মযহারুল ইসলাম বাবলা
সাম্প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর সংবাদ হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণবিক্ষোভ ও গণ-অভ্যুত্থান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেও ছাপিয়ে উপমহাদেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি। অর্থনৈতিক নিদারুণ সংকটের পাশাপাশি ওষুধ, খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর চরম আকালে দুর্বিষহ অবস্থা। কথায় আছে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আর পেছানোর উপায় থাকে না সামনে এগোনো ব্যতিরেকে। শ্রীলঙ্কার জনগণের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে।
একটি দেশে পরিবারতন্ত্র শক্তপোক্তভাবে টিকে থাকা যে কী পরিমাণ ভয়ংকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তারই দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক সময়ের শ্রীলঙ্কা। রাজতন্ত্রের মতো সামন্ত যুগের অবসান ঘটেছে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের ছাল-বাকলে যদি সামন্তবাদ ভর করে, তার পরিণতি কখনো শুভফল বয়ে আনতে পারে না। দেশটির সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রাজাপক্ষে পরিবার। আর তাঁদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশটির জনগণের দুর্ভোগের কোনো সীমা-পরিসীমা অবশিষ্ট থাকেনি। যার পরিণতিতে জনবিক্ষোভ ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটনে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কান জনগণ। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদদের নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে। তাঁদের বাড়ি জনতা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পর্যন্ত দিয়েছে। রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। শুরুতে পুলিশি নৃশংসতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পুলিশও আতঙ্কে রয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হলেও বিরোধী দল তাঁর নিয়োগকে সমর্থন করেনি। এমনকি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমা এবং ভারতীয় মিডিয়া একযোগে চীনকে দায়ী করে নানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ভারতের নিকটবর্তী, তাই দীর্ঘকাল ভারতের আজ্ঞাবহ ছিল। চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের উন্নতি ভারত সুনজরে দেখেনি। পরিবারতন্ত্রের সরকারের অবাধ লুণ্ঠনের জন্য যে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শ্রীলঙ্কার ওষুধ প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ আমদানি করতে হয়। ওষুধের তীব্র সংকটে অগণিত মানুষ মৃত্যুঝুঁকির কবলে। আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। ফলে জনগণ দ্রব্যমূল্যের বিরুদ্ধে কেবল নয়, সরাসরি সরকার পতনের ডাক দিয়ে পথে নেমেছে। ইতিমধ্যে তাদের আন্দোলন সফলতার পথে এগোচ্ছে মনে করা হলেও ব্যবস্থা বদলের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিদ্যমান ব্যবস্থা বহাল রেখে কেবল শাসক পরিবর্তন করলেই অবস্থার গুণগত কোনো পরিবর্তন আসবে না। আসবে একমাত্র ব্যবস্থা বদলের মধ্য দিয়ে। শ্রীলঙ্কার জনগণকে সেটাই নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের দেশে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটলেও ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকার ফলে আমাদের অবস্থার তো পরিবর্তন ঘটেইনি, বিপরীতে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিদ্বেষ বেড়েছে। যার মাশুল গুনে চলেছে দেশের মানুষ।
শ্রীলঙ্কার একটি বিমানবন্দর ও নৌবন্দর নির্মাণে চীনের অর্থ-সাহায্যের ঋণে সুদ পরিশোধ নিয়ে নানা কথা এসেছে। ওই বিমান ও নৌবন্দর কার্যত অকার্যকর। চীনের অনুপ্রেরণায় এবং চড়া সুদ ও লিজের নানা কাহিনি প্রকাশ করে চীনের বিরুদ্ধে লাগামহীন ঢালাও মন্তব্য অব্যাহত রেখেছে মিডিয়াগুলো।
বাস্তবতা কিন্তু তা বলে না। মাও সে-তুং-পরবর্তী চীনের সমাজতন্ত্র নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। চীনের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে শ্রীলঙ্কার উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী করার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদেশগুলো এবং ভারতীয় দক্ষিণপন্থী দল ও মিডিয়ার প্রচারণা উদ্দেশ্যমূলক। এসব সংবাদ অনেকটা মনগড়া ও অতিরঞ্জিত। শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকট হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। শ্রীলঙ্কার সংকটের পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আমেরিকার তপ্লিবাহক আইএমএফ কর্তৃক শর্তসাপেক্ষ ঋণের বোঝা। আইএমএফের নির্দেশনা অনুযায়ী নানামুখী সংস্কারের পদক্ষেপ। শ্রীলঙ্কা সরকারের জৈবচাষের খামখেয়ালি রোমাঞ্চকর সিদ্ধান্ত। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিও বর্তমানে সৃষ্ট অবস্থার জন্য নিশ্চয় দায়ী; যা বিদ্যমান চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার যোগফল।
শ্রীলঙ্কার বিদেশি মোট ঋণের চীনের পরিমাণ ১১ শতাংশেরও কম; বরং দেশটি সর্বাধিক ঋণ নিয়েছে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান থেকে। পশ্চিমা গণমাধ্যমে চীনকে সামনে এনেছে মূলত শ্রীলঙ্কার সংকটের জন্য প্রকৃত দায়ী দেশি-বিদেশি এজেন্ট, বিশেষ করে আইএমএফের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে আড়াল করার অভিপ্রায়ে। শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের পরিসংখ্যান হচ্ছে, মোট ঋণের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৪, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৬, জাপানের ১০ দশমিক ৯ ও সর্বনিম্ন চীনের ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। [হিন্দুস্থান টাইমস, ২৯ মার্চ, ২০২২]
‘চীনের ঋণের ফাঁদ’ বিষয়টি প্রথম প্রচারণায় এনেছিল আমেরিকার নির্দেশে চলা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। ২০০৬ সালে, এরপর ২০২১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আফ্রিকায় চীনের ঋণদান প্রকল্পকে ‘ঋণফাঁদ কূটনীতি’ বলে মন্তব্য করেন এবং চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রমাণ হিসেবে দাবি করেন। প্রশ্ন থাকে, আইএমএফ ঋণ দিলে সেটা হয় ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট’। অপরদিকে চীন ঋণ দিলে সেটা হয় ‘ডেথ ট্রাম্প ডিপ্লোমেসি’।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার চরম বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী। ব্রিটিশরা চা-বাগান ও রাবারবাগানের দক্ষ শ্রমিক হিসেবে তামিলনাড়ু থেকে জাহাজ বোঝাই করে তামিল জাতিগোষ্ঠীদের শ্রীলঙ্কায় নিয়ে এসেছিল। তামিলদের দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের সিংহলিদের থেকেও নানা সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতা ইত্যাদি বেশি দেওয়ায় সিংহলিরা তামিলদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর তামিলদের ওপর নেমে আসে সিংহলিদের অনাচার। মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তামিলদের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে তামিলরা আন্দোলন সংঘটিত করলে তাদের ওপর নৃশংস নিপীড়ন চলে। এতে তামিলরা সশস্ত্র পন্থা বেছে নিতে বাধ্য হয়। পরিণতিতে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকার নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ বাছ-বিচার না করে তামিলদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত করে জাফনা দ্বীপের অধিকার গ্রহণ করে। হিন্দুধর্মাবলম্বী তামিলদের অস্তিত্ব শ্রীলঙ্কায় প্রায় বিলীন করে দেওয়া হয়।
একটি খ্রিষ্টান গির্জায় বোমা হামলায় অতিসংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর বাছ-বিচার না করে নৃশংসতার দৃষ্টান্ত রেখেছে বর্তমান শ্রীলঙ্কান সরকার। উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী তৎপরতায় শ্রীলঙ্কার অপরাপর সম্প্রদায় রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকত্ববিহীন অবস্থায় দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে।
বর্তমানের যে জনবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে, এতে শ্রীলঙ্কার জনগণের মুক্তি আসবে না যদি বিদ্যমান ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত না হয়। তেমন লক্ষণও কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। হয়তো বড়জোর ক্ষমতাসীনদের বদল হবে; কিন্তু জনগণের ভাগ্যের বদল হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: মযহারুল ইসলাম বাবলা, নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
সাম্প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর সংবাদ হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণবিক্ষোভ ও গণ-অভ্যুত্থান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেও ছাপিয়ে উপমহাদেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি। অর্থনৈতিক নিদারুণ সংকটের পাশাপাশি ওষুধ, খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর চরম আকালে দুর্বিষহ অবস্থা। কথায় আছে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আর পেছানোর উপায় থাকে না সামনে এগোনো ব্যতিরেকে। শ্রীলঙ্কার জনগণের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে।
একটি দেশে পরিবারতন্ত্র শক্তপোক্তভাবে টিকে থাকা যে কী পরিমাণ ভয়ংকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তারই দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক সময়ের শ্রীলঙ্কা। রাজতন্ত্রের মতো সামন্ত যুগের অবসান ঘটেছে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের ছাল-বাকলে যদি সামন্তবাদ ভর করে, তার পরিণতি কখনো শুভফল বয়ে আনতে পারে না। দেশটির সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রাজাপক্ষে পরিবার। আর তাঁদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশটির জনগণের দুর্ভোগের কোনো সীমা-পরিসীমা অবশিষ্ট থাকেনি। যার পরিণতিতে জনবিক্ষোভ ও গণ-অভ্যুত্থান সংঘটনে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কান জনগণ। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদদের নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে। তাঁদের বাড়ি জনতা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পর্যন্ত দিয়েছে। রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। শুরুতে পুলিশি নৃশংসতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পুলিশও আতঙ্কে রয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হলেও বিরোধী দল তাঁর নিয়োগকে সমর্থন করেনি। এমনকি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমা এবং ভারতীয় মিডিয়া একযোগে চীনকে দায়ী করে নানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ভারতের নিকটবর্তী, তাই দীর্ঘকাল ভারতের আজ্ঞাবহ ছিল। চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের উন্নতি ভারত সুনজরে দেখেনি। পরিবারতন্ত্রের সরকারের অবাধ লুণ্ঠনের জন্য যে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শ্রীলঙ্কার ওষুধ প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ আমদানি করতে হয়। ওষুধের তীব্র সংকটে অগণিত মানুষ মৃত্যুঝুঁকির কবলে। আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। ফলে জনগণ দ্রব্যমূল্যের বিরুদ্ধে কেবল নয়, সরাসরি সরকার পতনের ডাক দিয়ে পথে নেমেছে। ইতিমধ্যে তাদের আন্দোলন সফলতার পথে এগোচ্ছে মনে করা হলেও ব্যবস্থা বদলের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিদ্যমান ব্যবস্থা বহাল রেখে কেবল শাসক পরিবর্তন করলেই অবস্থার গুণগত কোনো পরিবর্তন আসবে না। আসবে একমাত্র ব্যবস্থা বদলের মধ্য দিয়ে। শ্রীলঙ্কার জনগণকে সেটাই নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের দেশে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটলেও ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকার ফলে আমাদের অবস্থার তো পরিবর্তন ঘটেইনি, বিপরীতে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিদ্বেষ বেড়েছে। যার মাশুল গুনে চলেছে দেশের মানুষ।
শ্রীলঙ্কার একটি বিমানবন্দর ও নৌবন্দর নির্মাণে চীনের অর্থ-সাহায্যের ঋণে সুদ পরিশোধ নিয়ে নানা কথা এসেছে। ওই বিমান ও নৌবন্দর কার্যত অকার্যকর। চীনের অনুপ্রেরণায় এবং চড়া সুদ ও লিজের নানা কাহিনি প্রকাশ করে চীনের বিরুদ্ধে লাগামহীন ঢালাও মন্তব্য অব্যাহত রেখেছে মিডিয়াগুলো।
বাস্তবতা কিন্তু তা বলে না। মাও সে-তুং-পরবর্তী চীনের সমাজতন্ত্র নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। চীনের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে শ্রীলঙ্কার উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী করার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদেশগুলো এবং ভারতীয় দক্ষিণপন্থী দল ও মিডিয়ার প্রচারণা উদ্দেশ্যমূলক। এসব সংবাদ অনেকটা মনগড়া ও অতিরঞ্জিত। শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকট হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। শ্রীলঙ্কার সংকটের পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আমেরিকার তপ্লিবাহক আইএমএফ কর্তৃক শর্তসাপেক্ষ ঋণের বোঝা। আইএমএফের নির্দেশনা অনুযায়ী নানামুখী সংস্কারের পদক্ষেপ। শ্রীলঙ্কা সরকারের জৈবচাষের খামখেয়ালি রোমাঞ্চকর সিদ্ধান্ত। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিও বর্তমানে সৃষ্ট অবস্থার জন্য নিশ্চয় দায়ী; যা বিদ্যমান চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার যোগফল।
শ্রীলঙ্কার বিদেশি মোট ঋণের চীনের পরিমাণ ১১ শতাংশেরও কম; বরং দেশটি সর্বাধিক ঋণ নিয়েছে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান থেকে। পশ্চিমা গণমাধ্যমে চীনকে সামনে এনেছে মূলত শ্রীলঙ্কার সংকটের জন্য প্রকৃত দায়ী দেশি-বিদেশি এজেন্ট, বিশেষ করে আইএমএফের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে আড়াল করার অভিপ্রায়ে। শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের পরিসংখ্যান হচ্ছে, মোট ঋণের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৪, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৬, জাপানের ১০ দশমিক ৯ ও সর্বনিম্ন চীনের ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। [হিন্দুস্থান টাইমস, ২৯ মার্চ, ২০২২]
‘চীনের ঋণের ফাঁদ’ বিষয়টি প্রথম প্রচারণায় এনেছিল আমেরিকার নির্দেশে চলা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। ২০০৬ সালে, এরপর ২০২১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আফ্রিকায় চীনের ঋণদান প্রকল্পকে ‘ঋণফাঁদ কূটনীতি’ বলে মন্তব্য করেন এবং চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রমাণ হিসেবে দাবি করেন। প্রশ্ন থাকে, আইএমএফ ঋণ দিলে সেটা হয় ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট’। অপরদিকে চীন ঋণ দিলে সেটা হয় ‘ডেথ ট্রাম্প ডিপ্লোমেসি’।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার চরম বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী। ব্রিটিশরা চা-বাগান ও রাবারবাগানের দক্ষ শ্রমিক হিসেবে তামিলনাড়ু থেকে জাহাজ বোঝাই করে তামিল জাতিগোষ্ঠীদের শ্রীলঙ্কায় নিয়ে এসেছিল। তামিলদের দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের সিংহলিদের থেকেও নানা সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতা ইত্যাদি বেশি দেওয়ায় সিংহলিরা তামিলদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর তামিলদের ওপর নেমে আসে সিংহলিদের অনাচার। মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে তামিলদের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে তামিলরা আন্দোলন সংঘটিত করলে তাদের ওপর নৃশংস নিপীড়ন চলে। এতে তামিলরা সশস্ত্র পন্থা বেছে নিতে বাধ্য হয়। পরিণতিতে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকার নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ বাছ-বিচার না করে তামিলদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত করে জাফনা দ্বীপের অধিকার গ্রহণ করে। হিন্দুধর্মাবলম্বী তামিলদের অস্তিত্ব শ্রীলঙ্কায় প্রায় বিলীন করে দেওয়া হয়।
একটি খ্রিষ্টান গির্জায় বোমা হামলায় অতিসংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর বাছ-বিচার না করে নৃশংসতার দৃষ্টান্ত রেখেছে বর্তমান শ্রীলঙ্কান সরকার। উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী তৎপরতায় শ্রীলঙ্কার অপরাপর সম্প্রদায় রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকত্ববিহীন অবস্থায় দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে।
বর্তমানের যে জনবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে, এতে শ্রীলঙ্কার জনগণের মুক্তি আসবে না যদি বিদ্যমান ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত না হয়। তেমন লক্ষণও কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। হয়তো বড়জোর ক্ষমতাসীনদের বদল হবে; কিন্তু জনগণের ভাগ্যের বদল হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: মযহারুল ইসলাম বাবলা, নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫