পঁচাত্তর-পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিছু ওলটপালট ঘটায়নি, তা তো নয়। রাষ্ট্রক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য আওয়ামী লীগও কখনো কখনো আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। রাজনীতিতে নীতির প্রশ্নে অনমনীয় থেকে কৌশলে নমনীয় হতে হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এ নীতিতেই অবিচল থেকেছেন। রাজনীতিতে দর-কষাকষির সুযোগ কখনো হাতছাড়া করতে নেই। ১৯৭১ সালের ১ মার্চের পর অগ্নিগর্ভ উত্তাল অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনায় বসার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান থেকে তিনি কিন্তু বিরত হননি। নমনীয়তা রাজনীতির জন্য কোনো সময়ই খারাপ কৌশল নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতিক অতীতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নীতির প্রশ্নে আপস করে আর কৌশলে আপসহীন থেকে জনপ্রিয় হওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হওয়ায় আওয়ামী লীগও এতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে আওয়ামী লীগের সমান্তরাল কোনো শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দল দেশে গড়ে না ওঠায় কিছু ত্রুটি-দুর্বলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগই এখনো গণতান্ত্রিক ধারার প্রধান দল হিসেবে আছে।
আজকের পত্রিকা: ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ কি গণতান্ত্রিক আচরণ করছে?
মোনায়েম সরকার: কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে এখন গণতান্ত্রিক দল বলতে না চাইলেও ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস, দৃঢ়তা, সততা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে আওয়ামী লীগ এখনো বাঙালির শেষ আশ্রয় বা ঠিকানা হয়ে আছে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র নিয়ে একধরনের আবেগ আছে। এই আবেগের প্রতি কী আওয়ামী লীগ সম্মান দেখাতে পারছে?
মোনায়েম সরকার: দেখুন, আবেগ আর রাজনৈতিক বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে এখন সবাই গণতন্ত্র নিয়ে হইচই করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে গণতন্ত্রবিরোধী বলতেও দ্বিধা করছে না বিএনপি। অথচ বিএনপি কি গণতান্ত্রিক দল? এ দলটি তো ক্ষমতায় ছিল। তখন দেশে কেমন গণতন্ত্র ছিল? বিএনপির দলীয় কার্যক্রম কি গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হয়? আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার আগে এ প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া উচিত নয় কি? আমাদের দেশের সর্বত্রই স্ববিরোধী আচরণ লক্ষ করা যায়। কথা ও কাজের অসংগতি সাধারণ ব্যাপার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা ও অসংগতি অস্থিরতা তৈরি করে সন্দেহ নেই। কিন্তু হত্যা, খুন, গুম, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি–কোনটায় বিএনপির রেকর্ড উজ্জ্বল?
আজকের পত্রিকা: বিএনপির খারাপটা কেন আওয়ামী লীগ অনুসরণ করবে?
মোনায়েম সরকার: না, সেটা করা মোটেও উচিত নয়। এটাও মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক দল কিন্তু আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সে দলে কিছু দুর্বৃত্ত, সুযোগসন্ধানী জোটে, এটা সত্য। এসব দুর্বৃত্ত দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে দল ও দলীয় সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ রকম কিছু দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেও শেখ হাসিনার সরকার সমালোচিত হচ্ছে, জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে–এটাও অস্বীকার করার মতো নয়। এখনই যদি এসব দুর্বৃত্তকে দমন করা না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
আজকের পত্রিকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
মোনায়েম সরকার: আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি চাই তিনি আরও অন্তত এক মেয়াদে দেশের নেতৃত্ব দিন। সাহস করে সত্য কথা বলার রেওয়াজ আমাদের দেশ থেকে উঠে যেতে বসেছে। তবে আমি যা সঠিক বলে মনে করি, তা দ্বিধাহীন চিত্তেই প্রকাশ করি। বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার কথা বলছে। কিন্তু বিএনপি তো কোনো বিপ্লবী দল নয়। জনভিত্তিসম্পন্ন ও সুসংগঠিত দল নয়। চরিত্রগত কারণেই গণ-অভ্যুত্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি। তবে মানুষের মনে যে কিছু ক্ষোভ-অসন্তোষ জমা হয়েছে বা হচ্ছে, তা দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সুযোগও তাঁর আছে। শাসনতান্ত্রিকভাবেও সে ক্ষমতা তাঁর রয়েছে বলে জানি।বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। মানুষ কষ্টে আছে। এ ছাড়া ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগও ব্যাপক। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দ্রুত ও দৃশ্যমান উদ্যোগ আশা করে মানুষ। অর্থ পাচারকারী, অসৎ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তত কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? প্রতীকী হলেও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মানুষ একজন মানবিক অথচ ন্যায়ের প্রশ্নে কঠোর শাসক শেখ হাসিনাকে দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়। আগামী জাতীয় সম্মেলনে যদি সৎ ও অবিতর্কিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গতিশীল নেতৃত্ব উপহার না দেওয়া হয়, তাহলে দলও উজ্জীবিত হবে না।মন্ত্রিসভায় একটি রদবদলও বহুল প্রত্যাশিত। যাঁরা ব্যর্থ, অকর্মণ্য ও বিতর্কিত, তাঁদের বাদ দেওয়া দরকার। মন্ত্রী পদ তো কারও জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। যদি এ কাজগুলো করা হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবেই প্রশংসিত হবেন।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোনায়েম সরকার: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে আজকের পত্রিকার পাঠক-শুভানুধ্যায়ীদেরও ধন্যবাদ।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫