Ajker Patrika

ভাতার টাকা যায় কোথায়?

ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৩
ভাতার টাকা যায় কোথায়?

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বিকাশ হিসাবে পাঠানো বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক ভাতাভোগী। ৯ মাসের বেশি সময় ধরে ভাতার টাকা পাচ্ছেন না তাঁরা। উপজেলার দেবপাড়া ও গজনাইপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ভাতাভোগীর একই অভিযোগ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বয়স্কভাতার টাকা পাচ্ছেন না দেবপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের মিনা বেগম, সিট ফরিদপুর গ্রামের লেবু বকস, গজনাইপুর ইউনিয়নের মিরাশী বিবি, মৌরশী বিবি, ছমদ উল্ল্যাহ, আনর মিয়াসহ দুই ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ভাতাভোগী। তাঁরা টাকার জন্য প্রতিনিয়তই ঘুরছেন সমাজসেবা অফিসে। কিন্তু মিলছে না প্রতিকার।

মিঠাপুর গ্রামের মৃত তৈয়ব উল্লাহর স্ত্রী কমলা বিবি বলেন, ‘ব্যাংকে নিয়মিত বয়স্কভাতার টাকা পেতাম। মোবাইলে বিকাশ হিসাব খোলার পর থেকে আর টাকা পাই না। এই টাকাই আমার একমাত্র ভরসা।’ এ ভাতাভোগী আরও বলেন, তাঁর বয়স্ক ভাতার টাকা অন্যের মোবাইলে চলে যায়।

গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামের মৌরশী বিবি বলেন, ‘ব্যাংকের মাধ্যমে যখন টাকা দেওয়া হতো, তখন পেয়েছি। কিন্তু বিকাশ হিসাব খোলার পর আর টাকা পাইনি।’ দেবপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের মিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর ভাতার কার্ড আগের মেম্বার নিয়ে গেছেন। দুই বছর হয়ে গেছে আমি কোনো টাকা পাইনি। জানি না মেম্বার সাব কার নম্বর দিয়েছেন।’

সিট ফরিদপুর গ্রামের লেবু বকস বলেন, ‘আমি প্রায় ১ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাইনি। বিকাশ চালু হওয়ার পর কোনো টাকা পাইনি।’ দেবপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মুকিত বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে প্রায় ২০ জনের মতো লোক বিকাশ চালু হওয়ার পর কোনো টাকা পাননি। টাকা যায় কোথায়, এই প্রশ্ন এখন আমাদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।’

আউশকান্দি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিজিল ইসলাম সেজলু বলেন, ‘আমার আগের মেম্বার করেছেন। আমি কিছুই জানি না। তবে এক নারী আমার কাছে আসার পর আমি বিষয়টি সমাজসেবা অফিসকে জানিয়েছি। তাঁরা বলছেন, ব্যবস্থা নেবেন। এখানে কারচুপি হয়ে থাকলে সেটাও দেখবেন।’ 
আউশকান্দি সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অমর দাশ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা অবস্থায় ভাতাভোগীরা সঠিকভাবে টাকা পেয়েছেন। এখন টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যায়। এ দায়িত্ব আমাদের নয়।’

নবীগঞ্জ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতা প্রকল্পের ইউনিয়ন সমাজকর্মী চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যদি কোনো প্রতারক ভুয়া মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কীভাবে মোবাইল নম্বর ভুল হলো সে বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলব। প্রতারকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, আগের মেম্বারের সঙ্গে কথা বলেই ভাতার নম্বর দেওয়া হয়েছে। আউশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার আগের চেয়ারম্যানের আমলে এমন হয়েছে। ভাতাভোগীদের পরিবর্তে কার নম্বর দেওয়া হলো, তা দেখছি আমরা।’

নবীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ভাতাভোগীদের নম্বর না দিয়ে অন্য লোকের নম্বর দিয়ে একটি প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেন, কেউ একবার ভাতার টাকা পেয়ে থাকলে পরে বিকাশে টাকা না পাওয়ার কথা নয়। এখানে কোনো প্রতারণা হয়ে থাকলে তার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত