Ajker Patrika

বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১৪: ২৬
বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

খুলনার কয়রায় চারপাশে সুবিশাল জলরাশি। কিন্তু এর মধ্যে খাওয়ার জন্য এক ফোঁটাও পানি নেই। সবই নোনা পানি। অনেক স্থানে গভীর নলকূপ থাকলেও পানিতে আয়রন ও লবণযুক্ত। যার ফলে পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। এক ফোঁটা সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরা পর্যন্ত মাইলের পর মাইল রাস্তা পাড়ি জমাচ্ছেন। অনেকে পুকুরের কাদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন।

গত রোববার সরেজমিনে উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরে দেখা গেছে, খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য পড়ন্ত বিকেলে দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন কয়েকটি গ্রাম থেকে। অনেকেই কাঁকে কলসি নিয়ে দলবদ্ধ ভাবে আসছেন পানি নিতে। কেউবা ব্যস্ত কলসিতে পানি ভরতে। আবার অনেকেই কলসিতে পানি ভরে ফিরে যাচ্ছেন আপন ঠিকানায়।

কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরপাড়ে মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব জোরিনা খাতুন। বয়সের ভারে অনেক পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দুর করতে কলসি রেখে বিশ্রামে বসে পড়েছেন ঘাটে। বিশ্রামের সময় কথা হয় আজকের পত্রিকার এই প্রতিনিধির সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দুকলস করে পানি নিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, বয়স হয়ে গেছে এখন আর আগেরমতো হাঁটতে পারি না। দুইবার পানি আনতে দিনের আধা বেলা লেগে যায়। আমাদের আশপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এই পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়।

সাতহালিয়া গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর। এই জীবন পার করলাম পুকুরের পানি খেয়ে। কারণ আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভালো হয় না। আমরা সবাই মিলে একবার একটা টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তিন হাজার ফুট গিয়েও মিষ্টি পানি পাইনি।

কালিকাপুর গ্রামের চন্দনা সানা বলেন, জলের কষ্ট দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষাকালে একটু ভালো থাকি তারপর বাকি সময় ধরে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। পুকুরের জল খেয়ে প্রায় কোনো না কোনো পেটের রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে আমাদের।

আজ বিশ্ব পানি দিবস। পানি সংকট সমাধানের দাবি নিয়ে বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন কয়রাবাসী। তবেই পানি দিবস সার্থক হবে বলে সুশীল সমাজ অভিমত প্রকাশ করেছেন।

ইউপি সদস্য মহাশিষ সরদার বলেন, পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু কয়রায় সুপেয় পানির খুবই অভাব। কিছু কিছু এলাকায় টিউবওয়েল সাকসেস হলেও পানিতে আয়রন বেশি। যার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী সুমন রায় বলেন, কয়রা উপজেলাটি সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের অর্ধেক মানুষ পুকুরের পানি পান করে থাকেন। লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাওয়ার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে সরকারিভাবে ট্যাংক সরবরাহ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: বাকের মজুমদার

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

চাকরিতে কোটা: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আসছে সমান সুযোগ

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কারণে এক্সে তোপের মুখে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ও তাঁর মেয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত